
কভিড-১৯ ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব অনেকটাই সামাল দিয়ে দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে আরেকটি জাতীয় নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে এসেছে। কয়েক দিন থেকেই দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন অস্থির। হরতাল-অবরোধে একটি সপ্তাহ চলে গেছে। বাজারে পণ্যমূল্যে তার প্রভাব পড়েছে। অন্যদিকে আজ রবিবার ও সোমবার আবার অবরোধের ডাক দেওয়া হয়েছে। অবরোধ লাগাতার হলে পণ্য পরিবহন বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। সরবরাহব্যবস্থায় বাধা পড়ে। বাজারে বেড়ে যায় জিনিসপত্রের দাম, বিশেষ করে খুচরা বাজারে বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। শুধু অভ্যন্তরীণ বাজার নয়, রপ্তানি বাণিজ্যে রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাব পড়ে।
এমনিতেই বাংলাদেশের অর্থনীতির সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। নানামুখী প্রতিযোগিতার পাশাপাশি অনেক ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করেই বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যকে এগিয়ে নিতে হয়।
সাম্প্রতিক খবর হচ্ছে, দেশের রপ্তানি আয়ে সাফল্যের ধারায় ছেদ পড়েছে গত অক্টোবর মাসে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) মাসিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ মাসে রপ্তানি আয় কমায় ধাক্কা লেগেছে চার মাসের হিসাবে। এক মাসেই রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি কমেছে ৬ শতাংশ। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম চার মাস জুলাই-অক্টোবরে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি কমে এসেছে মাত্র ৩.৫২ শতাংশে, যেখানে জুলাই-সেপ্টেম্বর তিন মাসে প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৯.৫১ শতাংশ। সেপ্টেম্বর মাসে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ছিল ১৩.০৭ শতাংশ। আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম ছিল মাত্র ১.৫ শতাংশ। তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) তথ্য বলেছে, অক্টোবর মাসে তৈরি পোশাক রপ্তানি কমেছে ১৩.৯৩ শতাংশ। আর এর প্রভাব পড়েছে মোট রপ্তানিতে। পোশাক খাতেও দেখা দিয়েছে অস্থিরতা। বেতন বৃদ্ধির দাবিতে পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভ চলছে।
রপ্তানি পণ্য বন্দরে পৌঁছে দেওয়া, বন্দরে আসা কাঁচামাল সারাদেশের কারখানাগুলোতে নিয়ে যাওয়া, দেশি কাঁচামাল সারা দেশ থেকে উৎপাদনস্থলে আনা এবং উৎপাদিত পণ্য সারা দেশের বাজারে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য নির্বিঘ্ন পরিবহনব্যবস্থা অত্যন্ত জরুরি। শুধু আমদানি-রপ্তানি নয়, অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি তথা ব্যবসা-বাণিজ্যেও হরতাল-অবরোধের মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। শিল্প-কারখানাগুলোর উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। পরিবহনের অভাবে বহু কৃষিপণ্য জমিতেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে না পেরে কৃষক সর্বস্বান্ত হয়ে যাচ্ছেন। অথচ শহরের বাজারে এসব পণ্যের দাম বাড়ছে। ফলে দেশবাসীকেও চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
এ অবস্থায় সবার আগে ভাবতে হবে সরবরাহব্যবস্থা নিয়ে, বিশেষ করে সবজি, মাছ ও পচনশীল পণ্যের পরিবহনব্যবস্থা নিয়ে। দেশের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা এখন অনেক উন্নত হয়েছে। যেসব এলাকায় সবজি উৎপাদিত হয়, সেসব এলাকা থেকে রেলপথে সবজি সরবরাহ করা যায় কি না, তা ভেবে দেখা যেতে পারে। রাজনৈতিক কর্মসূচি থাকবে। কিন্তু তাতে যেন সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে না পড়ে সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে।