আসন্ন রমজানে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে চাল, তেল, চিনি ও খেজুরের শুল্ক-কর কমিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। শুক্রবার খবরে প্রকাশ, আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত অপরিশোধিত চিনির আমদানি শুল্ক টনপ্রতি দেড় হাজার টাকা থেকে কমিয়ে এক হাজার টাকা করা হয়েছে। পরিশোধিত চিনির টনপ্রতি শুল্ক ৩ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে ২ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া আগামী ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত পরিশোধিত-অপরিশোধিত সয়াবিন তেল ও পাম অয়েল আমদানিতে ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। এদিকে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে আগামী ১৫ মে পর্যন্ত আমদানি পর্যায়ে সেদ্ধ ও আতপ চাল আমদানিতে আরোপিত ৫ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে। একইসঙ্গে সংরক্ষণমূলক শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। পাশাপাশি আগামী ৩০ মার্চ পর্যন্ত সব ধরনের খেজুরের আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু জানিয়েছেন, আলোচ্য পণ্যগুলোর নতুন দাম আগামী সপ্তাহের মধ্যে নির্ধারণ করা হবে।
মাত্র এক মাস পরই শুরু হচ্ছে পবিত্র রমজান মাস। এ উপলক্ষে সরকার বাজারে নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে চায়। এ লক্ষ্যেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে বাজারে কিছুটা প্রভাব পড়াই স্বাভাবিক। তবে গত বছরও বাজার সহনীয় রাখতে কয়েকটি পণ্যের আমদানি শুল্ক কমিয়েছিল সরকার; কিন্তু ব্যবসায়ীরা উলটো সেসব পণ্যের দামই বাড়িয়েছিলেন। তাই শুল্ক কমানোর এ সিদ্ধান্ত ভোক্তা পর্যায়ে সুফল বয়ে আনবে কিনা, সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। বস্তুত আসন্ন রোজায় বাজারে সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্যের জোগান নিশ্চিত করা এবং শুল্ক কমানোর সুফল ভোক্তার কাছে পৌঁছানো হবে সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ অভিজ্ঞতা বলছে, নিয়ন্ত্রক পর্যায়ে সঠিক নজরদারির অভাব থাকলে ভোক্তারা নন, বরং ব্যবসায়ীরাই লাভবান হন। কাজেই শুল্ক কমানোর ইতিবাচক প্রভাব ভোক্তা পর্যায়ে না পড়লে বরাবরের মতো এর সুবিধা যাবে ব্যবসায়ীদের পকেটে।
যে কোনো পণ্যের দাম বাড়তে থাকলে প্রথমে ব্যবসায়ী বা আমদানিকারকদের মূল লক্ষ্যই থাকে শুল্ক-কর কমানো। তারা সরকারের বিভিন্ন মহলের সঙ্গে দেন-দরবার করে শুল্ক-কর কমাতে সক্ষম হন। অথচ যে কারণে শুল্ক-কর কমানো হয় তার ইতিবাচক প্রভাব বাজারে দেখা যায় না। আমরা দেখেছি, পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে শেষ অস্ত্র হিসাবে শুল্ক কমায় সরকার। তবে শুল্ক কমানোর সুফল যে ভোক্তা পায় না, সবশেষ চালের বাজারে তার প্রমাণ মিলেছে। ভোক্তার জন্য দেওয়া শুল্ক ছাড়ের সুবিধা চলে গেছে ব্যবসায়ীদের পকেটে। বাজারে চালের দাম কমেনি। এভাবে নানা সময়ে সরকারের দেওয়া সুবিধাগুলো নিয়ে যেসব অসাধু ব্যবসায়ী কারসাজি করছে, কঠোর তদারকির মাধ্যমে আগে তাদের চিহ্নিত করতে হবে। এ জন্য চাই বাজার তদারকি কঠোর করা। শুল্ক কমানোর সুফল নিশ্চিত করতে সরকার সবার আগে অসাধু সিন্ডিকেট শক্ত হাতে দমন করবে, এটাই প্রত্যাশা।
প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত