জন্মভূমি রিপোর্ট
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্র বন্দর মোংলা পদ্মা সেতু চালু হলেই দ্রুত আন্তর্জাতিক সমুদ্র বন্দরে রূপান্তরিত হবে। বন্দর শুরুর পর থেকে নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে ধীরে ধীরে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। পদ্মা সেতু চালু হলে রাজধানী ঢাকা থেকে সবচেয়ে কাছের সমুদ্র বন্দর হবে এটিই। পদ্মা সেতুর সুফলে অচিরেই মোংলা বন্দর বিশ্বের অন্যতম বন্দর হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করবে বলে দাবি বন্দর কর্তৃপক্ষের। পাল্টে যাবে এই অঞ্চলের মানুষের জীবনমান। অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হবে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ মূসা বলেন, মোংলা বন্দরের সক্ষমতা কয়েক বছরে বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়াও বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ৮টি প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। এসব কাজ শেষ হলে বন্দরের সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি পাবে। পদ্মা সেতু চালু হলে ঢাকা থেকে এ বন্দরের দূরত্ব হবে ১৭০ কিলোমিটার। অপরদিকে চট্রগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ঢাকার দূরত্ব ২৬০ কিলোমিটার এবং পায়রা বন্দর থেকে ঢাকার দূরত্ব ২৭০ কিলোমিটার। ফলে আমদানি-রপ্তানিকারকরা বাণিজ্যিক স্বার্থে মংলা বন্দর ব্যবহার করবে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় আসার সঙ্গে সঙ্গে বেশ কিছু প্রকল্প গ্রহণ করেন। যার ফলশ্রুতিতে এক সময়ের লোকসানি মোংলা বন্দর এখন জাহাজ আগমনে নতুন নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করছে। প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শিতায় অচিরেই মোংলা বন্দর আন্তর্জাতিক বন্দরে রূপান্তরিত হতে চলেছে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে যান চলাচল শুরু হলে মোংলা বন্দরের কর্মব্যস্ততা কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। গতি আসবে আমদানি-রপ্তানি কাজে। বন্দরের আশপাশে গড়ে উঠবে নতুন নতুন শিল্পকারখানা। এতে চাপ বাড়বে বন্দরের। এ কারণে গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে মোংলা বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে কয়েকগুণ। বর্তমানে মোংলা বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ৮ হাজার ৮৫২ কোটি ৩৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে ৮টি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে।
এদিকে পদ্মা সেতু চালু হলে মোংলা থেকে ঢাকায় একটি গাড়ি নিতে সময় লাগবে তিন ঘণ্টা। ফলে সময় বাঁচার পাশাপাশি খরচও কমবে ব্যবসায়ীদের।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে মোংলা বন্দর দিয়ে গাড়ি আমদানি শুরু হয়। ওই বছর গাড়ি এসেছিল মাত্র ২৫৫টি। তবে চলতি অর্থবছরের (২০২১-২২) মে মাস পর্যন্ত এ বন্দর দিয়ে দেশে গাড়ি আমদানি করা হয়েছে ২০ হাজার ৯টি।
মোংলা কাস্টম হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ নেয়াজুর রহমান বলেন, মোংলা বন্দর থেকে সরকার যে পরিমাণ রাজস্ব পায় তার ৫২ শতাংশ আসে গাড়ি আমদানির কর থেকে। চলতি অর্থবছরে আমাদের রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ হাজার ৯৩০ কোটি টাকা। তবে ১১ মাসে (মে -২০২২ পর্যন্ত) আমাদের রাজস্ব আয় হয়েছে ৪ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে বেশি রাজস্ব আদায় হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। পদ্মা সেতু চালু হলে বন্দরে বাড়বে আমদানি-রপ্তানি, ফলে সরকারের রাজস্বও বৃদ্ধি পাবে।