জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তিন ধাপে গাজীপুর, রাজশাহী, বরিশাল, সিলেট ও খুলনা সিটি করপোরেশনে ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বুধবার অনুষ্ঠিত কমিশন সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২৩ মে থেকে ২৯ জুনের মধ্যে এ পাঁচ সিটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।
পাঁচ সিটি করপোরেশনে নির্বাচন গ্রহণের যৌক্তিকতা হিসাবে ইসির বক্তব্য হচ্ছে-জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নির্বিঘ্ন করতেই জুলাইয়ের পর বড় ধরনের কোনো ভোটের আয়োজন করতে চায় না তারা। মূলত সংসদ নির্বাচনের স্বার্থেই আগেভাগে এসব নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে শেষ করতে চায় কমিশন।
তবে পাঁচ সিটি নির্বাচন কতটা শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য হবে, এটাই হলো প্রশ্ন। কারণ, উল্লিখিত নির্বাচনি এলাকাগুলোয় ইতোমধ্যে সরকারদলীয় সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠে নেমেছেন এবং নানাভাবে প্রচারণাও চালাচ্ছেন। এর বিপরীতে সংসদের বাইরের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির পক্ষ থেকে বরাবরের মতোই বলা হচ্ছে, বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না তারা। এ অবস্থায় নির্বাচন কতটা সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হবে-এ সংশয় থেকেই যাচ্ছে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, সব দলের অংশগ্রহণে পাঁচ সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে সাধারণ ভোটারদের মনে আশার সঞ্চার হবে; কিন্তু নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হলে এর রেশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ওপরও পড়বে।
নির্বাচনি কাজে যে কোনো ধরনের অযাচিত হস্তক্ষেপ মোকাবিলায় যে দৃঢ়তা থাকা দরকার, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সেটা আছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বস্তুত ইতঃপূর্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনগুলোর মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পরিচালিত চারটি নির্বাচন ছাড়া বাদবাকি নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে নির্বাচন কমিশনকে আস্থা অর্জনের ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। মূলত এটি একটি চ্যালেঞ্জ। ইসিকে এ চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থাহীনতা তৈরি হলে সব দলের অংশগ্রহণে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেওয়া প্রায় অসম্ভব।
দেশে কয়েক বছর ধরে যে নির্বাচনি সংস্কৃতি চলছে, তা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচন ইসির জন্য একটি ‘টেস্ট কেস’, যা বলাই বাহুল্য। সব দলের অংশগ্রহণে এসব নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করতে পারলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে অবিশ্বাস, সন্দেহ ও সংশয় অনেকটাই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। কাজটি কঠিন হলেও অসম্ভব নয়।
মূলত সবকিছু নির্ভর করছে ইসির আন্তরিকতা ও সৎ পরিকল্পনার ওপর। এসব বিষয় বিবেচনায় রেখে পাঁচ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করার লক্ষ্যে এখন থেকেই প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত