পূর্ণ চন্দ্র মন্ডল, পাইকগাছা : এক সময় রাস্তা না থাকায় দুর্লভ যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে মুমূর্ষু রোগী মারা যেত পথেই। গর্ভবতী মায়েদের হয়েছে কত অকাল মৃত্যু। দৈনন্দিন কাজ সম্পাদনে নৌকা বা হাঁটার পথই ছিল তাদের একমাত্র ভরসা। নৌপথে ভাটার সময় নদী ভরাটের ফলে নৌযান চলাচল অনুপযোগী হয়ে যেত। উপজেলা সদরে পৌঁছাতে লাগত ঘন্টা পর ঘন্টা। এই রাস্তাটি ২৬ জানুয়ারি ২০২০ সালে সমাপ্তির কথা থাকলেও ঠিকাদারদের গড়িমসির জন্য রাস্তার নির্মাণ কাজ শুরু হয়নি। অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যায় রাস্তা নির্মাণ কাজ। কয়েক বার চিঠি চালাচালির পর উপজেলা প্রকৌশলী মো. শাফিন শোয়েব এর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ফেলে রাখা অবশিষ্ট কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বলা যায়, স্বাধীনতার ৫৪ বছর পর অবহেলিত পাইকগাছা উপজেলার লতা ও দেলুটি ইউনিয়নের ২০নং এবং ২০(১) নং পোল্ডারের মানুষের যাতায়াতের একমাত্র রাস্তা পিচ ঢালায়ের পর বদলেছে দ্বীপ বেষ্টিত এ জনপদের মানুষের ভাগ্য। সরজমিনে দেখা যায়, উপজেলার দ্বীপ বেষ্টিত লতা ইউনিয়নের মুনিয়া, দেলুটি ইউনিয়নের দিঘলিয়া, চাকরিবাকরি, গেউয়াবুনিয়া, জামতলা বাজার, মধুখালী পর্যন্ত প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটারের সড়ক গ্রামীণ জনপদের যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল বদলে দিয়েছে। উপজেলা সদরে ও জেলা সদরের সাথে দুই পোন্ডারের ১৩/১৪টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষের চলাচল হয়েছে সহজসাধ্য। বিলপাড়ার মানুষ একসময় সঠিক সময়ে যাতায়াত করতে না পারায় নানা কষ্ট ভোগ করেছেন। নিজ স্বজনদের চিকিৎসার অভাবে রাস্তায় মারা যেতে দেখেছেন। ছেলেমেয়েরা স্কুলে যেতে অনীহা প্রকাশ করত। দারিদ্র্য লেগে থাকত। বর্তমানে রাস্তাটি নির্মাণে গ্রামীণ অবকাঠামোর পাশাপাশি জীবনমানের ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। এ বিষয়ে পথিমধ্যে ভ্যানযোগে অসুস্থ রোগী নিয়ে যাওয়ার সময় এক স্থানীয় বাসিন্দার বলেন, এক সময়ের কষ্ট লঘব করে দিয়েছে এই রাস্তাটি। ওয়াবদার ভাঙচুরা মাটির রাস্তা দিয়ে আগে হাসপাতালে যেতে প্রায় তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা সময় লাগতো। এর ফলে অনেক রোগী রাস্তায় মারা যেতেন। কিন্তু রাস্তাটি হওয়ার পর বর্তমানে রোগীরা ৩০ থেকে ৪০ মিনিটে পৌঁছে যাচ্ছেন হাসপাতালে। এর ফলে তাদের চিকিৎসা সেবা পেতে বেগ পেতে হচ্ছে না। স্থানীয় এলাকাবাসী ও ইউপি সদস্য ফেরদৌস জানান, এঅঞ্চলের মানুষের আয়ের উৎস মৎস্য ও কৃষি। বর্ষাকালে কদমোক্ত মাটির রাস্তায় মানুষের যাতায়াতের সীমাহীন দুর্ভোগ ছিল। মৎস্য জীবী ও কৃষি যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন হয়েছে। মাছ ও কৃষি পণ্য পরিবহনে সহজবোধ্য হয়েছে। পাশাপাশি সময় এবং খরচ কমেছে। বিশেষ করে ধানের মৌসুম হওয়ায় নতুন সড়কে দ্রুত উপজেলা সদরে পৌঁছাতে পারছে। সবাই ন্যায্য দাম পাচ্ছেন। এ ফলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে এ এলাকায়। ইউপি চেয়ারম্যান রিপন কুমার মন্ডল বলেন, রাস্তাটি সম্পন্ন হওয়ায় ২০নং পোল্ডার এবং ২০(১) নং পোল্ডারের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হলো। এলাকার মানুষ অত্যন্ত আনন্দিত। দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হওয়ায় এলাকায় উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। এলাকাবাসী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী মো. শাফিন শোয়েব দৈনিক জন্মভূমি এ প্রতিনিধিকে বলেন, খুলনা বিভাগ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প (কেডিআরআইডিপি) পাইকগাছা উপজেলাধীন পাইকগাছা- জিসি লতারহাট- ফুলবাড়ি হাট- বারোহাড়িয়া জিপি সড়ক ( চেই: ৮৫৪০মি: ১২৫২০ মি:) উন্নয়ন কাজ। যার প্রাক্কলিত মূল্য ৩৪৬৯৮৬০৫, চুক্তি মূল্য - ৩৬৪১৬.১৯৭/৯৯। কাজটি শুরু ২০ জানু. ২০১৯ সাল। কার্য্যাদেশ মোতাবেক কাজ সমাপ্তির তারিখ ছিল ২৬ জানু. ২০ সাল। দৈর্ঘ্য - প্রায় ৪ কিলোমিটার (৩৯৮০ মিটার), প্রস্থ- ৩৭ মিটার (১২ফুট)। লতার হাট থেকে মধুখালী পর্যন্ত। মূল ঠিকাদার মেসার্স আকন ট্রেডিং এন্ড কোং প্রোঃ মোঃ নাসিম আকন বাগড়ী বাজার, রাজাপুর, ঝালকাঠি। কয়েক বার চিঠি চালাচালির পর উপজেলা প্রকৌশলী মো. শাফিন শোয়েব এর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ফেলে রাখা অবশিষ্ট কাজ মে ২০২৪ থেকে তৃতীয় পক্ষ ইকবাল জোমাদ্দার এর সহযোগীতায় বর্তমানে সম্পন্ন হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহেরা নাজনীন জানান, এ সড়কটি নির্মাণের ফলে শহরের নাগরিক সুযোগ সুবিধা খুব তাড়াতাড়ি গ্রামীণ সমাজের মানুষরাও ভোগ করতে পারছেন। এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।
প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত