জন্মভূমি ডেস্ক : খুলনার পাইকগাছায় ভাঙন কবলিত পাউবো’র দুর্বল বেড়িবাঁধ ভেঙে মামুদকাটি ও রাড়ুলী’র মালোপাড়া এলাকা প্লাবিত হয়ে ক্ষয়ক্ষতি’র ঘটনা ঘটেছে। পানি বৃদ্ধিতে কয়েকটি ভাঙন স্থানের দুর্বল ও নিচু বেড়িবাঁধ রয়েছে চরম ঝুঁকিতে।
শনিবার দুপুরে পূর্নিমায় সৃষ্ট লঘুচাপে কপোতাক্ষ নদের অস্বাভাবিক জোয়ারে দীর্ঘদিনের কপোতাক্ষ নদের ভাঙন কবলিত বেড়িবাঁধ ভেঙে পোল্ডারে হু-হু করে পানি ঢুকলে শতাধিক বাড়ী-ঘর ও ফসলি জমি প্লাবিত হয়েছে । রাতে পানি বৃদ্ধি’র আশংকায় ক্ষতিগ্রস্থ মানুষ জন সহায় সম্পদ সরিয়ে নিচ্ছে অন্যত্র। এ সময় সরেজমিনে গেলে দেখা যায় ক্ষতিগ্রস্থরা সহায় সম্পদ রক্ষার্থে ব্যস্ত হযে পড়েন।এ অবস্থায় স্থানীয় ইউপি সদস্য ইয়াসিন আলী কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে স্থানীয়দের বাঁধ মেরামতের কাজে এগিয়ে আসতে বলেন। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আল-আমিন ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শিয়াবুদ্দীন ফিরোজ বুলু মামুদকাটি ও বোয়ালিয়া মালোপাড়া ভাঙন কবলিত স্থান পরিদর্শন সংশ্লিষ্টদের দ্রুত বাঁধ মেরামতের নির্দেশনা দিয়েছেন। একই সাথে তারা এ কাজে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসিকে সহযোগিতা কামনা করেছেন। এলাকাবাসির আশংকা জরুরি ভিত্তিতে ভাঙন কবলিত হরিঢালীর মামুদকাটিসহ হাবিবনগর, দরগাহমহল,গদাইপুরের বোয়ালিয়া মালোপাড়া,গড়ইখালীর খুতখালী,লস্করের আলমতলা ও দেলুটির কালিনগরের ক্ষতিগ্রস্থ বেড়িবাঁধ মেরামত না করলে যে কোন মুহুর্তে অঘটন ঘটতে পারে।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর উপজেলা পরিষদের সমন্বয কমিটির মাসিক সভায় চলতি পূর্নিমায় নদী ভাঙন তিব্র হয়ে ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে এ আশংকায় ইউপি চেয়ারম্যানরা পানিউন্নয়ন বোর্ডের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বাঁধের কাজে জরুরি অর্থ বরাদ্দ দাবি করেন।
জানাগেছে, কপোতাক্ষ নদের ভাঙনে রাড়ুলী’ ইউনিয়নের মালোপাড়ায় ৮শ মিঃ বেড়িবাঁধ ও গদাইপুরের বোয়ালিয়া মালোপাড়ায় প্রায় ৩শ মিঃ হরিঢালী’র মামুদকাটিতে ৪শ ১০ মিঃ, গড়ইখালীর খুতখালী প্রায় ২শ মিটার বেড়িবাঁধ ঝুকিপূর্ণ। এ ছাড়া হরিঢালীর দরগাঁহমহল,হাবিবনগর ও কপিলমুনি’র আগরঘাটা এলাকায় ভাঙনে ক্ষয়-ক্ষতির হতিহাস বহুদিনের।ইতোপুর্বে বিভিন্ন সময় বাঁধ ভেঙে বহু ক্ষয়-ক্ষতির ঘটনা ঘটেছে। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন,জলবায়ুর বিরুপ প্রভাবে ঘুর্নিঝড় সিঁডর, আইলা,আম্ফান ও ফনি’র প্রভাবে ভাঙন কবলিত বিভিন্ন স্থান থেকে ৬০ দশকের তৈরী ওয়াপদা’র বেড়িবাঁধ ভেঙে বাড়ি-ঘর, রাস্তা-ঘাট,ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলিন হয়েছে। বহু পরিবার সহায়-সম্পদ হারিয়ে বাস্তচ্যুত হয়ে অন্যত্র চলে গেছে। সরকার নদী শাসন ও ভাঙন রোধে বিভিন্ন সময়ে অর্থ বরাদ্দ করে বাঁধ সংস্কার করলেও তা স্থায়ী ও কার্যকর হয়নি। সর্বশেষ এখন ভাঙন আরোও তিব্র হয়েছে।
ভাঙনে সহায়-সম্বল হারা হরিঢালীর দরগাঁহ মহলের সৈয়দ হাবিবুর রহমান,আজিজুর মোড়ল,বাচা সরদার জানান,দীর্ঘদিনের কপোতাক্ষ নদের ভাঙনে সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছি। পরিকল্পিত টেকসই বাঁধ নির্মানের দাবি করেন রাড়ুলী ইউপি চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ,কপিলমুনি’র কওসার আলী জোয়াদ্দার, গদাইপুরের শেখ জিয়াদুল ইসলাম, লস্করের কেএম,আরিফুজ্জামান তুহিন, গড়ইখালী’র আঃ ছালাম কেরু,দেলুটি’র রিপন কুমার মন্ডল,সোলাদানা ইউপি চেয়ারম্যান আঃ মান্নান গাজী ও হরিঢালী ইউপি’র প্যানেল চেয়ারম্যান শংকর বিশ্বাস। চেয়ারম্যানরা আরোও বলেন, সরকার বিভিন্ন সময় পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ দিলেও কেন টেকসই বাঁধ হয়না?
এ সম্পর্কে পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্থানীয় শাখা প্রকৌশলী মোঃরাজু হাওলাদার জানান,ভাঙন কবলিত বেড়িবাঁধে জিওব্যাগ, মাটি ও বস্তা প্লেছিং করে পোল্ডার রক্ষার চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি আরোও বলেন,সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জরুরি ভিত্তিতে রাড়ুলীর মালোপাড়া ৩ কোটি টাকা ও বোয়ালিয়ায় ২৬ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। এছাড়া খুতখালীতে ১৭০ মিঃ বিকল্প বাঁধ দেওয়া হয়েছে। গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আল-আমিন এ আমাদের সময়’কে বলেন, নদী ভাঙনের অবস্থায় করনীয় সম্পর্কে পাউবো’র উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা সহ আমার উধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।
এ বিষয়ে খুলনা-৬’আসনের সংসদ সদস্য মোঃ আক্তারুজ্জামান বাবুএলাকায় নদী ভাঙনের দীর্ঘদিনের সমস্যার কথা জানিয়ে এ মুহুর্তে পাউবো’র সাথে বাঁধ সংস্কারে স্থানীয় বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধি এগিয়ে আসতে অনুরোধ করেন। জরুরি ভিত্তিতে বাঁধ মেরামতে অর্থ বরাদ্দের তথ্য দিয়ে তিনি আরোও বলেন, জাইকা’র ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে খুঁতখালীর ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ ও লস্করের বাইনতলায় স্লুইস গেট ও আলমতলায় বাঁধ মেরামত করা হবে।
পাইকগাছায় কপোতাক্ষ নদের ভাঙনে জেলেপল্লী প্লাবিত
Leave a comment