মামলা দায়ের, আটক ১, ডিএনএ পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ
জন্মভূমি রিপোর্ট : খুলনার পাইকগাছা উপজেলায় মুখে টেপ ও চোখে সুপারগ্লু লাগিয়ে গৃহবধূ (৪৫) ধর্ষণ ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে। পুলিশ সন্দেহভাজন আব্দুস সামাদ (৫০) নামের এক ব্যক্তিকে উপজেলার রাড়ুলি গ্রাম থেকে আটক করেছে। তবে তার কাছ থেকে এখনো কোন তথ্য পায়নি পুলিশ। আলোচিত এ ধর্ষণ ঘটনায় ক্লু উদঘাটন করতে না পারলেও পুলিশের ধারণা ঘটনার সাথে একাধিক ব্যক্তি জড়িত থাকতে পারে। মহিলার শরীরের বিভিন্নস্থানে আচঁড়, আঘাত, হাত-পা বাধাঁ এবং চোখেমুখে সুপার গ্লু লাগানোর ঘটনাটি একজনের একার পক্ষে সম্ভব নয় বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া শরীরের আঘাত দেখলে ধারণা করা যায় তার সাথে ধ্বস্তাধস্তি হয়েছে।
পাইকগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওবায়দুর রহমান বলেন, মঙ্গলবার রাতে ওই গৃহবধুর স্বামী বাদী হয়ে দস্যুতা, গণধর্ষণ, আঘাত, লুটের অভিযোগ এনে পাইকগাছা থানায় মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় অজ্ঞাত ২-৩ জনকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া এ মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আব্সুস সামাদ নামের এক ব্যক্তিকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ওই ব্যক্তির কাছ থেকে এখনো কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।
জানতে চাইলে ওসি ওবায়দুর রহমান বলেন, মই দিয়ে ছাদে প্রবেশ করে সিঁড়ির দরজা শাবল দিয়ে ভেঙে গৃহবধূর বেডরুমে ঢুকে তার হাতপা বেধেঁ ফেলা, চোখে, মুখে সুপার গ্লু লাগিয়ে নির্যাতন এবং ধর্ষণ, লুটপাট করা একজন ব্যক্তির পক্ষে করা সম্ভব নয়। এই বিষয়গুলোকে প্রধান্য দিয়ে আমরা এগোচ্ছি। তা ছাড়া ঘটনাটি পূর্ব পরিকল্পিত কিনা এটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আমরা ভিক্টিমের সাথে কথা বলে তথ্য নেওয়ার চেষ্টা করছি।
সূত্র বলছে, যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তারা আগে থেকে সবকিছু পরিকল্পনা করেই কাজটি করেছে। তা না হলে দুর্বৃত্তরা সুপার গ্লু আঠা নিয়ে যেত না। তাছাড়াও আরো কয়েকটি বিষয় সামনে রেখে তদন্ত করা হচ্ছে।
মামলার এজাহার বাদী উল্লেখ করেছেন, আমি কাঁচা মালের ব্যবসা করি। গত ১১ ফেব্রুয়ারি দুপুরে কাঁচা মাল নিয়ে পাইকগাছা থানাধীন গড়ইখালী হাটে যাই। গত ১২ ফেব্রুয়ারি ভোর ৫টার দিকে আমার এক প্রতিবেশী মোবাইলে ফোন করে জানান, আমার স্ত্রী অচেতন, রক্তাক্ত, চোখে ও মুখে আঠা জাতীয় পদার্থ লাগানো, ওড়না দিয়ে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় শোবার ঘরের বিছানার ওপর থেকে প্রতিবেশী লোকজন উদ্ধার করেছে। বাড়ি এসে উপস্থিত লোকজনের কাছে ঘটনার বিষয়ে জানতে পারি। পরে সকাল সাড়ে ৬টার দিকে এ্যাম্বুলেন্সে করে আমার স্ত্রীকে চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করি।
এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মাঝে মাঝে তার জ্ঞান ফিরলে তার কাছ থেকে জানতে পারি গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাত ৩টার দিকে অজ্ঞাতনামা ২ থেকে ৩ জন লোক যে কোনো উপায়ে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করলে আমার স্ত্রী কোনো কিছু বুঝে উঠার আগেই তারা আমার স্ত্রীকে একটি ওড়না দ্বারা হাত-পা বেঁধে হত্যার ভয় দেখিয়ে তার কানে থাকা একজোড়া স্বর্ণের রিং, ১০ হাজার টাকা জোর পূর্বক টান দিয়ে কান ছিড়ে রক্তাক্ত জখম করে নিয়ে নেয়। আমার স্ত্রীর ভ্যানিটি ব্যাগের মধ্যে থাকা ১১ হাজার টাকা নিয়ে নেয়। তারা আমার স্ত্রীর একটি হলুদ রংয়ের আইটেল বাটন মোবাইল ফোন নিয়ে নেয়। দস্যুরা আমার স্ত্রীর দুই চোখে ও মুখে সুপার গ্লু জাতীয় আঠা দেয় এবং অন্য একটি ওড়না দিয়ে চোখ মুখ বেঁধে পর্যায়ক্রমে ধর্ষণ করাসহ শারীরিক নির্যাতন করে। দস্যুরা দস্যুতা সংঘটন করে ৪টার দিকে ঘর থেকে বের হয়ে চলে যায়।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ড-২ এর সহকারী রেজিস্ট্রার ডাক্তার মো. কনক হোসেন বলেন, ‘ওই রোগী এখন মোটামুটি সুস্থ হয়ে উঠেছেন। বুধবার দুপুরে তাকে সার্জারী ওয়ার্ড থেকে ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেলে (ওসিসি) পাঠানো হয়েছে। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই নারীর শরীরের বিভিন্নস্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এছাড়া শরীরের কয়েকটি স্থানে আচড়ের দাগ পাওয়া গেছে। আমরা ফিঙ্গারিংসহ অন্যান্য আলামত সংগ্রহ করে ডিএনএ টেষ্ট করার জন্য পাঠিয়েছি। এসব রিপোর্ট পাওয়ার পর জানাযাবে আসলে কতজন নির্যাতনের সাথে জড়িত ছিল। বুধবার দুপরে তাকে ওসিসি ওয়ার্ডে পাঠানো হয়েছে।
খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেলের (ওসিসি) কো-অর্ডিনেটর ডা. সুমন কুমার রায় বলেন, গৃহবধু এখন অনেকটাই স্বাভাবিক আচরণ করছেন। তাকে আমরা নিবিড় পরিচর্যায় রেখে অন্যান্য চিকিৎসা দিচ্ছি।
জানতে চাইলে খুলনা জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাঈদুর রহমান বলেন, এ ঘটনাটিকে খুবই গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে। পারিপাশি^ক অবস্থাসহ বিভিন্ন বিষয় সামনে রেখে তদন্ত করা হচ্ছে। সন্দেহভাজন একজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আমরা আশা করছি অপরাধীদের খুব শীঘ্রই গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।