পূর্ণ চন্দ্র মন্ডল, পাইকগাছা : পাইকগাছায় পৌর সদর থেকে শুরু করে উপজেলার সকল ইউনিয়নের অধিকাংশ চায়ের দোকানগুলোতে ক্যারাম, তাস ও মোবাইল জুয়ার রমরমা ব্যবসা চলছে। এসকল আসর বন্ধে সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী। সকাল থেকে শুরু করে গভীর রাত্র পর্যন্ত চলছে এসকল জুয়ার আসর। চায়ের দোকান গুলো যেন ক্যারাম বোর্ড ও টেলিভিশন ছাড়া বড্ড বেমানান। যে সব দোকানে বিনোদনের বাড়তি সংযোজন নেই, সেখানে লোক সমাগমও তুলনামূলক কম। তাই বাধ্য হয়ে দোকানিরাও দোকান প্রতি ১ থেকে ২-৩টি পর্যন্ত ক্যারাম বোর্ড সংযোজন করেছে। দোকানের মধ্যে আলাদা একটা খুপরি তৈরি করে সেখান বিড়ি সিগারেট জাতীয় মাদকেরও কারবার রয়েছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান।
বর্তমান পাইকগাছা উপজেলার পৌর সদরসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন দিন দিন চোরের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। প্রায় শোনা যায় উপজেলায় চেতনা নাশক ঔষধ খাওয়ায় বিভিন্ন বাড়ি, দোকানে চুরি ,ডাকাতি ধষর্ণ, খুন হচ্ছে। এতে করে সাধারণ মানুষ প্রশাসনের উপর থেকেও আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। বাড়ির ছোট বাচ্চাটা ঘুমানোর আগে বলে মা-বাবা ঘরে ভালো করে দরজা লাগিয়ে দিও চোর আসবে কিন্তু! দোকানে আগত ক্রেতা সাধারণের চেয়ে ক্যারাম বোর্ডের খেলোয়াড়দের সংখ্যাই বেশি। তবে অধিকাংশ চায়ের দোকানের বোর্ড গুলোতে চলছে অভিনব জুয়ার আসর। প্রতি গেমে বিভিন্ন চুক্তিতে খেলোয়াড়রা খেলা করছে। এ সময় ক্যারামের নির্দিষ্ট হারে ভাড়ার বাইরে খেলোয়ারদের বাধ্যতামূলক ওই দোকানের চা-সিগারেট, পান, বিস্কুট, ভাঁজার পাশাপাশি বিভিন্ন কোমল পানীয়, ডিম খেতে গুনতে হয় গেমপ্রতি মোটা অংকের টাকা। একাধিক নির্ভরশীল সূত্র জানায়, প্রত্যেক চায়ের দোকানে ক্যারামের নিয়মিত খেলোয়াড়দের একটি বড় অংশ জুয়ার সাথে সম্পৃক্ত। অনেক সময় দোকানির অগোচরে তারা গোপণে চুক্তি ভিত্তিক খেলা করে। যাদের একটি বড় অংশ বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ছাত্র থেকে শুরু করে উঠতি বয়সী যুবক, ভ্যান চালক ও শ্রমজীবী সহ নানা পেশার মানুষ সম্পৃক্ত। তারা বই-খাতা ছেড়ে ও কাজ বাদ দিয়ে এখন দিনের বেশির ভাগ সময় কাটাচ্ছে ক্যারামের আসরে। অনেকে আবার ক্যারামে চান্স না পেয়ে কিংবা শুধু মাত্র সময় কাটানোর জন্য সাথে আনা এ্যান্ড্রয়েড ফোনে খেলছে নানা ধরনের গেম। এক কথায় প্রশাসনের নজরদারি হ্রাস পাওয়ায় তারা নিজেদের অজান্তেই সম্পৃক্ত হয়েছে ভয়াবহ জুয়ায় নেশায়। সরেজমিনে দেখা যায়, দোকান খোলার সাথে সাথেই খেলোয়াররা ভীঁড় জমান চায়ের দোকানে। সারা দিন বোর্ডে ব্যস্ত থাকায় অনেকে বাড়ি ফেরেন মধ্য রাতে। অনেকে আবার দুপুরের খাবার খেয়ে ফের হাজির হচ্ছেন চায়ের দোকানের বোর্ডের আড্ডায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক চা দোকানি জানায়, স্থানীয় পুলিশকে ম্যানেজ করে বোর্ড প্রতি ২-৩শ’ টাকা মাসিক চুক্তিতে বোর্ড পরিচালনার পারমিশন নিয়ে তারা ঐ সকল জুয়ার বোর্ড চালিয়ে আসছে। উপজেলার পৌরসদরে নদীর ধারে চা পট্টী, সোনালী ব্যাংকের নিচে, গদাইপুর, গোলাবাড়ি, কপিলমুনি, নাছিরপুর মোড়, প্রতাপকাটি পোলের মোড়, কাশিমনগর বটতলা (নদ তীরবর্তী চায়ের দোকান), দাস পাড়া, মুক্তি মোড় ও মানিকতলা, গড়ইখালি, লস্কর, লতা, দেলুটি, কাটিপাড়া, বাঁকা সহ প্রায় প্রত্যেকটি চায়ের দোকানে ক্যারাম বোর্ডে জুয়ার আসর জমজমাট হয়ে উঠেছে। যদিও বরাবরই পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। এদিকে ক্যারাম বোর্ডের আসরে লোক সমাগমের বাড়তি সুবিধা নিয়ে কিছুকিছু দোকানে মাদকদ্রব্য বিক্রিরও অভিযোগ রয়েছে। গেম প্রতি সংশ্লিষ্ট দোকানের শ’ শ’ টাকার বিলের পাশাপাশি ১শ, ২শ থেকে ৫শ টাকা পর্যন্ত বাজিতে হেরে আর্থিকভাবে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে খেলোয়ারদের একটি বড় অংশ। প্রতিটি চা দোকানি নাম মাত্র পুঁজি বিনিয়োগ করে বোর্ড ভাড়া ও মালামাল বিক্রি থেকে নিয়মিত ১ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করছেন। এতে দোকানিদের একটি অংশ লাভবান হলেও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কিশোর-যুবক, কোমলমতি শিক্ষার্থী ও খেঁটে খাওয়া শ্রমজীবীরা। উপজেলার চায়ের দোকানে অভিনব ক্যারাম নামের জুয়ার আসর বন্ধে সচেতন অভিভাবক মহল ও সুধীজনরা সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।