শাহরিয়ার কবির, পাইকগাছা : কখন কার কাছে স্বপ্ন ধরা দেবে কে জানে এ কথা? মাত্র কয়েক বছর আগেও পাইকগাছা উপজেলার দেলুটির ইউনিয়নের ২২ নং পোল্ডারের ডিহিবুড়া খালের দু’পাড়ে ছিল ঝোপঝাড়, ইঁদুর আর বিষাক্ত সাপের ভয়। সেই ভুতুড়ে পরিবেশ আজ সবুজ ফসলের সমারোহে রূপ নিয়েছে। এলাকাবাসীও এখন বিস্মিত হয়ে দেখছে সবুজ বিপ্লব।
এই পরিবর্তনের নেপথ্যে তরুণ খাল ইজারাদার বিধান মণ্ডল। মাছ চাষের পাশাপাশি তিনি খালের দু’পাড়ের দীর্ঘদিনের পরিত্যক্ত জমি সমান করে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তুলেছেন ফসলের বেষ্টনী। দেশি-বিদেশি নানা জাতের অপসিজেন তরমুজ, সামমাম, ভাঙ্গি, করলা, লাউ, বরবটি সহ মোট ১৭৩ প্রজাতির ফল ও সবজি চাষ করে স্মার্ট কৃষিতে এক অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, খালের দু’পাড় জুড়ে মাচায়-মাচায় ঝুলছে তরমুজ, সামমাম ও ভাঙ্গি। দেশি-বিদেশি বাণিজ্যিক ১১ জাতের অপসিজেন তরমুজ, ৮ জাতের সামমাম, ৬ জাতের ভাঙ্গিসহ নানা ফসল জমি ভরিয়ে তুলেছে। বর্তমানে প্রতিদিন ৩৫-৪০ জন নারী-পুরুষ শ্রমিকের কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হয়েছে এখানে।
স্থানীয় জমির মালিক সঞ্জয় বালা, নির্মল ও গৌরপদ বালা জানান, “আমাদের অপতিত জমি চাষের আওতায় এনে বিধান মণ্ডল শুধু মাছ নয়, নানা ফসল চাষ করে সকলের নজর কেড়েছেন।”
কৃষক বিধান মণ্ডলের হিসাব ৩০ হাজার তরমুজ গাছে গড়ে ২-৩টি করে ফল ধরছে। এতে উৎপাদন হবে অন্তত ৬০-৬৫ হাজার তরমুজ, যার ওজন আড়াই কেজি থেকে সাড়ে ৮ কেজি পর্যন্ত। প্রতি কেজি ৪০ টাকা দরে শুধু তরমুজ বিক্রি হবে প্রায় ৬০-৬৫ লাখ টাকা।
২৪ হাজার সামমাম গাছে ৩-৪টি করে ফল ধরছে। প্রতিটির ওজন ৫শ গ্রাম থেকে দেড় কেজি। বাজারে কেজিপ্রতি ৬০ টাকা দরে সামমাম বিক্রি হবে অন্তত ১৫ লাখ টাকা।
ইতোমধ্যে বাজারে সাপ্তাহিক ২০০ কেজি করে করলা, লাউ, বরবটি সহ বিভিন্ন সবজি বিক্রি শুরু হয়েছে।
সব মিলিয়ে তার খরচ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৬ লাখ টাকা, আর বিক্রির সম্ভাব্য আয় হবে কোটি টাকারও বেশি।
বিধান মণ্ডল জানান, তিনি ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে উন্নত মানের বীজ সংগ্রহ করেন এবং স্থানীয় কৃষকদের সহায়তায় ফল-সবজি চাষ করেন। সার প্রয়োগে জৈবসার ব্যবহার এবং রোগবালাই দমনে বহুজাতিক সিনজেনটা কোম্পানির বালাইনাশক প্রয়োগ করেছেন।
সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ১০-১২ দিনের মধ্যে সব জাতের তরমুজ ও সামমাম বাজারজাত করা সম্ভব হবে। তবে ফসল বাজারজাতকরণে ঝুঁকিপূর্ণ যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে তিনি ব্যাপক ভোগান্তি ও অতিরিক্ত খরচ বহন করছেন। এজন্য তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
এক সময় সাপ-ইঁদুরের আতঙ্কে ছেয়ে থাকা ডিহিবুড়া খালপাড়ে এখন সবুজের বিপ্লব। কৃষক বিধান মণ্ডলের এই উদ্যোগ শুধু অর্থনৈতিক সাফল্য নয়, স্থানীয় বেকার মানুষের জন্যও হয়ে উঠেছে কর্মসংস্থানের এক নতুন দিগন্ত।
প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত