
শাহরিয়ার কবির,পাইকগাছা : দৈনিক জন্মভূমিতে গতকাল মঙ্গলবার (২৩ নভেম্বর ২০২৫) পাইকগাছা পৌরসভার একটি সড়ক সংস্কার প্রকল্পে অনিয়ম ও প্রায় ৭০ লাখ টাকার বিল উত্তোলনের অভিযোগ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশের পর সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও মহলে শুরু হয়েছে ব্যাপক দৌড়ঝাঁপ। অভিযোগ উঠেছে, প্রকৃত তদন্তের বদলে বিষয়টি ধামাচাপা দিতেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও পৌরসভার একটি অংশ সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
পাইকগাছা পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের শিববাটি এলাকায় বায়তুর নূর জামে মসজিদ থেকে কারিগরি প্রশিক্ষণ সেন্টার (টিটিসি) পর্যন্ত প্রায় ৭শ’ মিটার সড়ক ‘গুরুত্বপূর্ণ নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প-২ (IUIDP-2)’ এর আওতায় সংস্কার করা হয়। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় প্রায় ৭০ লাখ টাকা। অথচ কাজ শেষ হওয়ার এক মাস না যেতেই সড়কের বিভিন্ন অংশে পিচ ও খোয়া উঠে যেতে শুরু করেছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ২০ নভেম্বর গভীর রাতে নিয়মবহির্ভূতভাবে বিটুমিন ঢেলে কাজ শুরু করা হয়। বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহেরা নাজনীন ঘটনাস্থলে গিয়ে কাজ বন্ধ করে তদন্ত কমিটি গঠনের আশ্বাস দেন। কিন্তু রহস্যজনক কারণে সেই তদন্ত আর হয়নি। পরদিনই পুনরায় কাজ শুরু করে তড়িঘড়ি শেষ করা হয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, তদন্তের আশ্বাস ছিল কেবল সময়ক্ষেপণের কৌশল। এর আড়ালেই নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে কাজ শেষ করে বিল উত্তোলনের পথ তৈরি করা হয়েছে। পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী নুর আহমদের প্রত্যক্ষ জ্ঞাতসারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তনুশ্রী এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী বাবু রাম এই কাজ সম্পন্ন করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এলাকাবাসী জানান, সঠিক মান বজায় রেখে কাজ হলে এই সড়ক বহু বছর টেকসই থাকার কথা ছিল। অথচ এক মাস না যেতেই রাস্তার বেহাল দশা। সামনে বর্ষা মৌসুমে সড়কের অবস্থা আরও ভয়াবহ হবে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
দৈনিক জন্মভূমিতে গতকাল মঙ্গলবার ২৩ নভেম্বর ২০২৫ সংবাদ প্রকাশের পর পৌরসভা, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে বৈঠক ও যোগাযোগ শুরু হয়েছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। তবে এখনো পর্যন্ত কোনো স্বাধীন বা নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠনের ঘোষণা আসেনি।
এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তনুশ্রী এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী বাবু রাম বলেন, যেখানে সমস্যা হয়েছে সেখানে নতুন করে বিটুমিন ঢেলে কার্পেটিং করা হবে। তবে এলাকাবাসীর প্রশ্ন—কাজ মানসম্মত হলে এত অল্প সময়েই কেন সংস্কারের প্রয়োজন পড়ছে?
পাইকগাছা পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী নুর আহমদ অনিয়ম ও ঘুষের অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেন, সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তদন্ত করে নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং সেই অনুযায়ী কাজ করা হয়েছে। তবে সেই তদন্তের কোনো লিখিত প্রতিবেদন বা সিদ্ধান্ত এখনো প্রকাশ্যে আসেনি।
এতে করে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—
তদন্তের ঘোষণা দিয়েও কেন প্রকৃত তদন্ত হয়নি?
কার স্বার্থে ৭০ লাখ টাকার এই প্রকল্পে অনিয়ম আড়াল করা হলো?
দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে কেন তড়িঘড়ি বিল উত্তোলনের চেষ্টা চলছে?
এলাকাবাসী দ্রুত নিরপেক্ষ তদন্ত ও অনিয়মে জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত