জন্মভূমি ডেস্ক : পাটকে বাংলাদেশের অর্থকরী ফসল বলা হয়। যা প্রতিবছর বিদেশে রপ্তানি করে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে সরকার। এই সোনালি আঁশ পাট চাষে দিন দিন আগ্রহ হারাচ্ছেন দিনাজপুর নবাবগঞ্জের পাট চাষিরা। কৃষি শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি, অতি খরা ও খালবিল কমে যাওয়ায় জাগা না থাকায় লোকসানের মুখে পড়ছেন চাষিরা। ফলে পাট চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন এই অঞ্চলের মানুষ।
এক সময় এই উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলে সোনালি আঁশ পাটের ব্যাপক চাষ হতো। বর্ষাকালে রাস্তার ধারে খালবিলে নদী-নালায় পাট জাগ দেওয়ার উৎসব চলতো। বাড়িতে বাড়িতে উঠানে শোভা পেতো ফুলের মত ছড়িয়ে দেয়া পাটের সাদা খড়ির স্তূপ। সেই খড়ি সারা বছর জ্বালানিসহ নানা কাজে ব্যবহিত হতো। এখন সেসব সোনালি অতীত। আধুনিকতার ছোঁয়ায় দিন দিন খালবিল বিলুপ্তির পথে। অতিখরায় নদীগুলি শুকিয়ে গেছে। পুকুরগুলিতে মাছ চাষ করার ফলে পাট জাগের জায়গা না থাকায়, কৃষি শ্রমিকের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায়, উৎপাদন খরচ অনুযায়ী পাটের মূল্য না পাওয়ার কারণে দিন দিন পাট চাষ কমেছে এ উপজেলাতে।
উপজেলার মতিহারা গ্রামের আব্দুল খালেক নামে এক পাট চাষি বলেন, আমরা কোনো কৃষি পরামর্শ পাই না। নিজেরাই যা জানি সেই ভাবে পাট চাষ করে আসছি। যদি সরকারি ভাবে আমরা প্রশিক্ষণ পেতাম তাহলে পাটের ফলন আরও বেশি করতে পারতাম।
জোবায়ের হোসেন নামে আরেক পাট চাষি বলেন, এবার আমি দুই বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। পাট চাষে বর্তমান অনেক খরচ। সবচেয়ে বড় সমস্যা পাট জাগ দেওয়ার জায়গার অভাব। আশেপাশে তেমন কোনো ডোবা-নালা নেই। দুই কিলোমিটার দুর থেকে গাড়ি ভাড়া করে নিয়ে এসে জাগ দিতে হয়। যদি সরকার পাট চাষের সমস্যাগুলো দুর করতো তাহলে আমরা পাট চাষে লাভবান হতাম।
স্থানীয় বাসিন্দা মতিয়ার রহমান নামে আরেক চাষি বলেন, আড়াই বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু বর্তমান পাট জাগ দেওয়ার জন্য জায়গা আর পাওয়া যায় না। ডোবা-নালা সব ভরাট হয়ে গেছে। যেসব জায়গায় পাট জাগ দেয়া হত সেসব স্থানে এখন আর পানি থাকে না। সেলোমেশিন দ্বারা পানি সেচ দিয়ে পাট জাগ দিতে হয়। এতে খরচ অনেক বেড়ে যায়।
নবাবগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার তাপস কুমার রায় বলেন, পাট জাগ দেওয়ার জায়গা বৃদ্ধি পেলে আগামীতে পাট চাষও বৃদ্ধি পাবে। তবে পাট চাষে আগ্রহী করার জন্য প্রণোদনা আওতায় বীজ প্রদান করা হচ্ছে চাষিদের। আশা করা হচ্ছে আগামীতে এ উপজেলায় পাট চাষ বৃদ্ধি পাবে।
তিনি আরও বলেন, এ বছর উপজেলায় ১৩৯ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। মানভেদে প্রতি মণ পাট ২ হাজার ৪০০ থেকে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৯০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।