জন্মভূমি ডেস্ক : ২০২২ সালের ১৮ এপ্রিল। তখন রমজান মাস। নিউমার্কেটে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঢাকা কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এর জেরে শুরুতে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও পরে সংঘর্ষের শুরু হয়। সেদিন ঘটনার শুরুতেই শিক্ষার্থীদের নিবৃত্ত করতে কলেজের ভেতর অবস্থান নেওয়া শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে টিয়ারগ্যাস, রাবার বুলেট ছোড়ে পুলিশ। সেই গুলিতেই দুই চোখ হারান ঢাকা কলেজ ছাত্র মোশাররফ হাজারী।
ওই ঘটনার পরও আলোচনায় এসেছিলেন শাহবাগ থানায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দুই নেতাকে পিটিয়ে আলোচনায় আসা অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশিদ। সংঘর্ষের পরদিনই ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছিলেন— ঢাকা কলেজের ছাত্রদের লক্ষ্য করে পুলিশের রাবার বুলেট ছোড়ার নির্দেশদাতা এডিসি হারুন অর রশিদ। পুলিশের ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ ভূমিকার অভিযোগ এনে ডিসি, এডিসির প্রত্যাহার চেয়ে সংবাদ সম্মেলনও করেছিলেন শিক্ষার্থীরা।
সেদিনের সেই সংঘর্ষের পর প্রায় দেড় বছর চলে গেছে। তবে চোখের আলো আর ফিরে পাননি মোশাররফ।
ছাত্রলীগের দুই নেতাকে পিটিয়ে এডিসি হারুন নতুন করে আলোচনায় আসার পর তার বিচার চেয়েছেন সেই মোশাররফ।
সেদিনের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, আমি ঢাকা কলেজের হলে থাকতাম। ছাত্রলীগের সক্রিয় রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলাম। সেদিনের ওই ঘটনাটি এখনও দুঃস্বপ্ন মনে হয়। ঘুমের মধ্যে কখনও কখনও আঁতকে উঠি। ওই পরিস্থিতিতে সেদিন গুলি করার কোনো প্রয়োজনই ছিল না। পুলিশের ধাওয়ায় শিক্ষার্থীরা সড়ক থেকে ক্যাম্পাসে চলে আসার পরও ঢাকা কলেজের দিকে টিয়ারগ্যাস, রাবার বুলেট, ছররা গুলি মারা হয়েছে। সে সময় ব্যবসায়ীদের প্রতি কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
মোশাররফ বলেন, আমার দুই চোখই এখন অন্ধ। মাথায় ৩০-৩৫টি ছররা গুলি এখনও আছে। এগুলো আর বের করা সম্ভব না। আমাকে যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, ওই সময় বলা হলো আমাকে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে আর চিকিৎসার সমস্ত খরচ সরকার থেকে বহন করা হবে। আমি মাত্র এক লাখ টাকা পেয়েছি সরকার থেকে ৷
নিজের পরিবারের উদ্যোগে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করিয়েও কোনো লাভ হয়নি জানিয়ে মোশারফ আরও বলেন, আমি উন্নত চিকিৎসার জন্য দুই বার ভারতে গিয়েছি পরিবারের জমি বিক্রি করে। এতেও কোনো লাভ হয়নি। চোখে আলো দেখার আশা ছেড়ে দিয়েছি। বাবার একটা ছোটখাটো দোকান ছিল, সেটার ব্যাবসাও এখন ভালো না। আমি এখন অসহায়। আমাকে দেখার মতো কেউ নেউ ৷ এখন সারাদিন বাড়িতেই বসে থাকি৷ যেহেতু চোখে দেখি না তাই কোনো কাজও করতে পারি না।
মোশাররফ বলেন, আমার অনার্স ফাইনাল পরীক্ষার কিছুদিন আগেই এই ঘটনা ঘটে। আমি সুস্থ থাকলে আজ হয়তো চাকরি করে পরিবারের হাল ধরতাম। সেই সুযোগও আর নেই। আমি নিজেই তো অসহায়। সরকার আমাকে কোনো কর্মের ব্যবস্থা করলে আমি উপকৃত হতাম।
তিনি আরও বলেন, ঘটনার পর জানতে পারি এডিসি হারুনের নির্দেশে আমাদের ওপর গুলি করা হয় ৷ আমি কার কাছে বিচার চাইবো? পুলিশ তো সরকারি বাহিনী। তাদের বিরুদ্ধে তো থানায় জিডিও করতে পারব না। গতকাল ছাত্রলীগের এক বড় ভাই বললো সেই এডিসি হারুন নাকি ছাত্রলীগের দুই বড় ভাইকে অনেক মেরেছে। এসব ঘটনার বিচার হওয়া দরকার।
গত বছরের ওই সংঘর্ষের পর শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে নিউমার্কেট থানার ওসিকে বদলি করা হলেও নিজ পদে বহাল থাকেন এডিসি হারুন।
গুলি শেষ হয়ে গেছে বললে এডিসি হারুন সেদিন এক পুলিশ সদস্যকে চড়ও মেরেছিলেন। ওই ঘটনার ভিডিও ক্লিপও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।
প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত