
পিবিআই’র তদন্ত শুরু
মামলা এবং চাকরি রক্ষায় বিবাহ, পরে তালাক
ন্যায় বিচারে পুলিশ প্রধানসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ
খানজাহান আলী থানা প্রতিনিধি : ফেসবুকে পরিচয়ে বন্ধুত্ব। একপর্যায়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে খুলনা পলিটেকনিক কলেজের তৃতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থীকে কয়েক দফা ধর্ষণের অভিযোগ মো. হাফিজুর রহমান নামের এক পুলিশ কন্সটেবলের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য বর্তমানে বরগুনা পুলিশ লাইনে কর্মরত রয়েছে (কনস্টেবল নং বিপি-৯৮১৮২১৮৪৮২)। ধর্ষণের বিষয়টি জানাজানি হলে দায়মুক্তির জন্য বিয়ের নাটক মঞ্চন্থ করে। পরবর্তিতে নির্যাতন করে যৌতুকের চাহিদামত টাকা না পাওয়ায় তালাক দেয়। এ ব্যাপারে ১৭ বছর বয়সী ঐ কিশোরী ন্যায় বিচারে পুলিশের আইজিপি, বরগুনা পুলিশ লাইনের পুলিশ সুপার বরাবর আবেদন করেন। শেষ পর্যন্ত ভুক্তোভোগী ঐ নারী খুলনা বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালে-২ এর আদালতে মামলা করে। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্তের জন্যে খুলনা পিবিআইকে নির্দেশ দেন। পুলিশের পক্ষ থেকে অনুসন্ধান এবং পিবিআই তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছে। এদিকে ভুক্তোভোগী নারী ন্যায় বিচারে পুলিশ প্রধান এবং আদালতে মামলা করায় পুলিশের ক্ষমতা অপব্যবহার করে হাফিজ ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে ভুক্তোভোগী নারীকে গুম এবং পরিবারকে হত্যার হুমকি অভিযোগ করেছে। অব্যাহত হুমকির মুখে নগরীর তেলিগাতি এলাকায় বসবাসরত তরুণীর পরিবার জীবনের নিরপত্তাহীনতায় ভুগছে।
মামলার অভিযোগ সূত্রে জানাগেছে, দৌলতপুর থানার কার্ত্তিককুল এলাকার কাশেম শেখের পুত্র বরগুনা পুলিশ লাইনের পুলিশ কনস্টেবল মো. হাফিজুরের সাথে ফেসবুকে পরিচয় হয় খুলনা পলিটেকনিক কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী আড়ংঘাটা থানার তেলিগাতী গ্রামের কিশোরীর সাথে। ফেসবুকে পরিচয় রুপ নেয় বন্ধুত্বের। একপর্যায়ে ঐ কিশোরীকে ফুসলিয়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে একাধিকবার জোরপূর্বক ধর্ষণ করে বলে ভিকটিম ঐ কিশোরী মামলায় উল্লেখ করে। ধর্ষণের বিষয়টি জানাজানির পরে পুুুুুুুুলিশ কনস্টেবল হাফিজুর স্ট্যাম্পে কিশোরীকে বিবাহের আশ্বাস দিয়ে কর্মস্থল চলে যায়। পরবর্তিতে ধর্ষণের শিকার কিশোরীর পরিবার এ বিষয়ে বরগুনা পুলিশ লাইনে লিখিতভাবে জানালে মেয়েটিকে বিবাহ করতে সম্মতি জানায় হাফিজুর। গত ১০ ফেব্রয়ারি হাফিজুর প্রথম স্ত্রী কানিজ সুবর্ণার কথা গোপন রেখে ঐ কিশোরীকে দ্বিতীয় বিবাহ করে। বিবাহের কিছু দিন পরেই তাকে বিভিন্নভাবে নির্যাতনের একপর্যায়ে যৌতুকের টাকার জন্য দরিদ্র পিতার কাছে পাঠিয়ে দেয়। ধর্ষণের দায় এড়াতে কৌশলে বিবাহ করে কিছু দিন পরে নির্যাতন করে যৌতুকের চাহিদা মতো টাকা দিতে না পারায় ডির্ভোস পাঠান ঐ কিশোরীর বাড়িতে। হাফিজুরের চালাকি বুঝতে পেরে ভুক্তভোগী কিশোরী ন্যায় বিচারে পুলিশ প্রধান এবং আদালতে মামলা করেন। পুলিশের পক্ষ থেকে অনুসন্ধানের অংশ হিসাবে গত ৯ আগস্ট খালিশপুর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার গোপীনাথ কানজিলালের নিকট ঐ কিশোরী এবং বরগুনা পুলিশ লাইনের আরআই জাহাঙ্গীর উদ্দিন হাজির হয়ে জবানবন্দি দিয়েছে বলে একটি সূত্রে জানাগেছে। এছাড়া খুলনা পিবিআই’র তদন্তকারী কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন গত ১৩ আগস্ট খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মেয়েটির মেডিকেল সম্পন্ন করেছে।
এ ব্যাপারে ভিকটিমের মা রোকেয়া বেগম জানায়, আমার মেয়েকে ফুসলিয়ে নিয়ে কয়েক দফা ধর্ষণ করে হাফিজুর। বিষয়টি আমাকে জানালে আমি মোবাইলে তার কাছে জানতে চাইলে সে ধর্ষণের কথা স্বিকার করে দায়মুক্তির জন্য বাঁচতে কোর্টে স্ট্যাম্পে বিবাহের জন্য ১বছর সময় নেয়। কিন্তু আমার মেয়ে এবং আমাদের সামাজিক অবস্থার কথা বিবেচনায় বিবাহের জন্য বলা হলে সে রাজি হয়। কিন্তু তখন আমরা জানতে পারিনি এটা ছিল তার অভিনয় ও চাকরি বাঁচানোর চালাকি। বিবাহের পরপরই হাফিজ তার মা, ভাই ও ভাবী মিলে আমার মেয়েকে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করে। তার ব্যবহৃত মোবাইলটি কেড়ে নিয়ে যৌতুকের টাকা দাবি করে জোরপূর্বক বাড়ি থেকে বের করে দেয়। হাফিজ আমার মেয়েকে তালাক দিয়ে এ বিষয়ে বাড়াবাড়ি করলে মেয়েকে গুম এবং আমাকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে।
এ বিষয়ে খালিশপুর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার গোপীনাথ কানজিলাল মুঠোফোনেএ প্রতিবেদককে জানায়, আমার কাছে অনুসন্ধানের জন্য একটি চিঠি এসেছে। যার বিরুদ্ধে অভিযোগ সেই হাফিজ আমাদের ফোর্স নয়। সে যে জেলার ফোর্স তদন্তটি সেখানে হবে। চিঠিটি আমার কাছে আসার পর আমি দু’জনকে সাক্ষ্য নেওয়ার জন্য ডেকে আনি। বিষয়টি যেহেতু অন্য জেলার সেহেতু আমার উর্ধতন কর্মকর্তার সাথে আলোচনা করেছি। আমি বিষয়টি ঐ জেলাতে শিফট করে দিচ্ছি বলে তিনি জানান।