বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার প্রেক্ষাপটে সরকার যখন কৃচ্ছ্রসাধনের অংশ হিসাবে উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তখন জানা গেল একটি প্রকল্পে পরামর্শক খাতে ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ৪১ কোটি ৬০ লাখ টাকা। পুরো প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ১০২ কোটি ২৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৩৮ কোটি এবং বিশ্বব্যাংকের তহবিল থেকে ৬৪ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। অর্থাৎ পরামর্শক খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে মোট প্রকল্প ব্যয়ের প্রায় অর্ধেক। বলার অপেক্ষা রাখে না, ‘যমুনা রিভার সাসটেইনেবল ম্যানেজমেন্ট প্রজেক্ট-১ : ডিজাস্টার রিস্ক ফাইন্যান্সিং (কম্পোনেন্ট-৩)’ শীর্ষক এ প্রকল্পে পরামর্শকের পেছনে এমন ব্যয়ের প্রস্তাব সরকারের কৃচ্ছ্রসাধন নীতির পরিপন্থি। বিশেষজ্ঞররা তো বটেই, এমনকি পরিকল্পনা কমিশনও এ ধরনের ব্যয় প্রস্তাবকে অযৌক্তিক বলে মনে করছে। এ ধরনের প্রকল্পে পরামর্শক নিয়োগের নামে অনিয়ম ও অপচয়ের আশঙ্কা থাকে। ঋণের টাকার এমন অপব্যয় কোনোভাবেই কাম্য নয়।
বৈদেশিক ঋণের প্রকল্পে পরামর্শক নিয়োগের লাগাম টানা যাচ্ছে না কিছুতেই। উন্নয়ন সহযোগীরা ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে নানা শর্ত জুড়ে দেয়, এ অভিযোগ নতুন নয়। তবে পরামর্শক নিয়োগ কোনো চুক্তির শর্ত নয়, যদিও অনেক ক্ষেত্রেই যারা ঋণ বা অনুদান দেয়, তাদের পক্ষ থেকে পরামর্শকের বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়। তাদের আলোচনার মধ্যেও পরামর্শকের বিষয়টি থাকে। তবে দেখতে হবে প্রকল্প বাস্তবায়নে সত্যিই এত পরামর্শকের প্রয়োজন আছে কি না। আমরা মনে করি, অপ্রয়োজনে বিদেশ থেকে পরামর্শক আনার প্রবণতা পরিহার করা উচিত। দেশেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে দক্ষ পরামর্শক তৈরি করা গেলে বিপুল অর্থব্যয়ে বিদেশ থেকে পরামর্শক আনার প্রয়োজন হতো না। আর উন্নয়ন সহযোগীরা চাইলেই পরামর্শক নেওয়া উচিত নয়, যে কথা খোদ পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রীও ইতঃপূর্বে বলেছেন। বস্তুত একেবারে অপরিহার্য না হলে বিদেশি পরামর্শক নেওয়া উচিত নয়। কারণ বিদেশি পরামর্শক অনেক সময় দেশের বাস্তবতার সঙ্গেও মেলে না।
বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে সংকট মোকাবিলায় সব ক্ষেত্রেই সাশ্রয়ী হওয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে যেসব প্রকল্পে বিদেশ থেকে পণ্য আমদানির প্রয়োজন হয়, সেগুলো বাস্তবায়নে এ মুহূর্তে ব্যয়সাশ্রয়ী পদক্ষেপ নেওয়াই সমীচীন। মনে রাখা দরকার, অনিয়ম-দুর্নীতি ও অপচয়ের কারণে সরকারের বিভিন্ন খাতে ব্যয় বেড়ে যায়। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। বস্তুত নতুন প্রকল্প গ্রহণে সতর্কতার পাশাপাশি চলমান প্রকল্পগুলো যেন নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যেই সম্পন্ন হয়, সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া দরকার। দেশে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন না হওয়া অনেকটা নিয়মে পরিণত হয়েছে। এতে প্রকল্পের ব্যয় কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায়, তৈরি হয় দুর্নীতির সুযোগ। কোনো প্রকল্প যথাসময়ে বাস্তবায়ন করা গেলে অনাবশ্যক ব্যয় যেমন হ্রাস পায়, তেমনই হ্রাস পায় জনদুর্ভোগও। কাজেই প্রকল্পে বাহুল্য ব্যয়, ধীরগতি, নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প সম্পন্ন না হওয়া, বাড়তি সময় নেওয়া-এ প্রবণতা রোধ করতে হবে কঠোরভাবে।
প্রকল্পে ঋণের টাকার অপচয় বন্ধ হওয়া উচিত
Leave a comment