By using this site, you agree to the Privacy Policy and Terms of Use.
Accept

প্রকাশনার ৫২ বছর

দৈনিক জন্মভূমি

পাঠকের চাহিদা পূরণের অঙ্গীকার

  • মূলপাতা
  • জাতীয়
  • আন্তর্জাতিক
  • রাজনীতি
  • খেলাধূলা
  • বিনোদন
  • জেলার খবর
    • খুলনা
    • চুয়াডাঙ্গা
    • বাগেরহাট
    • মাগুরা
    • যশোর
    • সাতক্ষীরা
  • ফিচার
  • ই-পেপার
  • ALL E-Paper
Reading: প্রকৃত ‌দেশপ্রেমিক নেতৃত্বের রাজনীতি কেন প্রয়োজন
Share
দৈনিক জন্মভূমিদৈনিক জন্মভূমি
Aa
  • মূলপাতা
  • জাতীয়
  • জেলার খবর
  • ই-পেপার
অনুসন্ধান করুন
  • জাতীয়
  • জেলার খবর
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলাধূলা
  • বিনোদন
  • ই-পেপার
Have an existing account? Sign In
Follow US
প্রধান সম্পাদক মনিরুল হুদা, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত
দৈনিক জন্মভূমি > জেলার খবর > সাতক্ষীরা > প্রকৃত ‌দেশপ্রেমিক নেতৃত্বের রাজনীতি কেন প্রয়োজন
তাজা খবরসাতক্ষীরা

প্রকৃত ‌দেশপ্রেমিক নেতৃত্বের রাজনীতি কেন প্রয়োজন

Last updated: 2025/12/02 at 12:37 PM
জন্মভূমি ডেস্ক 1 hour ago
Share
SHARE

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : এ যুগ গণতন্ত্রের। তবে গণতন্ত্র মুখে যত সহজে বলা যায়, কার্যে পরিণত করা তত সহজ নয়। ‘গণ’ শব্দের বহু অর্থ আছে। ‘গণ’ অর্থে জনগণ, আবার ‘গণ’ মানে সমষ্টিও বুঝায়। ‘গণ’ শব্দের অন্য অর্থ সেনা। আবার আধ্যাত্মিক দৃষ্টিতে ‘গণ’ শব্দটির অর্থ হচ্ছে ইন্দ্রিয়। সে কারণেই গণতন্ত্রে যারা নেতা বা নায়ক হবেন তাদের রিপু ও ইন্দ্রিয় অসংযত ও উচ্ছৃঙ্খল হলে গণতন্ত্র রক্ষা অসম্ভব। তাছাড়া গণতন্ত্রে আরো একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, জনগণ গণ-প্রতিনিধি বলে যাকে সাব্যস্ত করবে, সেই ব্যক্তি শুধু অনুমোদন দেবেন। অনুমোদনের বাইরে তার দিক থেকে বিশেষ কোনো বক্তব্য রাখা চলবে না। তিনি যদি দেশ ও জাতির সেবায় আত্মোৎসর্গ করতে প্রস্তুত থাকেন তাহলেই তিনি গণতন্ত্রের বাহক। সে কারণেই গণ-প্রতিনিধিকে সামাজিক নেতা বলা হয়ে থাকে, যিনি নিজের জন্য ভাববেন না, ত্যাগ যার জীবনের ব্রত, জনগণের শোক-দুঃখে যিনি উতলা হবেন। গণতন্ত্রের দন্ড তার হাতেই শোভা পায়্।
এখন আসা যাক রাজনীতি ও রাজনীতিবিদ প্রসঙ্গে। রাজ শব্দে আছে স্বরাজ, গণ শব্দের সমষ্টিগত রূপ। ওই স্বরাজ সমষ্টির চরিত্রগত আদর্শ ও কল্যাণকর নিয়ম-শৃঙ্খলা কী হওয়া উচিত এবং সেসব নিয়ম-নীতি মেনে চলার বিধি-নিষেধ কী হওয়া প্রয়োজন সেটা রাজনীতি। আর সেই সব জ্ঞানপুষ্ট ব্যক্তিই রাজনীতিবিদ। তবে রাজনীতিবিদ মাত্রেই যে গণ-প্রতিনিধি হবেন তা নয়। গণ-প্রতিনিধি জনগণের দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধি। কিন্তু রাজনীতিবিদ রাষ্ট্রের কল্যাণ কামনায় রত স্বাধীন সত্তাভুক্ত সুনীতিদাতা। আমরা যদি অতীত ইতিহাস পর্যালোচনা করি তাহলে দেখি আগেকার দিনে নেতাদের মধ্যে প্রচুর দেশপ্রেম ছিল আর ছিল মানুষের সেবা করার মনোভাব ও মানসিকতা।
চেতনা যখন কোনো দেশের ব্যষ্টিক ও সামষ্টিক জীবনে উদারতা ও পবিত্রতার মহাভাব জাগ্রত করে তখন সেই ভাবাদর্শ হতে ক্রমশ রাষ্ট্রোদ্ধার, জাতিগঠন ও সমাজ সংস্কারের প্রেরণা ও উদ্যম-উৎসাহ জাগ্রত হয়ে ওঠে। তাই রাষ্ট্রচেতনাই প্রকৃত রাজনীতিবিদ তৈরি করে। সাময়িক জোড়াতালি দিয়ে কোনো রাষ্ট্রের সংগঠন বা ঐক্য দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে না। আমরা যদি কাজী নজরুল ইসলাম বা রবীন্দ্রনাথের স্বদেশপ্রেম নিয়ে আলোচনা করি তাহলে দেখব, তারা আত্মিক চেতনা অনুভব করে সমাজ রচনার কথা বলে গেছেন।
বলতে হয়, প্রাক-স্বাধীনতা ও তার আগের সময়ের রাজনীতিবিদদের চিন্তা-চেতনা ও দেশপ্রেম বর্তমানে এবং সমাজের প্রকৃত রাজনীতিবিদ তৈরিতে প্রতিবন্ধক হওয়ার কারণ হয়তো দেশের বেশিরভাগ জনগণের কারণেই। ফলে প্রকৃত রাজনীতিবিদ সংসদীয় গণতন্ত্রের মন্ডলীতে খুব কম সংখ্যক আসছেন। তাই বলে রাজনীতিবিদ যে এ দেশে এখন আর বেশি সংখ্যায় জন্মগ্রহণ করেন না, তা বলাটা যুক্তিসঙ্গত নয়। রাজনীতিবিদ আছেন। গণতন্ত্রের মহান আদর্শ অনুধাবন করে যোগ্য ব্যক্তিকে মনোনয়ন করাতে সক্ষম হলেই রাজনীতি ও রাজনীতিবিদদের আত্মপ্রকাশ হবে। সচেতন জনগণ দেখতে পাচ্ছে বর্তমান বহু দলীয় সংগঠনগুলোর দেশপ্রেমের নমুনা। ওই সংগঠনগুলোর বেশিরভাগের পরিচয় রাজনৈতিক হলেও প্রকৃত রাজনীতির মূলনীতি অনেকেই মেনে চলে না। সে কারণেই বহুদলীয় রাজনীতির প্রতি মানুষের শ্রদ্ধাবোধ কমে আসছে।
রাজা না থাকলেও একালে রাজ স্বরূপ সংসদ আছে। সংসদই রাজনীতির ধ্বজা বহন করছে। ওই সংসদেই রাজনীতিবিদরা রাষ্ট্রের সুশাসনের নিমিত্তে সুচিন্তিত মত প্রদান করবেন। সরকার পক্ষেরই হোক বা সরকার-বিরোধী পক্ষের হোক যারাই জনপ্রতিনিধিত্ব করছেন, তারা কিন্তু কেউই ব্যক্তি হিসাবে সংসদে উপস্থিত থাকেন না। তারা নির্বাচিত প্রতিনিধি। অর্থাৎ জনগণের প্রতিনিধিত্ব করেন। তাদের চিন্তা-চেতনা এবং মুখনিঃসৃত বাক্য ব্যক্তি বা দলকেন্দ্রিক হতে পারে না, যদি তারা সত্যিকার রাজনীতিবিদ হন। যে রাজনীতিবিদদের প্রাচীনকালে মন্ত্রীমন্ডলী ত্যাগী, নিঃস্বার্থবাদী ও ঋষিতুল্য বলে গণ্য করা হতো, সেইসব ব্যক্তিরই বিধি-বিধান ও অনুশাসনেই পরিচালিত হতো রাজতন্ত্র। তাদের রিপু ও ইন্দ্রিয় সংযত ও সুশৃঙ্খল ছিল। কিন্তু আজ সংসদের চিত্রটা কী? সত্যের মূল কেন্দ্রবিন্দু স্বরূপ সংসদে দাঁড়িয়ে আত্মকেন্দ্রিক স্বাধীনতা কি সমষ্টিগত স্বাধীনতার অমর্যাদা করছে না? প্রতিটি মুহূর্ত যেখানে রাষ্ট্রের দিকদর্শন ঘটাতে অতি প্রয়োজনীয়, সেখানে মুহূর্তকে কষাঘাত করা হচ্ছে না?
গণতন্ত্রে বিরোধী পক্ষ শত্রু পক্ষ নয়। বিরোধী নাম থাকলেও সংসদে তারা মিত্রপক্ষ। কারণ, সরকারের ভুল-ত্রুটির দিকদর্শন করে বিরোধী পক্ষ। সে কারণে গণতন্ত্রকে ধরে রাখে বিরোধী পক্ষ। বিরোধী পক্ষ কখনও শত্রুপক্ষ হতে পারে না, এটা সঠিক গণতন্ত্র নয়। এ ব্যাপারে সরকারি দলের ভূমিকাই বেশি হওয়া উচিত। প্রকৃত রাজনীতিবিদ না-হয়ে গণতন্ত্র রক্ষার ভুয়ো প্রতিশ্রুতি দিয়ে যারা নিজ থেকে জনপ্রতিনিধি হতে চান এবং বিভেদের রাজনীতি বা কৌশলে জয়ী হয়ে যান, তাদের দ্বারা রাষ্ট্রের উন্নতি হয় না।
বর্তমান রাজনীতি হলো প্রচারসর্বস্ব দলীয় রাজনীতি। সাধারণ জনগণের পক্ষে বোধগম্য হওয়াও কঠিন। সে কারণেই জনগণ অনেক সময় দিকভ্রষ্ট হয়ে পড়ে। নির্বাচন প্রহসন হয়ে দাঁড়ায়। আরো একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, বহুদলীয় রাজনীতির আঁতাত বর্তমানে জনগণকে আরো বিভ্রান্ত করছে। কোনো দলকে যদি জনগণ সমর্থন করে থাকে এবং ওই দলের কোনো প্রার্থীকে যদি নির্বাচন করে জয়ী করে থাকে, তাহলে ওই দল এবং প্রার্থী কোনো কারণে কোনো দলের সঙ্গে আঁতাত করতে গেলে দল সমর্থিত জনগণের মতামত নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। কারণ, যে দলের সঙ্গে আঁতাত করতে যাবে দল, সেই দলের প্রতি সমর্থিত জনগণের সমর্থন না-ও থাকতে পারে। কারণ, জনগণের দল সমর্থন পুরো মানসিক ব্যাপার। কিন্তু দেখা যাচ্ছে দলের ইচ্ছামতো আঁতাতে জনগণ মানসিক আঘাত পাচ্ছে। জনগণের সমর্থন আছে কি না, তা যাচাই না-করে দলীয় নেতারা দলের স্বার্থ দেখিয়ে জনমতকে বিভ্রান্ত করছেন। তাই অতীতে রাজনীতিতে ভালো ফল করতে পারেনি বলে অসংখ্য বহুদলীয় রাজনীতি দিন দিনই পিছনের দিকে যাচ্ছে।
এটা সত্য, আমাদের দেশের গণতন্ত্রে একটা বড় পরিবর্তন আসছে। সংসদীয় গণতন্ত্র নিজের অবস্থান একদিন স্পষ্ট করবেই রাষ্ট্রের খাতিরে, গণতন্ত্রের খাতিরে। বর্তমান স্বার্থপর রাজনীতির দিনকাল বোধ হয় শেষ হয়ে আসছে।
দেশকে ভালবাসা মানুষের জন্মগত প্রবৃত্তি। সচেতন না থাকলেও এটা মানুষের হৃদয়ের গভীরে সুপ্ত থাকে। দেশের অপমান, দেশবাসীর দুঃখ-দৈন্যে, দেশের দুর্বিষহ পরিস্থিতিতে কিংবা দেশকে নিয়ে ষড়যন্ত্র হলে, দেশকে উপহাস বা কটাক্ষ করলে এ অনুভূতি জেগে উঠে। যেমন ১৯৭১ সালে এ দেশের হাজার হাজার তরুণ গেরিলা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে। প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিল অকাতরে। দেশের মাটি ও মানুষের জন্যে গভীর মমতা না থাকলে এটা কোনদিন সম্ভব হতো না। মনীষী জ্যাকসন বলেছেন, ‘যে মায়ের সন্তান দেশের জন্যে জীবন দিয়েছে, তার মাতৃত্বের গৌরব চিরভাস্বর।’ দেশপ্রেম থাকা চাই বৈদেশিক আগ্রাসনকে প্রতিহত করার জন্যে। ইতিহাস বার বার এটাই প্রমাণ করেছে, একটা দেশপ্রেমিক জাতি শত্রুর কাছে কখনও পরাজিত হয় না। সে জাতির অন্তরে জ্বলতে থাকে দেশপ্রেমের আগুন অনির্বাণ শিখার ন্যায়। সারা পৃথিবীর মায়া-মমতা, স্নেহ সব একত্রিত করলেও যেমন মায়ের অকৃত্রিম স্নেহের সঙ্গে তুলনা করা যায় না তেমনি সারা পৃথিবীর ঐশ্বর্য-বৈভব ও সৌন্দর্যের সঙ্গে নিজ দেশের কোন তুলনা হতে পারে না। নবীশ্রেষ্ঠ হযরত মুহম্মদ (সা.) বলেছেন, দেশপ্রেম ঈমানেরই অঙ্গ। মানুষ দেশপ্রেমের মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়েই তার আপন জীবনকে বিলিয়ে দিতে পারে। মহৎ প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আলিঙ্গন করতে পারে মৃত্যুকে। কবি বলেছেন, ‘তুমি দেশকে যথার্থ ভালবাস তার চরম পরীক্ষা, তুমি দেশের জন্য মরতে পার কি-না।’ কোথায় যেন পড়েছিলাম, ‘দেশপ্রেম বাইরের কোন প্রদর্শনীর বস্তু নয়, দেশপ্রেম মানুষের অন্তরস্থিত ভক্তি শ্রদ্ধায় গড়া। কবি তার কাব্যে, দেশকর্মী তার সমাজসেবায়, গায়ক তার গানে, শিল্পী তার ছবিতে, বৈজ্ঞানিক তার বিজ্ঞান চর্চায়, শিক্ষক তার একনিষ্ঠ শিক্ষকতায় দেশপ্রেমের পরিচয় প্রদান করতে পারেন।’ মনীষী ওয়ালেস রাইস বলেছেন, বুদ্ধিজীবীর কাছে তার দেশ ও সেবিকার কাছে তার রোগীর একই ভূমিকা হওয়া উচিত। শুধু সংগ্রামী রূপ ধারণ করেই আবির্ভূত হয় না দেশপ্রেম, সত্যিকার দেশপ্রেম হচ্ছে দেশকে গড়ে তোলার এক নিরন্তর সাধনা। দেশের সচেতন নাগরিকদের কারো অজানা নয় যে, স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করাটাই কঠিন। দেশকে স্বনির্ভর করে গড়ে তোলাটাই দেশবাসীর লক্ষ্য হওয়া উচিত। রাজনৈতিক স্বাধীনতার সাথে সাথে অর্থনৈতিক স্বাধীনতার স্বপ্নকে সফল করে তোলাও দেশপ্রেমিকের পবিত্র দায়িত্ব। মনীষী জিপি হল্যান্ডের ভাষায়, যদি মৃত্যুহীন হতে চাও তবে তোমাকে সৎভাবে দেশের জন্য কাজ করে যেতে হবে। মনীষী এডওয়ার্ড ইয়ং তাঁর অভিজ্ঞতা থেকে বলেছেন, দেশকে এবং দেশের মানুষকে ভালবাসতে পারলে জীবন সুখ ও শান্তিময় হয়ে ওঠে। দেশের প্রতি গভীর ভালবাসা, গভীর মমত্ববোধ থেকেই মনীষী সিডলী স্মিথ বলেছেন, আমি আমার নিজের দেশে দরিদ্র হিসেবে জীবন কাটাতে চাই, অন্য দেশে সম্পদশালী হয়ে জীবন কাটাতে আমি বিন্দুমাত্র আগ্রহী নই। দেশের প্রতি গভীর ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ আমরা দেখতে পাই মনীষী পি জে বেইলির কথায়। তিনি বলেছেন, আমার দেশ আমার নিকট বড় এবং স্বাধীন দেশ আমার হৃদপিন্ডের মতো, আমার ঠোঁট তাই এর প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
একথাও সত্য যে, প্রকৃত দেশপ্রেমিক ব্যক্তি কখনও সংকীর্ণ মনের পরিচয় দিতে পারে না। নিজের দেশকে মনে প্রাণে ভালবাসা মানে অন্যদেশের প্রতি শত্রুতা নয়। কাজেই একজন দেশপ্রেমিককে সমগ্র বিশ্বের সঙ্গে সহমর্মিতাবোধ জাগ্রত রেখেই নিজের দেশকে ভালবাসতে হবে। মনে রাখতে হবে, প্রকৃত দেশপ্রেম নিজের মধ্যে আবদ্ধ না রেখে বৃহৎ পৃথিবীর মাঝে নিজকে ছড়িয়ে দেয়। মনীষী ডি স্টায়েল এর বানী হচ্ছে, ‘অন্যের দেশকে যত বেশি করে দেখা যায়, নিজের দেশের প্রতি মানুষের ভালবাসাটা ততই বেড়ে যায়।’ মনীষী জর্জ রোর ভাষায়, কখনো বিদেশ যায়নি সে কখনো দেশের মমত্ব বুঝতে পারে না।
একজন সাংবাদিক ও লেখক হিসেবে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি যেভাবে তুলে ধরি না কেন, নৈতিক অবক্ষয় সর্বত্র হতাশা, অপহরণ, ছিনতাই, হত্যা, ধর্ষণ, দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন উর্ধ্বগতি নিয়ে যতই সোচ্চার হই না কেন, রাজনৈতিক দলগুলো যতই জনগণকে স্বপ্ন দেখাবার চেষ্টা করুক না কেন, নির্বাচনে জয়যুক্ত হয়ে রাজনৈতিক দলগুলো অনেক কিছু করার যতই আশ্বাস প্রদান করুক না কেন, তাতে আমরা আশার কোনো আলো দেখি না। আমাদের শঙ্কা রাজনৈতিক দলগুলো পরস্পরকে দোষারোপ করে কাঁদা ছোড়াছোড়ির মাধ্যমে আমাদের এ প্রিয় দেশের বারোটা বাজিয়ে দিতে পারে। কারণ সত্যিকার অর্থে আমাদের মধ্যে দেশপ্রেমের বড়ই অভাব। আমার এ কথায় কেউ বা মনোক্ষুণœ হতে পারেন, কেউবা বলতে পারেন আমরা কি দেশকে ভালবাসি না? অবশ্যই আমরা সবাই দেশকে ভালবাসি। তবে দেশের প্রতি আমাদের ভালবাসাটা কেমন, কতটুকু তা একটু আলোচনা করলেই বুঝা যাবে। দেশের প্রতি আমাদের ভালবাসা রয়েছে এমন একটা মনোভাবকে হৃদয়ে ধারণ করেই আমরা দেশে বসবাস করি। কিন্তু সত্যিকার অর্থে দেশের প্রতি আমাদের কোনও মমত্ববোধ আছে কি? আমরা কি দেশের উপকার-অপকার, লাভ-ক্ষতি, সুনাম-দুর্নাম, শত্রু-মিত্র ইত্যাদি নিয়ে বিন্দুমাত্র চিন্তা করি?
আমি ব্যক্তিগতভাবে রাজনীতি করি না এবং কোন উচ্চাভিলাষও আমার নেই। তবে আমি রাজনীতি সচেতন। এটা কারো অজানা নয়, বর্তমানে যারা সরকারি দলে তারা এক সময় বিরোধী দলে ছিলেন আর যারা বর্তমান বিরোধী দলে তারা ছিলেন সরকারি দলে। বর্তমান সরকারি দল ভবিষ্যতে হয়তো পুনরায় বিরোধী দলের ভূমিকা নিতে পারে এবং বর্তমান বিরোধী দলকে জনগণ হয়তো আবার সরকার গঠনের সুযোগ দিতে পারে। তাই ক্ষয়-ক্ষতির বর্ণনা কোন পক্ষ-বিপক্ষের হতে পারে না। তবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি বা রাজনৈতিক অস্থিরতার মাধ্যমে দেশের বিপুল ক্ষতি সাধন হয় এ সত্যকেও আমরা অস্বীকার করতে পারি না। অশিক্ষিত বা অল্প শিক্ষিতরা অনুধাবন করতে না পারলেও জ্ঞানীপাপীরা বুঝে না বুঝার ভান করলেও রাজনীতিবিদরা এ বিপুল ক্ষয়-ক্ষতির গুরুত্ব প্রদান না করলেও, দেশের সচেতন নাগরিকরা বুঝতে পারে, যে কোন রাজনৈতিক দলের অন্যায় জেদ, ক্ষমতালিপ্সা অথবা ধ্বংসাত্মক ও অপরিণামদর্শী কাজ অপূরণীয় ক্ষতি ছাড়া দেশের কোনো কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না। এ পরম সত্যটি আমাদের দেশের সর্বস্তরের জনগণ তখনই অনুধাবন করতে পারবে যখন তারা সত্যিকার অর্থে দেশপ্রেম উদ্বুদ্ধ হবে, দেশকে মনেপ্রাণে ভালবাসতে পারবে। মনীষী ব্রাউনিং বলেছেন, ‘একমাত্র নিজের দেশকেই অন্ধের মতো ভালবাসা যায়।’ মনীষী ভার্জিলের ভাষায়, ‘সে সবচেয়ে সুখী যে নিজের দেশকে স্বর্গের মতো ভালবাসে’। জাতীয় কবি নজরুলের ভাষায়, ‘দেশকে ভাল না বাসলে তাকে ভাল করে জানার ধৈর্য থাকে না, আর, দেশকে না জানলে ভাল করতে চাইলেও ভাল করা যায় না।
সফল কূটনীতিক ও রাজনীতিবিদ হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী এ নশ্বর পৃথিবী থেকে হারিয়ে গেছেন বেশ ক’বছর আগে। তিনি আজ আর আমাদের মধ্যে নেই। সেদিন এক লেখায় দেখলাম হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী সম্পর্কে লিখতে গিয়ে একজন লেখক একটি অংশে উল্লেখ করেছেন, চৌধুরী সাহেব যখন জীবিত ছিলেন তখন তিনি প্রচুর সভা সমিতিতে যেতেন। অনেক সময় জনগণের চাপে বাধ্য হয়েই যেতে হতো। প্রতিটি অনুষ্ঠানেই তিনি বলতেন কম, শুনতেন বেশি। আর অল্প কথায় যা বলতেন, তা ছিল মাস্টারপিস। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অথবা গবেষণাধর্মী কোনো প্রতিষ্ঠানে গেলে তিনি মানুষ হওয়ার কথা বলতেন, শেকড়ের উৎস খুঁজতে বলতেন, আর বলতেন দেশকে ভালবাসতে। চৌধুরী সাহেব সম্পর্কে লেখার এ অংশটি পড়ে মুগ্ধ হয়েছি। চৌধুরী সাহেবের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল চমৎকার। তিনি আমাকে ভালবাসতেন, আদর করতেন; আমিও তাঁকে গভীর শ্রদ্ধা করতাম। তার সঙ্গে কথা হলে তিনি প্রায়ই দেশের সার্বিক হাল-অবস্থা নিয়ে আলোচনা করতেন। উন্নয়নের কথা বলতেন। তার মধ্যে সত্যি সত্যি দেশপ্রেম ছিল, যা আমি অন্তর দিয়ে অনুভব করতে সক্ষম হয়েছি। আজকাল দেশকে ভালবাসার প্রতি কাউকে উৎসাহিত অনুপ্রেণিত করতে দেখি না। রাজনীতিবিদরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাদের দলের কথা বলেন। গুণকীর্তন করতে থাকেন তাদের দলনেতার। স্কুল, কলেজে যদিও দেশপ্রেমের উপর ছাত্র-ছাত্রীদের রচনা লিখতে বলা হয় তা শুধু লেখার জন্য লেখা। গ্রোথিত হয় না। শুধু ছাত্র-ছাত্রীদের নয়, দেশপ্রেম আমাদের কারো মনকে নাড়া দেয় না। দেশের প্রতি মমত্ববোধ আমাদের আবেগপ্রবণ করে না। আমাদের দেশে আজ চৌধুরী সাহেবের মতো লোকের বড় বেশি প্রয়োজন অনুভব করি। তিনি সব সময়ই আমাদেরকে দেশের প্রতি মমত্ববোধ জাগ্রত করার কথা বলতেন। ছাত্র-ছাত্রীদের রাজনীতি না করে নিজেদের পড়াশুনায় মনোনিবেশ করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হয়ে দেশ গড়ার পরামর্শ দিতেন। দেশকে ভালবাসার কথা বলতেন, আমাদেরকে প্রকৃত মানুষ হওয়ার উপদেশ দিতেন, আমাদের মনুষ্যত্ববোধকে জাগিয়ে তোলার কথা বলতেন।
দেশের উপকারে যিনি নিবেদিতপ্রাণ, তিনিই প্রকৃত মানুষ। পক্ষান্তরে দেশপ্রেমহীন আত্মকেন্দ্রিক যিনি, তিনি নিঃসন্দেহে অধমের সমান। সমাজ জীবনে প্রতিনিয়ত এহেন মূর্খের মতো বিবেকবর্জিত অমানুষ দেখতেন বলেই হয়তো দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ আমাদের পূর্বসুরি রাজনৈতিক নেতারা প্রথমে মানুষ হওয়ার কথাই বলতেন। কিন্তু সে আদর্শবান পুরুষ বা রাজনৈতিক নেতা আজ আর আমাদের মধ্যে নেই। তাই তাঁদের মূল্যবান কথাগুলো স্মরণীয় ও বরণীয় বাণীতে পরিণত হয়েছে। আমরা সবাই নিজেদের যতই লেখক, জ্ঞানী, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক বা সচেতন নাগরিক হিসাবে দাবি করি না কেন, আমাদের উচিত হবে আমাদের চিন্তা-চেতনায় সে সব ব্যক্তিত্বকে বাঁচিয়ে রাখা, তাঁদেরকে স্মরণ করা।
দেশের সদাপ্রহরী হচ্ছে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ রাজনীতিবিদরা। রাজনীতিবিদদের প্রথম এবং প্রধান শর্তই হল দেশপ্রেম। আমাদের দেশে বিভিন্ন দলের অনেক রাজনীতিবিদ মহত্তর, বৃহত্তর কল্যাণ বোধ থেকে ভ্রষ্ট। দেশের রাজনীতিবিদদের কাছে অনেক ক্ষেত্রেই দলীয় স্বার্থই প্রধান হয়ে দেখা দেয়। দেশের সকল রাজনীতিবিদকে কথায় ও কাজে সত্যিকার অর্থে দেশপ্রেমিক হতে হবে। রাজনীতিবিদদের সার্বিক কর্মকান্ডের উপরেই এ দেশের ভবিষ্যত নির্ভরশীল। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি রাজনীতিতে ব্যবসা বা পেশা হিসাবে নয়, সেবা হিসাবে নিতে পারলেই দেশের বর্তমান ভয়াবহ অবস্থার অবসান হবে। দেশের মঙ্গলে দেশের সকল নাগরিকেরও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে হবে। দেশকে প্রাণাধিক ভালবাসতে হবে এবং শুধু ভালবাসার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবেনা, দেশ সেবায় ব্রতী হতে হবে, দেশপ্রেমকে অনড় বিশ্বাসে পরিণত করতে হবে।
দেশকে ভালবাসা মানুষের জন্মগত প্রবৃত্তি। আমরা এ সম্পর্কে সচেতন না থাকলেও এটা আমাদের হৃদয়ের গভীরে সুপ্ত থাকে। দেশের অপমান, দেশবাসীর দুঃখ-দৈন্যে, দেশের দুর্বিষহ পরিস্থিতিতে, দেশকে নিয়ে ষড়যন্ত্র হলে, দেশকে নিয়ে কেউ উপহাস বা কটাক্ষ করলে এ অনুভূতি জেগে উঠে। ১৯৭১ সালে দেশের হাজার হাজার তরুণ যুদ্ধ ঝাঁপিয়ে পড়েছিল দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে। প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিল অকাতরে শত শত যুবক। মাটি ও মানুষের জন্যে গভীর মমতা না থাকলে এটা কোনোদিন সম্ভব হতো না। মনীষী জ্যাকসন বলেছেন, ‘যে মায়ের সন্তান দেশের জন্যে জীবন দিয়েছে, তার মাতৃত্বের গৌরব চির ভাস্বর।’ দেশপ্রেম থাকা চাই বৈদেশিক আগ্রাসনকে প্রতিহত করার জন্যে। ইতিহাস বার বার এটাই প্রমাণ করেছে যে, দেশপ্রেমিক জাতি শত্রুর কাছে কখনও পরাজিত হয় না। সে জাতির অন্তরে জ্বলতে থাকে দেশপ্রেমের আগুন অনির্বাণ শিখার ন্যায়। সারা পৃথিবীর মায়া-মমতা, স্নেহ সব একত্রিত করলেও যেমন মায়ের অকৃত্রিম স্নেহের সঙ্গে তুলনা করা যায় না তেমনি সারা পৃথিবীর ঐশ্বর্য-বৈভব ও সৌন্দর্যের সঙ্গে নিজ দেশের কোনো তুলনা হতে পারে না। আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘দেশপ্রেম ঈমানেরই অঙ্গ’। দেশপ্রেমের মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়েই মানুষ তার আপন জীবনকে বিলিয়ে দিতে পারে। মহৎ প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ এবং আলিঙ্গন করতে পারে মৃত্যুকে। কবি বলেছেন, ‘তুমি দেশকে যথার্থ ভালবাস তার চরম পরীক্ষা, তুমি দেশের জন্য মরতে পার কি-না।’ কোথায় যেন পড়েছিলাম, ‘দেশপ্রেম বাইরের কোনো প্রদর্শনীর বস্তু নয়, দেশপ্রেম মানুষের অন্তরস্থিত ভক্তি-শ্রদ্ধায় গড়া। কবি তার কাব্যে, দেশকর্মী তার সমাজসেবায়, গায়ক তার গানে, শিল্পী তার ছবিতে, বৈজ্ঞানিক তার বিজ্ঞান চর্চায়, শিক্ষক তার একনিষ্ঠ শিক্ষকতায় দেশপ্রেমের পরিচয় প্রদান করতে পারেন।’ মনীষী ওয়ালেস রাইস বলেছেন, ‘বুদ্ধিজীবীর কাছে তার দেশ ও সেবিকার কাছে তার রোগীর একই ভূমিকা হওয়া উচিত।’
শুধু সংগ্রামী রূপ ধারণ করেই আবির্ভূত হয় না দেশপ্রেম। সত্যিকার দেশপ্রেম হচ্ছে দেশকে গড়ে তোলার সাধনা করা। দেশের সচেতন নাগরিকদের কারো অজানা নয় যে, ‘স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করাটাই কঠিন।’ দেশকে স্বনির্ভর করে গড়ে তোলাটাই দেশবাসীর লক্ষ্য হওয়া উচিত। রাজনৈতিক স্বাধীনতার সাথে সাথে অর্থনৈতিক স্বাধীনতার স্বপ্নকে সফল করে তোলাও দেশপ্রেমিকের পবিত্র দায়িত্ব। মনীষী জি পি হল্যান্ডের ভাষায়, ‘যদি মৃত্যুহীন হতে চাও তবে তোমাকে সৎভাবে দেশের জন্য কাজ করে যেতে হবে।’ মনীষী এডওয়ার্ড ইয়ং তাঁর অভিজ্ঞতা থেকে বলেছেন, দেশকে এবং দেশের মানুষকে ভালবাসতে পারলে জীবন সুখ ও শান্তিময় হয়ে ওঠে। দেশের প্রতি গভীর ভালবাসা, গভীর মমত্ববোধ থেকেই মনীষী সিডলী স্মিথ বলেছেন, আমি আমার নিজের দেশে দরিদ্র হিসাবে জীবন কাটাতে চাই, অন্য দেশে সম্পদশালী হয়ে জীবন কাটাতে আমি বিন্দুমাত্র আগ্রহী নই। দেশের প্রতি গভীর ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ আমরা দেখতে পাই মনীষী পি জে বেইলীর কথায়। তিনি বলেছেন, আমার দেশ আমার নিকট বড় এবং স্বাধীন দেশ আমার হৃদপিন্ডের মতো, আমার ঠোঁট তাই এর প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
একথাও সত্য যে, প্রকৃত দেশপ্রেমিক ব্যক্তি কখনও সংকীর্ণ মনের পরিচয় দেন না। নিজের দেশকে মনে প্রাণে ভালবাসা মানে অন্যদেশের প্রতি শক্রতা নয়। কাজেই একজন দেশপ্রেমিককে সমগ্র বিশ্বের সঙ্গে সহমর্মিতাবোধ জাগ্রত রেখেই নিজের দেশকে ভালবাসতে হবে। মনে রাখতে হবে, প্রকৃত দেশপ্রেম নিজের মধ্যে আবদ্ধ না রেখে বৃহৎ পৃথিবীর মাঝে নিজকে ছড়িয়ে দেয়। মনীষী ডি স্টায়েল এর বাণী হচ্ছে, ‘অন্যের দেশকে যত বেশি করে দেখা যায়, নিজের দেশের প্রতি মানুষের ভালবাসাটা ততই বেড়ে যায়।’ মনীষী জর্জ রো-র ভাষায়, যে কখনো বিদেশ যায়নি সে কখনো দেশের মমত্ব বুঝতে পারে না।
একজন সাংবাদিক ও লেখক হিসাবে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি যেভাবে তুলে ধরি না কেন, নৈতিক অবক্ষয়, সর্বত্র হতাশা, অপহরণ, ছিনতাই, হত্যা, ধর্ষণ, দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি নিয়ে যতই সোচ্চার হই না কেন, রাজনৈতিক দলগুলো যতই জনগণকে স্বপ্ন দেখাবার চেষ্টা করুক না কেন, নির্বাচনে জয়যুক্ত হয়ে রাজনৈতিক দলগুলো অনেক কিছু করার যতই আশ্বাস প্রদান করুক না কেন, তাতে আমরা কোনো সুফল আশা করতে পারি না বরং রাজনৈতিক দলগুলো পরস্পরকে দোষারোপ করে কাঁদা ছোড়াছোড়ির মাধ্যমে আমাদের এ প্রিয় দেশের বারোটা বাজিয়ে দিতে পারবে এটা নিঃসংকোচে বলা যায়। কারণ সত্যিকার অর্থে আমাদের মধ্যে দেশপ্রেমের বড়ই অভাব। আমার এ কথায় কেহ বা মনোক্ষুন্ন হতে পারেন, কেউবা বলতে পারেন আমরা কি দেশকে ভালবাসি না? অবশ্যই আমরা সবাই দেশকে ভালবাসি। তবে দেশের প্রতি আমাদের ভালবাসাটা কেমন, কতটুকু তা একটু আলোচনা করা দরকার। দেশের প্রতি আমাদের ভালবাসা রয়েছে এমন একটা মনোভাবকে হৃদয়ে ধারণ করেই আমরা দেশে বসবাস করি। কিন্তু সত্যিকার অর্থে দেশের প্রতি আমাদের কোনও মমত্ববোধ আছে কি? আমরা কি দেশের উপকার-অপকার, লাভ-ক্ষতি, সুনাম-দুর্নাম, শক্র-মিত্র ইত্যাদি নিয়ে বিন্দুমাত্র চিন্তা করি? গেল ক‘বছরে হরতালের পক্ষ-বিপক্ষ নিয়ে অনেক কথা হয়েছে, এমনকি অনেক লেখালেখি হয়েছে, আজও হচ্ছে। কেউ কেউ বলেছেন, হরতাল রাজনৈতিক প্রতিবাদের একটি উপায় ও কৌশল। এক পত্রিকায় একজন লেখকের লেখায় দেখলাম, হরতাল গণতান্ত্রিক অধিকার হিসাবে স্বীকৃত। আমি একটু দ্বিমত পোষণ করে বলি, হরতাল উপনিবেশিক জামানায় এবং বিদেশি শাসকদের বেলায় শক্তিশালী অস্ত্র ছিল। নিজের দেশের বেলায় বিশ্বায়নের যুগে তা পুরাতন ধ্যান-ধারণা। হরতাল জাতীয় অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের রক্ত ক্ষরণের মাধ্যমে দেশের প্রচুর ক্ষতি করে। এ ক্ষতির বোঝা জাতিকে বহন করতে হয়, হরতালকারী রাজনৈতিক দলকে নয়। হরতাল, অবরোধ, জ্বালাও-পোড়াও, গাড়ি ভাংচুর, উগ্র মিটিং, মিছিলের সংস্কৃতি আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে বিদায় করতে হবে। প্রতিটি হরতালের বদলে মানববন্ধন, গণ অনশন শান্তিপূর্ণভাবে পালন করে অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া যায়।
হরতালে শুধু দেশের সম্পদ নয় অনেক সময় এতে অনেকের জীবনেরও অবসান ঘটেছে। এছাড়াও হরতালের কারণে আর্থিক লেনদেন প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার ফলে অপূরণীয় ক্ষতি হয়। এখানে একটি কথা বলে রাখা প্রয়োজন মনে করছি যে, হরতালের লাভ-লোকসানের বর্ণনা করতে গিয়ে আমি কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষ সমর্থন করছিনা। আমি ব্যক্তিগতভাবে রাজনীতি করি না এবং কোনো উচ্চাভিলাষও আমার নেই। তবে আমি রাজনীতি সচেতন। এটা কারো অজানা নয় যে, বর্তমানে যারা সরকারি দলে তারা এক সময় বিরোধী দলে ছিলেন আর বর্তমানে যারা বিরোধী দলে এক সময় তারা ছিলেন সরকারি দলে। বর্তমান সরকারি দল ভবিষ্যতে হয়তো পুনরায় বিরোধী দলের ভূমিকা নিতে পারে এবং বর্তমান বিরোধী দলকে জনগণ হয়তো আবার সরকার গঠনের সুযোগ দিতে পারে। তাই হরতালের ক্ষয়-ক্ষতির বর্ণনা কোনো পক্ষ বিপক্ষের হতে পারে না। হরতাল প্রতিবাদের ভাষা একথাও যেমন সত্য, হরতাল দেশের বিপুল ক্ষতি সাধন করে এ সত্যকেও আমরা অস্বীকার করতে পারি না। রাজনীতিবিদরা এ বিপুল ক্ষয়-ক্ষতির গুরুত্ব প্রদান না করলেও দেশের সচেতন নাগরিকরা বুঝতে পারে, যে কোনো রাজনৈতিক দলের হরতাল আহ্বান জান ও মালের অপূরণীয় ক্ষতি ছাড়া দেশের কোনো কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না। এ পরম সত্যটি আমাদের দেশের সর্বস্তরের জনগণ তখনই অনুধাবন করতে পারবে যখন তারা সত্যিকার অর্থে দেশপ্রেম উদ্বুদ্ধ হবে, নিজের দেশকে মনেপ্রাণে ভালবাসতে পারবে। মনীষী ব্রাউনিং বলেছেন, ‘একমাত্র নিজের দেশকেই অন্দের মতো ভালবাসা যায়।’ মনীষী ভার্জিল এর ভাষায়, ‘সে সবচেয়ে সুখী যে নিজের দেশকে স্বর্গের মতো ভালবাসে।’ জাতীয় কবি নজরুলের ভাষায়, ‘দেশকে ভালো না বাসলে তাকে ভালো করে জানার ধৈর্য থাকে না, আর, দেশকে না জানলে ভালো করতে চাইলেও ভালো করা যায় না।’ মনীষী জর্জ ক্যানিং কলেছেন, ‘দেশের জন্যে এক বিন্দু রক্তদান করার মতো মহৎ কাজ আর কিছুতে নেই।’
আমাদের শ্রদ্ধাভাজন, প্রচার বিমুখ, সফল কূটনীতিক ও রাজনীতিবিদ হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী এ নশ্বর পৃথিবী থেকে হারিয়ে গেছেন ক’বছর আগে। তিনি আজ আর আমাদের মধ্যে নেই। সেদিন এক লেখায় দেখলাম হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী সম্পর্কে লিখতে গিয়ে একটি অংশে লেখক উল্লেখ করেছেন, চৌধুরী সাহেব যখন জীবিত ছিলেন তখন তিনি প্রচুর সভা-সমিতিতে যেতেন।

জন্মভূমি ডেস্ক December 2, 2025
Share this Article
Facebook Twitter Whatsapp Whatsapp LinkedIn Email Copy Link Print
Previous Article চুয়াডাঙ্গায় এক যুবককে গলা কেটে হত্যা
Next Article সাতক্ষীরায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ভোজন রসিকদের চুই ঝাল

দিনপঞ্জি

December 2025
S M T W T F S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031  
« Nov    
- Advertisement -
Ad imageAd image
আরো পড়ুন
তাজা খবরসাতক্ষীরা

সাতক্ষীরায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ভোজন রসিকদের চুই ঝাল

By জন্মভূমি ডেস্ক 6 minutes ago
তাজা খবরসাতক্ষীরা

প্রকৃত ‌দেশপ্রেমিক নেতৃত্বের রাজনীতি কেন প্রয়োজন

By জন্মভূমি ডেস্ক 1 hour ago
চুয়াডাঙ্গা

চুয়াডাঙ্গায় এক যুবককে গলা কেটে হত্যা

By জন্মভূমি ডেস্ক 5 hours ago

এ সম্পর্কিত আরও খবর

তাজা খবরসাতক্ষীরা

সাতক্ষীরায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ভোজন রসিকদের চুই ঝাল

By জন্মভূমি ডেস্ক 6 minutes ago
জাতীয়তাজা খবর

এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে নিরাপত্তা জোরদার, বসেছে ব্যারিকেড

By জন্মভূমি ডেস্ক 9 hours ago
তাজা খবরসাতক্ষীরা

সাতক্ষীরা ‌পাউবোর কর্মকর্তা আ’ লীগ ক্যাডার ইমরানের খুঁটির জোর কোথায়?

By জন্মভূমি ডেস্ক 9 hours ago

প্রতিষ্ঠাতা: আক্তার জাহান রুমা

প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক: হুমায়ুন কবীর বালু

প্রকাশনার ৫২ বছর

দৈনিক জন্মভূমি

পাঠকের চাহিদা পূরণের অঙ্গীকার

প্রতিষ্ঠাতা: আক্তার জাহান রুমা

প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক: হুমায়ুন কবীর বালু

রেজি: কেএন ৭৫

প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক: আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত

Developed By Proxima Infotech and Ali Abrar

Removed from reading list

Undo
Welcome Back!

Sign in to your account

Lost your password?