জন্মভূমি রিপোর্ট : দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা প্রচণ্ড দাবদাহ ও অনাবৃষ্টিতে চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন মোংলার উপকূলের চিংড়ি ও কাঁকড়া চাষিরা। মৌসুমের শুরুতেই প্রথম দফায় ঘেরে ছাড়া পোনার অধিকাংশই মারা গেছে চলমান তাপদাহে। তারপর পরবর্তীতে দ্বিতীয় দফায় আবারও পোনা ছাড়া হলেও তাও মরছে প্রতিনিয়তই। তাই আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তের পাশাপাশি লোন-ধার-দেনা পরিশোধ ও পরিবার-পরিজন নিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে এখানকার চাষিদের। অথচ এখানে উৎপাদিত চিংড়ি ও কাঁকড়ার সিংহভাই রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে, তাতে সরকারের বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায় হলেও ক্ষতিতেই থেকে যাচ্ছে চাষিরা। চিংড়ি ও কাঁকড়া চাষে চাষিদের নেই সহজলভ্য ঋণের সুবিধা।
যে যার মতো করে ব্যাংক ও এনজিও লোন এবং ধার-দেনা করে ঘের করে আসছেন। এতে অনেকেই আর্থিক ক্ষতিতে পড়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। শুধুমাত্র করোনা প্রাদুর্ভাবকালে এখানকার চাষিদেরকে ১শ’ কোটি টাকা অনুদান দেয় মৎস্য অধিদপ্তর। তাতে ১০ থেকে ১২ টাকার টাকা করে অনুদান পান এক একজন চাষি, যা দিয়ে হয় না কর্মচারীর বেতন। আর ঘের করার খরচ তো পরের বিষয়।
উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর জানান, মোংলায় ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ১২ হাজার চিংড়ি ও গলদার ঘের রয়েছে। তার মধ্যে পশুর নদীর ড্রেজিংয়ের বালু ফেলায় শুধু চিলা ইউনিয়নেই প্রায় ৩শ’ ঘের ভরাট হয়ে ঘেরের সংখ্যা কমে গেছে। এ ছাড়া শিল্পায়নের কারণে বুড়িরডাঙ্গা ইউনিয়নের ঘেরের সংখ্যা কমেছে দেড়শ’র মতো। তাই নানা কারণে ক্রমেই কমে আসছে চিংড়ির ঘেরর সংখ্যা। এখানকার বিশাল জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকা ও আয়ের একমাত্র উৎস হলো এ ঘের। ঘের কমার সঙ্গে সঙ্গে নানা প্রতিকূলতায় কমছে ঘেরগুলোতে মাছের উৎপাদনও। তাই এতে বেকারও হয়ে পড়েছেন অনেক পরিবার।
উপজেলা মৎস অধিদপ্তরের হিসাবমতে, এখানে রেজিস্ট্রেশনকৃত বাগদা চিংড়ির ঘেরের সংখ্যা ৫ হাজার ৪শ’ ৮৬টি। আর গলদা চিংড়ির ঘের রয়েছে ২ হাজর ৯শ’ ৬০টি। আর রেজিস্ট্রেশনসহ মোট বাগদা ও গলদার ঘেরের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ১২ হাজার। আর এ সাড়ে ১২ হাজার ঘেরের মধ্যে সাড়ে ৪শ’ ঘের কমে গেছে ভরাট ও শিল্পায়নে। প্রতি বছর এখানকার বাগদা চিংড়ির ঘেরে ১০ কোটি ও গলদা চিংড়ির ঘেরে ৩ কোটি পোনা ছেড়ে থাকেন ঘের মালিকেরা। সেই পরিমাণে উৎপাদন হয়ে আসছে খুবই কমই।
মিঠাখালী ইউনিয়নের চিংড়ি ঘের মালিক মাহমুদ হাসান ছোট মনি ও সুমেল সারাফাত বলেন, আমাদের ৮টি ঘেরে প্রথম দফায় যে পোনা ছেড়ে ছিলাম, তার শতকরা ৯৫ ভাগ মাছই মারা গেছে। এরপর দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় যে পোনা ছেড়েছি, তাও প্রতিনিয়ত করে যাচ্ছে। কারণ হিসেবে তারা বলেন, প্রচণ্ড দাবদাহ ও পানিতে অতি মাত্রার লবণাক্ততায় মাছ মারা যাচ্ছে।
চিলা ইউনিয়নের ঘের মালিক আবু হোসেন পনি বলেন, মৌসুমের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ৮ দফায় সাড়ে ৪ লাখ টাকার পোনা ছেড়েছি। কিন্তু মাছ পেয়েছি মাত্র ৮ হাজার টাকার। বাকি মাছ মরে গেছে গরম ও লবণে।
চাঁদপাই ইউনিয়নের ঘের ব্যবসায়ী মোল্লা তারিকুল ইসলাম, সুন্দরবন ইউনিয়নের ঘের ব্যবসায়ী ইব্রাহিম হোসেন ও বুড়িরডাঙ্গা ইউনিয়নের ঘের ব্যবসায়ী কাকন শেখ বলেন, আমরা তো ঘের করে দিন দিন লোকসানে রয়েছি। কিন্তু পূর্বপুরুষেরা নিজ জমিতে ঘের করে আসছিলেন, আমরাও নিজেদের জমিতে চিংড়ি চাষ করে আসছি। এখন লোকসান হলেও আমাদের অন্য কোনো কিছু করার তো কোনো সুযোগ ও সাধ্য নেই। তাই বছরের পর বছর লোকসান টেনে যাচ্ছি। কারণ ঘের করাটা এক ধরনের নেশায় পরিণত হয়েছে।
প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত