এম সাইফুল ইসলাম
খুলনা জিলা স্কুল থেকে এ বছর এসএসসি পরীক্ষা দেবে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শাওন দাস। তার হাত ও পা সবই আছে, কিন্তু পাঁচ জনের মতো হেঁটে চলার শক্তি নেই। পারছে না সবার মতো লিখতে। জন্ম থেকে শারীরিক প্রতিবন্ধী। নিজের দু’পায়ে ভর করে দাঁড়াতে পারে না। শক্তি না থাকায় বাম হাতটি অচল। এই শিক্ষার্থী বড় স্বপ্ন নিয়ে প্রতিবন্ধকতা মাড়িয়ে লেখাপড়ার প্রতি ঝুঁকে পড়েছেন।
সহপাঠিদের সাথে পাঠদানে অংশ নিচ্ছেন তিনি। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) ও জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) তেও সাফল্যর সাথে উত্তীর্ণ হন।
শাওন দাস একটি প্রতিবন্ধী শিশুর কষ্টের কথা ও ভালবাসার শিরোনামে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানান। তার আবেদনে সাড়া দিয়ে এগিয়ে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রশাসন তাকে দিয়েছে একটি ল্যাপটপ এবং আবেদনে তার উল্লেখিত সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসার আশ্বাস।
শাওন দাসের বাবা শান্তি রঞ্জন দাস খুলনার একটি ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা। ২০১৮ সালের জুন মাসে সে তার মনের কষ্টের কথা নিয়ে আবেদন জানায়। এ আবেদনের মাধ্যমে সে দেশের সাধারণ মানুষের কাছে সকল প্রতিবন্ধীদের ভালবাসা এবং সহযোগিতার আবেদনসহ ১০টি সমস্যার কথা জানিয়ে আবেদন করে। এ আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী তৎকালীন ডিসি মোহাম¥াদ হেলালউদ্দিনের মাধ্যমে তাকে একটি ল্যাপটপ উপহার দেন। এরপরে বর্তমান ডিসি মো: মনিরুজ্জামান তালুকদার তাকে শরীর চর্চার জন্য একটি সাইকেলিং উপহার দেয়। এর আগে তাকে অনলাইনে ক্লাস করার জন্য একটি মোবাইল উপহার দেয় ডিসি।
শাওন দাস জানান, আমি অনেক খুশি। প্রধানমন্ত্রী আমার মতো একজন ছাত্রের কথাকে মূল্যায়ন করেছেন। তার আদেশে খুলনা জেলা প্রশাসক গত ২৯ অক্টোবর আমাকে সুন্দর একটি ল্যাপটপ দিয়েছেন। আমি যে সমস্যার কথা বলেছিলাম, তিনি পর্যায়ক্রমে তার সমাধানও দিচ্ছেন।
এছাড়া তিনি নগরীর বাগমারা প্রধান সড়কের জরাজীর্ণের কথা ফোনে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে জানায়। পরে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেক গেজেট নিয়ে সেই সড়ক সংস্কার করে দিয়েছেন।
শাওন জানায়, লেখাপড়া করার কারণে মানুষ এখন ভালবাসে। উচ্চ শিক্ষা নিয়ে সমাজের সকলের ভালোবাসায় বেঁচে থাকতে চাই। প্রকৃত শিক্ষা অর্জন করে ভবিষ্যতে ডিসি হতে চাই।
শাওন শুধু নিজের লেখাপড়ার কথাই ভাবেননি। তাকে ভাবিয়েছে তার সহপাঠি ও দেশের উন্নয়নের কথা।
বাবা শান্তি রঞ্জন দাস বলেন, প্রতিবন্ধী হলেও মেধাবী শিক্ষার্থী। লেখাপড়ার প্রতি তার প্রবল আগ্রহের কারণে সব কষ্ট দূর হয়েছে। ভালো ফলাফল নিয়ে উচ্চ শিক্ষা অর্জন করতে পারলে বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণ হবে।
প্রতিবন্ধী শাওনের চোখ জোড়া স্বপ্ন
Leave a comment