জন্মভূমি ডেস্ক : সর্বজনীন পেনশন সংক্রান্ত প্রত্যয় স্কিম প্রত্যাহারসহ ৩ দফা দাবি আদায়ে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. আখতারুল ইসলাম।
আজ রোববার (০৭ জুলাই) দুপুর ১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কলা ভবনের সম্মুখ গেটে ৫ম দিনের মতো শিক্ষকদের সর্বাত্মক কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচিতে সাংবাদিকদের সামনে তিনি এমন মন্তব্য করেন। বেলা ১২টায় ঢাবির শিক্ষকরা সেখানে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। এদিন সকাল থেকেই কর্মবিরতির অংশ হিসেবে সব ধরনের একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বিরতি নেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা।
এর আগে গত ১ জুলাই থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতি শুরু করেন ঢাবি শিক্ষকরা। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। প্রত্যয় স্কিম প্রত্যাহার না হলে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথাও জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নেতারা।
অধ্যাপক ড. আখতারুল ইসলাম বলেন, আমরা করুনা চাইছি না, আমরাই জাতি গঠন করি। আমরা আমাদের অধিকার চাইছি। আমাদের এসময়ে এসে নতুন পে-স্কেল ও সুপার গ্রেড নিয়ে আন্দোলন করার কথা, কিন্তু আমাদের সেই আগের পে-স্কেল নিয়েই পড়ে থাকতে হচ্ছে। ২০১৫ সালে একজন শিক্ষক মাত্র ২৩ হাজার টাকা বেসিকে চাকরি শুরু করতেন। নয় বছর পরেও একই বেতনে চাকরিতে ঢুকছে। এ যুগে এসে কোন চাকরিতে এমন বেতন আছে? শুধু তারা এই পেশাকে ভালোবাসেন এবং জাতিকে গঠন করার জন্য শিক্ষকতা করেন।
তিনি বলেন, এই শিক্ষাব্যবস্থাকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এই যে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এক সপ্তাহ ধরে বন্ধ আছে। তারা সেখানে কর্ণপাতই করেন না। অথচ অবৈধ অটোরিকশা বন্ধ করার পরে এর চালকরা একদিন আন্দোলন করেছে বলে দেশ নাকি অচল হয়ে গিয়েছিল। শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের কি ক্লাসে ফেরার প্রয়োজন নেই?
তিনি আরও বলেন, আমরা নীরব আন্দোলন করছি দেখে তারা ভাবছেন আমরা কিছুই পারি না। তারা কি রাস্তা অবরোধ পছন্দ করেন? ভাঙচুর পছন্দ করেন? নাহলে তারা আমাদের একটা বার ফোন দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করলেন না? অনেকে মনে করছেন, আমরা নাকি বেতন বৃদ্ধির জন্য আন্দোলন করছি। কিন্তু না আমরা আগের সিস্টেমেই আছি, নতুন সিস্টেম মানতে চাইছি না। আমরা আমাদের দাবি আদায়ে ন্যূনতম ছাড় দেব না। দাবি আদায়ের আগ পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবেই। সবগুলো দাবি মানা হলে পরে আমরা ক্লাসে ফেরত যাব।
চারুকলা অনুষদের গ্রাফিক্স ডিজাইন বিভাগের অধ্যাপক সিদ্ধার্থ দে বলেন, এই আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার পাঁয়তারা চলছে? শিক্ষক সমাজ সেটা কখনো সেটা মেনে নেবে না। প্রধানমন্ত্রী আপনার কাছে বলতে চাই, আপনি যাদের উপর তাকিয়ে আছেন তারা এটা করবে না। আপনাকেই দায়িত্ব নিয়ে আমাদের দাবি পূরণ করতে হবে। আপনিই তো বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড গড়তে চাইছেন শিক্ষকদের মাজা ভেঙে দিয়ে?
তিনি বলেন, বর্তমান স্কিমের ফলে একজন শিক্ষকের বেতন দিয়ে কামরাঙ্গীরচরেও পরিবার নিয়ে থাকতে পারবে না। একজন শিক্ষক চাকরিতে যোগ দিয়ে বিয়েই করতে পারবে না। তাই প্রধানমন্ত্রী আপনি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নপূরণ করুন। এটাই আমাদের আবদার, এটাই আমাদের অধিকার, এটাই আমাদের অনুরোধ।
অধ্যাপক ড. মো. আবদুর রহিম বলেন, আমাদের আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অন্তত ৩ শতাধিক শিক্ষক একাত্মতা প্রকাশ করে বার্তা পাঠিয়েছেন। এটা আমাদের আন্দোলনকে আরও বেগবান করেছে। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের নৈতিক দিক শিক্ষা দেন তাই তারাও অনৈতিক পথে আয় করেন না। ফলে শিক্ষকদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুন্দর জীবনের জন্য তহবিল প্রয়োজন। এই আন্দোলন আমাদের ন্যায্য আন্দোলন। এখানে ভিন্ন বার্তা খোঁজার কোনো সুযোগ নেই। আমাদের এই ৩টি দাবি মানার আগ পর্যন্ত আমরা ক্লাসে ফিরব না।
ঢাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদার সঞ্চালনায় অবরোধ কর্মসূচিতে সভাপতি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূইয়া। এছাড়া, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক জাহিদ, শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ড. এম ওহিদুজ্জামান, আশিক তালুকদার আহমেদ, অধ্যাপক ড. খাদেম, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদকসহ শিক্ষক নেতারা বক্তব্য দেন।
প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত