উদ্বোধন করবেন ২৯টি উন্নয়ন প্রকল্প
নগরী জুড়ে উৎসবের আমেজ
শেখ আব্দুল হামিদ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সোমবার খুলনায় আসছেন। দুপুর ৩টায় খুলনার ঐতিহাসিক সার্কিট হাউজ মাঠে মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিভাগীয় জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষণ দেবেন তিনি। এর আগে খুলনা জেলার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে কেন্দ্র করে শিল্প, বন্দর ও বিভাগীয় নগরী খুলনায় বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। নগরীর প্রতিটি সড়কে নির্মাণ করা হয়েছে দুই শতাধিক তোরণ, মোড়ে মোড়ে শোভা পাচ্ছে রং বেরঙের ব্যানার, ফেস্টুন, বিলবোর্ড ও প্লাকার্ড। সার্কিট হাউজ মাঠের আবাহনী ক্রীড়াচক্র প্রান্তে তৈরি করা হয়েছে নিচে নৌকা ও উপরে পদ্মা সেতুর আদলে ৯০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৪০ ফুট প্রস্থের সুবিশাল মঞ্চ। এই মঞ্চে অন্তত ৪০০ জন অতিথি বসতে পারবেন। মঞ্চের উচ্চতা সাড়ে ১৩ ফুট।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর খুলনায় আগমন ও সার্কিট হাউজ মাঠের জনসভাকে কেন্দ্র কওে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী তিনস্তরের কঠোর নিরাপত্তাবলয় গড়ে তুলেছে। এরমধ্যে রয়েছে জনসভাস্থল, জনসভাস্থলের আশেপাশ এবং জনসভাস্থলের বাইরের এলাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মহাসমাবেশের পূর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৯টি মেঘা প্রকল্প খুলনাবাসীকে উপহার দেবেন। এরমধ্যে ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে চলমান ২৪টি প্রকল্প এবং ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে আরো ৫টি প্রস্তাবিত প্রকল্প রয়েছে।
খুলনা জেলা প্রশাসন কার্যালয় সূত্র জানায়, উল্লেখযোগ্য প্রকল্পগুলো হচ্ছে, ১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘরের ভবন নির্মাণ কাজ, সিভিল সার্জন অফিস ও বাসভবন নির্মাণ, ‘৪০টি উপজেলায় ৪০টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও চট্টগ্রামে একটি ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজি স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলায় একটি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন কাজ, ‘ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনাস্থ শিক্ষানবিশ প্রশিক্ষণ দপ্তরসমূহ সংস্কার ও আধুনিকায়ন’ কাজ, ‘চট্টগ্রাম এবং খুলনায় বিএসটিআই’র আঞ্চলিক অফিস স্থাপন ও আধুনিকায়ন (দ্বিতীয় সংশোধিত)’ প্রকল্পের আওতায় ১০তলা ভিত্তিসহ ১০তলা ভবন (সিভিল, স্যানিটারি, ইন্টারন্যাল রোড, সার্ফেস ড্রেন এবং বৈদ্যুতিক কাজ), ‘বিটাক চট্টগ্রাম, খুলনা ও বগুড়া কেন্দ্রে নারী হোস্টেল স্থাপন (দ্বিতীয় সংশোধিত)’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় বিটাক, খুলনা কেন্দ্রে ১০তলা ভিতসহ ১০ তলা বিশিষ্ট নারী হোস্টেল ভবন নির্মাণ, ‘দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় রেজিস্ট্রি ও সাব-রেজিস্ট্রি অফিস ভবন নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় পাইকগাছা উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিস ভবন নির্মাণ (সিভিল, স্যানিটারী ও বৈদ্যুতিক) কাজ, ‘সুন্দরবনে পরিবেশবান্ধব পর্যটন (ইকোট্যুরিজম) সুবিধা সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন’ প্রকল্পের আওতায় নির্মিত শেখেরটেক ইকোট্যুরিজম কেন্দ্র, ‘১০০টি উপজেলায় একটি করে টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ স্থাপন (প্রথম সংশোধিত)’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ডুমুরিয়া টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের পঞ্চমতলা একাডেমিক কাম চতুর্থতলা প্রশাসনিক ও ওয়ার্কসপ ভবন নির্মাণ কাজ, ‘নির্বাচিত বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়সমূহের উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় বয়রা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠতলা একাডেমিক ভবন নির্মাণ কাজ, ‘নির্বাচিত বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়সমূহের উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় খুলনা কলেজিয়েট স্কুলের ষষ্ঠতলা একাডেমিক ভবন নির্মাণ কাজ, ‘সরকারি কলেজসমূহে বিজ্ঞান শিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় সরকারি এল. বি. কে ডিগ্রি মহিলা কলেজের ষষ্ঠতলা একাডেমিক ভবন নির্মাণ কাজ, ‘সরকারি কলেজসমূহে বিজ্ঞান শিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজের ষষ্ঠতলা একাডেমিক ভবন নির্মাণ কাজ, ‘সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়সমূহের উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় চালনা বাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠতলা একাডেমিক ভবন নির্মাণ কাজ, ‘নির্বাচিত মাদ্রাসাসমূহের উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় তালিমুল মিল্লাত রহমাতিয়া ফাজিল মাদ্রাসার ষষ্ঠতলা একাডেমিক ভবন নির্মাণ কাজ, ‘নির্বাচিত বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়সমূহের উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় নজরুল নগর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের ষষ্ঠতলা একাডেমিক ভবন নির্মাণ কাজ, ‘নির্বাচিত বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়সমূহের উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় আর.আর.এফ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠতলা একাডেমিক ভবন নির্মাণ কাজ, ‘নির্বাচিত বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়সমূহের উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় আড়ংঘাটা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থতলা একাডেমিক ভবন নির্মাণ কাজ, ‘উপজেলা ও ইউনিয়ন সড়কে দীর্ঘ সেতু নির্মাণ’ প্রকল্পের আওতায় ডুমুরিয়া উপজেলাধীন বসুন্দিয়াডাঙ্গা বাজার-মাগুরখালী ইউপি অফিস (চরচরিয়া শিবনগর সড়ক) সড়কে ২৪৯০ মি. চেইনেজে ভদ্রা নদীর ওপর ৩১৫ দশমিক ৩০ মিটার লম্বা পিসি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ কাজ, ‘খুলনা সিটি করপোরেশনের গুরুত্বপূর্ণ ও ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা উন্নয়ন ও পুনর্বাসন প্রকল্প’ এবং ‘খুলনা শহরে জলাবদ্ধতা দূরীকরণে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্প’ এর আওতায় খালিশপুর বিআইডিসি রোডে ড্রেন, ফুটপাথ নির্মাণসহ রাস্তা প্রশস্তকরণ ও পুনঃ নির্মাণ কাজ, গোপালগঞ্জ, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, পিরোজপুর কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের (প্রথম সংশাধিত) আওতায় দৌলতপুর, খুলনাতে অতিরিক্ত পরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খুলনা অঞ্চল, খুলনা এর ষষ্ঠতলা বিশিষ্ট নবনির্মিত ভবন এবং কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটসমূহের কার্যক্রম শক্তিশালীকরণ (প্রথম সংশোধিত) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় দৌলতপুর কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট খুলনার চতুর্থতলা ভিতের ওপর চতুর্থতলা ছাত্র হোস্টেল নির্মাণ ( সিভিল, স্যানিটারি ও বৈদ্যুতিক) কাজ, ডুমুরিয়া উপজেলার বসুন্দিয়াডাঙ্গা বাজার-মাগুরখালী ইউপি অফিস (চরচরিয়া-শিবনগরসড়ক) সড়কে ২ হাজার ৪৯০ মিটার চেইনেজে ভদ্রা নদীর উপর ৩১৫ দশমিক ৩০ মিটার পিসি গার্ডার ব্রিজ এবং পাইকগাছা উপজেলার পাইকগাছা জিসি-লস্কারবাজার- বাইনতলা বাজার-বগুলার চকবাজার শুড়িখালি বাজার-ভান্ডারপোল বাজার- গিলাবাড়ী জিসি সড়কে ২ হাজার ৩০০মিটার চেইনেজে কুড়ুলিয়া নদীর উপর ৭৪৮ দশমিক ৯০ মিটার দীর্ঘ ব্রিজ। এছাড়াও নগরীর মাথাভাঙ্গা এলাকায় ‘খুলনা সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবন্থাপনার উন্নয়ন’ প্রকল্পের আওতায় স্যানিটারি ল্যান্ড ফিল নির্মাণ এবং ‘উপজেলা পর্যায়ে ৩২৯টি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ স্থাপন (দ্বিতীয় পর্যায়)’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় দিঘলিয়া টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের পঞ্চমতলা একাডেমিক কাম চতুর্থতলা প্রশাসনিক ও ওয়ার্কসপ ভবন নির্মাণ কাজসহ মোট ৫টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী।
খুলনা জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন জানান, বিভিন্ন দপ্তর থেকে পাওয়া উন্নয়ন প্রকল্প কাটছাট করে ২৯ প্রকল্প উদ্বোধনের জন্য প্রস্তাবনা ঢাকায় পাঠানো হয়। এগুলোর সব কয়টি অনুমোদন হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, প্রকল্পগুলো উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী।
খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমডিএ বাবুল রানা জানান, খুলনার উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা। সরকারের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে দেশ এখন উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে। তারই ধারাবাহিকতায় খুলনায় ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। দলের পক্ষ থেকে আমরা কিছু প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করবো। আশা করি তিনি পর্যায়ক্রমে এগুলো বাস্তবায়ন করবেন।
তিনি বলেন, খুলনার জনসভায় খুলনা বিভাগের ১০ জেলার ১০ লক্ষাধিক মানুষের সমাগম ঘটানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। জনসভা শুরু হওয়ার অনেক আগেই খুলনা মহানগরীর রাজপথে লাখো মানুষের ঢল নামবে।
এর আগে চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি ব্যক্তিগত সফরে খুলনায় এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি খুলনা মহানগরী সংলগ্ন দিঘলিয়ার নগরঘাট এলাকায় তার মা বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের নামে কেনা পাট গোডাউন পরিদর্শন করেন এবং নিজের চাচা বাড়িতে (বঙ্গবন্ধুর ছোট ভাই শেখ আবু নাসের) পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটান।