
খুবি প্রতিনিধি: অগভীর জলাশয়ে জন্মানো এক মহামূল্যবান উদ্ভিদ হোগলা পাতা। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ক্যাফেটেরিয়ার পাশে খোলা মাঠের প্রাঙ্গনে রয়েছে হোগলা পাতার সারি। এই পাতা অগভীর জলাশয় নদী, খাল, ঝিল ও উপকূলীয় অঞ্চলে জন্মায়। এটি একটি ঘাস জাতীয় উদ্ভিদ, যার বৈজ্ঞানিক নাম ঞুঢ়যধ।
এই পাতাগুলো নিয়েই এখন একদল শিক্ষার্থীরা গড়ে তুলছে এক নতুন গল্প। পাতাগুলো রূপ নিচ্ছে পরিবেশবান্ধব পণ্যে, স্বপ্নের প্রজেক্ট ‘ধারা’ তে। যেখানে প্রতিটি পাতা বয়ে আনছে পরিবর্তনের ছোঁয়া। তাদের এই উদ্যোগের মাধ্যমে তৈরি হচ্ছে ব্যতিক্রমধর্মী পণ্য।
উদ্যোক্তারা জানান, ৩-৩.৫ মাস আগে প্রজেক্টের ৬ সদস্য মিলে প্রথমে আইডিয়া নিয়ে কাজ শুরু করেন। এরপর, জুলাই মাস থেকে মাঠপর্যায়ে কাজ শুরু হয়। এখন পর্যন্ত তারা খুলনা শহরের জোড়াগেট এলাকার মন্টু কলোনির বাস্তুহারা ৭ জন ও ডুমুরিয়ার রিশি কমিউনিটির ৫ নারীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন, যাতে তারা পণ্যগুলো কীভাবে তৈরি করতে হবে তা শিখতে পারেন। বর্তমানে, তারা ছোট পরিসরে কমার্শিয়াল পর্যায়ে কাঁচামাল সরবরাহ করে পণ্য তৈরি করছেন এবং সেগুলো অনলাইনের মাধ্যমে বিক্রি করছেন। যা উদ্যোক্তাদের জন্য একটি প্রাথমিক সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
প্রশিক্ষণ নেওয়া নারীদের মধ্যে সন্ধ্যা দেবী বলেন, ”আমরা আগে ভাবতাম এমন পাতা তো কোনো কাজে লাগে না। এখন এই পাতা দিয়েই আমরা রোজগার করছি, নিজের পায়ে দাঁড়াচ্ছি”।
পড়ে থাকা হোগলা পাতার পরিবেশবান্ধব উদ্যোগটি নিয়েছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভলপমেন্ট স্টাডিজ ডিসিপ্লিনের আবুজার জীম, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিনের নুসরাত সুলতানা, সিথি রানী সাহা, শিক্ষা ডিসিপ্লিনের আনিকা তাসনিম,
সয়েল ওয়াটার এন্ড এনভায়রনমেন্ট ডিসিপ্লিনের সুমাইয়া খাতুনসহ বিএল কলেজের রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী রাইসা আকরাম ঐশী।
তারা জানান, প্রথমে ইউটিউব দেখে শিখতে থাকে কীভাবে পাতা পরিষ্কার, শুকানো এবং আকৃতি ধরে রেখে পণ্য তৈরি করা যায়। ’ধারা’ র সদস্যরা নিজেরাই প্রথমে প্রশিক্ষণ নেন। পাতা কেটে, পরিষ্কার করে, ফ্রেমে বসিয়ে নানা রকম ডিজাইন তৈরি করেন। কয়েক মাসের মধ্যেই তারা তৈরি করে ফেলেন ট্রিভেট, ট্রে, কলমদানি ও ছোট, বড়, মাঝারি সাইজের আকষর্নীয় ঝুড়ি। তাদের তৈরি পণ্যে রয়েছে প্রকৃতির ছোঁয়া- কোনো রং বা প্লাস্টিক নয়।
এই পণ্য তৈরিতে কোনো রকম রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয়নি। এর ফলে পণ্যগুলো সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব ও টেকসই । তাদের বানানো পণ্যের স্পর্শে রয়েছে হাতের কোমল যত্ন ও ভালোবাসা। পাতাগুলো একদম গোড়া থেকে কাটা হয় না, ফলে আবার নতুন পাতা গজায়। প্রথমদিকে বিক্রি কম হলেও এখন তারা বেশ অর্ডার পাচ্ছে।অবশ্য এই পথ মসৃণ ছিলে না । অর্থের অভাব, উপকরণের সীমাবদ্ধতা, জায়গার সংকট সবকিছু মিলিয়ে তারা অনেক বাধার মুখোমুখি হয়েছে। তারা চেষ্টা করছে তাদের তৈরি পণ্য স্থানীয় হস্তশিল্পের দোকানে পৌছে দেওয়ার। সম্প্রতি ‘ধারা’র সাথে গ্রিন ভয়েস নামে সংগঠন পাশে দাঁড়িয়েছে। তাদের এই সহযোগিতায় প্রজেক্টের কাজ আরো সুন্দরভাবে পরিচালনা করতে পারছে। সদস্যরা এখন তাদের কাজকে আরও প্রসারিত করতে চায়। পাশাপাশি তারা হোগলা পাতার তৈরি প্রত্যেকটি পণ্যকে বিভিন্ন ডিজাইন রূপ দিচ্ছে।
প্রজেক্টের কো -ফাউন্ডার আবুজার জীমের বলেন , “আমরা প্রকৃতির দেওয়া প্রতিটি জিনিসের মধ্যে সম্ভাবনা দেখি। এই পাতা আমাদের শিখিয়েছে ছোট জিনিস দিয়েও বড় পরিবর্তন আনা যায়।” শুরুর দিকে আমরা প্রথম কয়েকটি ট্রিভেট ও দড়ি বানাতে গিয়ে পাতাগুলো ভেঙে যায়, ফেটে যায়। পাতা শুকানো প্রসেসিং সব কিছু ছিলো বেশ কষ্টকর। কিন্তু তবুও আমরা থেমে থাকেনি।

