দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সারাদেশে নৌকার প্রার্থীর সমর্থকদের আচরণবিধি লঙ্ঘনের হিড়িক পড়েছে। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ওপর হামলা, যানজট সৃষ্টি করে শোডাউন ও ব্যানার ব্যবহারে নিয়ম না মানার ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। গত ২ দিনে খুনোখুনির ঘটনাও ঘটছে। শুধু শোকজের নোটিস দিয়েই দায় সারছে নির্বাচন কমিশন। নেয়া হচ্ছে না কার্যকর কোনো পদক্ষেপ। এভাবে চলতে থাকলে সামনে নির্বাচনী পরিবেশ আরো উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে। নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে পরিস্থিতি- এমন শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকরা। ৭ জানুয়ারি ২০২৪ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। তবে চারদিকে এখন পুরোদমে শুরু হয়েছে নির্বাচনী আমেজ। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের খবর এরই মধ্যে বেশ আলোচিত, যার অধিকাংশই নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা সম্পর্কিত। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে প্রার্থী ও তার সমর্থকদের কিছু নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়। বিধিনিষেধও থাকে তাদের কার্যক্রমে। সীমারেখা টেনে দেয়া হয় প্রচারসহ বেশ কিছু ক্ষেত্রে। এগুলো যথাযথভাবে অনুশীলন করা না হলে নির্বাচনের ফলাফলে অনভিপ্রেত প্রভাব পড়ে। প্রতীক বরাদ্দের পর গত ১৮ ডিসেম্বর দেশব্যাপী নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা শুরু হয়েছে। প্রচারণার শুরুতেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকা। ভোটের দিন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে প্রার্থীদের বেপরোয়া আচরণ। আর এ কাজটি যে শুধু একটি দলের নেতাকর্মীরাই করেছেন, তাও নয়। এ ধরনের কাজ অতীতেও বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীরা করেছেন, এবারো তাই ঘটছে। নির্বাচনী বিধিনিষেধ মানানোর জন্য বিষয়টির লাগাম এখনই টানা প্রয়োজন। আচরণবিধির ৭-এর ‘খ’ ধারায় রয়েছে, কোনো প্রার্থী পথসভা ও ঘরোয়া সভা করতে চাইলে প্রস্তাবিত সময়ের ২৪ ঘণ্টা আগে তাহার স্থান এবং সময় সম্পর্কে স্থানীয় পুলিশ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে হবে। যাতে ওই স্থানে চলাচল ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য পুলিশ কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারেন। কিন্তু বাস্তবে চলছে তার উল্টো। আচরণবিধির ১৬-এর (ঘ)-তে বলা হয়েছে, কোনো সড়ক কিংবা জনগণের চলাচল ও সাধারণ ব্যবহারের জন্য নির্ধারিত স্থানে নির্বাচনী ক্যাম্প বা অফিস স্থাপন করিতে পারবে না। এসব নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বেশির ভাগ প্রার্থী ফুটপাত, অনেক জায়গায় রাস্তা দখল করে নির্বাচনী ক্যাম্প স্থাপন করেছেন। বিগত নির্বাচনগুলোর তুলনায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আচরণবিধি প্রয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করবে এটাই স্বাভাবিক। আচরণবিধি লঙ্ঘন হচ্ছে কিনা, তা তদারকি করার জন্য গত ২৮ নভেম্বর থেকে মাঠে নেমেছে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা। আগামী ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত তারা মাঠে থাকবেন। আচরণবিধি লঙ্ঘন বা পরিস্থিতির অবনতি হলে তারা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবেন। ইতোমধ্যে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে কয়েকজন হেভিওয়েট প্রার্থীকে তলব ও কারণ দর্শানোর নোটিস প্রদান করা হয়েছে। এতেই কি যথেষ্ট? আমরা নির্বাচন কমিশনকে কঠোর হতে বলি। একটি সুষ্ঠু, সুন্দর ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনের ভূমিকাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।