জন্মভূমি ডেস্ক : রোববার আজারবাইজান ও ইরানের সীমান্তবর্তী এলাকায় নির্মিত একটি বাঁধ উদ্বোধনে যান প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি। মোট তিনটি হেলিকপ্টারে ওই এলাকায় পৌঁছান প্রেসিডেন্ট এবং তার সফর সঙ্গীরা। বাঁধ উদ্বোধন শেষে পূর্ব আজারবাইজানের রাজধানী তাবরিজে ফেরার উদ্দেশে আকাশে উড়াল দেয় হেলিকপ্টারগুলো।
এরমধ্যে দুটি কপ্টার গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতে পারলেও পারেনি প্রেসিডেন্ট রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি। জানা যায়, উড্ডয়নের আধা ঘণ্টার মধ্যে রাইসির হেলিকপ্টারটি অন্য দুটি কপ্টারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে ওই দুটি হেলিকপ্টার অনুসন্ধান শুরু করে। কিন্তু কাজ হয়নি কোনো। এরপর একে একে ১২ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও সন্ধান মিলছিল না কপ্টারটির।
এদিকে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় প্রেসিডেন্টের ‘নিখোঁজ’ হওয়ার ঘটনায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন ইরানের নাগরিকরা। তেহরানের রাস্তায় নেমে পড়েন হাজার হাজার বাসিন্দা। রাতভর দোআ করতে থাকেন নিখোঁজ প্রেসিডেন্ট ও তার সফর সঙ্গীদের জন্য।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তেহরানের কেন্দ্রস্থল ভ্যালি-আসর স্কয়ারে মানুষকে রাস্তায় হাঁটু গেড়ে বসে দোআ করতে দেখা গেছে। বিভিন্ন মিডিয়ায় খবর শোনার পর তেহরানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শহর মাশহাদে ইমাম রেজা (আ.)- এর মাজারে জড়ো হন হাজারো মানুষ। দোআ করেন প্রেসিডেন্টের নিরাপদ প্রত্যাবর্তনের জন্য।
বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে রাতভর অব্যাহত থাকে অনুসন্ধান। উদ্ধার অভিযানে এগিয়ে আসে তুরস্ক-রাশিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশ। তীব্র শীত আর ভারী বৃষ্টির মধ্যে বিভিন্নভাবে চালানো হয় অনুসন্ধান। তেহরানের সামরিক বাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও রেড ক্রিসেন্টসহ বেশকিছু প্রতিষ্ঠান অংশ নেয় উদ্ধার অভিযানে।
অপর দিকে নিজস্ব প্রক্রিয়ায় প্রেসিডেন্ট রাইসি অনুসন্ধান চালায় তুরস্ক। আঙ্কারার ড্রোন ব্যবহার করে চালানো অনুসন্ধানে খোঁজ পাওয়া যায় বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারটির। এরমধ্যে দুর্ঘটনাস্থলের সন্ধান পায় স্থানীয় রেড ক্রিসেন্টের উদ্ধারকারী দল। উপস্থিত চিকিৎসকরা জানান, পুরো হেলিকপ্টারটি পুড়ে গেছে। কাউকে জীবিত পাওয়ার সম্ভাবনা একদমই নেই।
ইরানের বার্তাসংস্থা মেহরের বরাত দিয়ে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার মুখে পড়ার পর সেখানে কারও জীবিত থাকার ‘কোনো চিহ্ন’ নেই। বার্তাসংস্থা আইআরআইএনএন এবং মেহর নিউজ জানিয়েছে, ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারটির দুর্ঘটনাস্থলে ‘কোনও জীবিত ব্যক্তি’ পাওয়া যায়নি।
এদিকে প্রেসিডেন্ট রাইসির সঙ্গে ওই হেলিকপ্টারে মোট কতজন ছিলেন সে ব্যাপারে এখনও স্পষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে বিভিন্ন মিডিয়ার খবরে বলা হচ্ছে— যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি বেল-২১২ মডেলের কপ্টারটিতে মোট সিট রয়েছে ১৫টি। এর মধ্যে পাইলটের জন্য আসন রয়েছে একটি। বাকি ১৪টি যাত্রীদের জন্য।
যদিও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মিডিয়ার খবরে এখন পর্যন্ত কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন, তেহরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদুল্লাহিয়ান, পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের গভর্নর মালেক রহমাতি এবং তাবরিজের জুমার নামাজের নেতা আয়াতুল্লাহ মোহাম্মদ আলী আলে-হাশেম কপ্টারটিতে ছিলেন। ছিলেন ইরান সরকারের আরও বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও। এছাড়া হেলিকপ্টারের পাইলট, কো-পাইলট ও ক্রুও মারা গেছেন।
ইরানের আধা-সরকারি বার্তাসংস্থা মেহর নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি দেশের জনগণের জন্য দায়িত্ব পালনকালে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে তিনি ‘শহীদ’ হয়েছেন। একই সঙ্গে হেলিকপ্টারে থাকা পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আব্দুল্লাহিয়ানসহ অন্য আরোহীরাও ‘শহীদ’ হয়েছেন।