By using this site, you agree to the Privacy Policy and Terms of Use.
Accept

প্রকাশনার ৫২ বছর

দৈনিক জন্মভূমি

পাঠকের চাহিদা পূরণের অঙ্গীকার

  • মূলপাতা
  • জাতীয়
  • আন্তর্জাতিক
  • রাজনীতি
  • খেলাধূলা
  • বিনোদন
  • জেলার খবর
    • খুলনা
    • চুয়াডাঙ্গা
    • বাগেরহাট
    • মাগুরা
    • যশোর
    • সাতক্ষীরা
  • ফিচার
  • ই-পেপার
  • ALL E-Paper
Reading: প্লাস্টিক দূষণে ধুঁকছে উপকূলের ১৫ জেলার ‌মানবসভ্যতা
Share
দৈনিক জন্মভূমিদৈনিক জন্মভূমি
Aa
  • মূলপাতা
  • জাতীয়
  • জেলার খবর
  • ALL E-Paper
অনুসন্ধান করুন
  • জাতীয়
  • জেলার খবর
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলাধূলা
  • বিনোদন
  • ই-পেপার
Have an existing account? Sign In
Follow US
প্রধান সম্পাদক মনিরুল হুদা, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত
দৈনিক জন্মভূমি > জেলার খবর > সাতক্ষীরা > প্লাস্টিক দূষণে ধুঁকছে উপকূলের ১৫ জেলার ‌মানবসভ্যতা
তাজা খবরসাতক্ষীরা

প্লাস্টিক দূষণে ধুঁকছে উপকূলের ১৫ জেলার ‌মানবসভ্যতা

Last updated: 2025/12/09 at 2:21 PM
জন্মভূমি ডেস্ক 2 weeks ago
Share
SHARE

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি ‌: পলিথিন ও প্লাস্টিক আধুনিক জীবনের বহুল ব্যবহৃত উপাদান হলেও, পরিবেশের জন্য তা ভয়াবহ ক্ষতির কারণ। পলিথিনের বহুল ব্যবহার ও অব্যবস্থাপনার ফলে মাটি, পানি, এবং বায়ু দূষণের পাশাপাশি জীববৈচিত্র্যও হুমকির মুখে পড়েছে। সাম্প্রতিক বিশ্বব্যাংকের এক সমীক্ষায় দেখা যায় বাংলাদেশের ২৫ শতাংশ প্লাস্টিক অপরিবর্তিত থাকে অর্থাৎ পুনর্ব্যবহার হয় না এবং পরিশেষে তা সমুদ্রে পতিত হয় । এর ফলে প্রতিবছর প্রায় ২ লাখ ৭ হাজার ৬৮৫ টন প্লাস্টিক সমুদ্রে যাচ্ছে। যত্রতত্র প্লাস্টিক বর্জ্য ফেলার ফলে বর্ষাকালে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় এবং নদী-নালার ধারণক্ষমতা কমে যায়। অধিকন্তু, একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের উপস্থিতি প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিবেশসম্মত পুনর্ব্যবহারকে দুরূহ করে তুলছে।
পরিবেশের পাশাপাশি পলিথিন মানুষের স্বাস্থ্যের ওপরও দীর্ঘমেয়াদি এবং ভয়াবহ প্রভাব ফেলে। পলিথিন প্রস্তুত করতে ব্যবহৃত বিভিন্ন বিষাক্ত রাসায়নিক খাবার বা পানির সংস্পর্শে আসলে ধীরে ধীরে খাদ্যে মিশে যায়। এই রাসায়নিকগুলো মানবদেহে ক্যান্সার, হরমোনগত অসামঞ্জস্য, এবং প্রজনন সমস্যার কারণ হতে পারে। পলিথিন পোড়ালে বিভিন্ন প্রকার ক্ষতিকর গ্যাস নির্গত হয়। এগুলো শ্বাসনালির প্রদাহ, অ্যাজমা, এবং ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। পলিথিন ধীরে ধীরে ছোটো ছোট মাইক্রোপ্লাস্টিকে পরিণত হয়, যা খাদ্য ও পানির মাধ্যমে মানুষের দেহে প্রবেশ করে। মাইক্রোপ্লাস্টিক অন্ত্রের ক্ষতি, রক্তে প্রদাহ, এবং দীর্ঘমেয়াদি বিষক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। নদী-নালা বা সমুদ্রের পলিথিন বর্জ্য জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদকে বিষাক্ত করে তুলছে। এই দূষিত জলজ প্রাণী যখন মানুষ গ্রহণ করে, তখন তা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করে। প্লাস্টিক খেলনা, প্যাকেটজাত খাদ্য, বা পানির বোতল থেকে নির্গত  বিষাক্ত পদার্থ শিশুদের স্নায়ুতন্ত্র ও মস্তিষ্কের বিকাশে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। প্লাস্টিকের বস্তুটি মাটি ও পানিকে দূষিত করার ক্ষেত্রে খুবই ক্ষতিকর।
বিজ্ঞাপন
পলিথিন সহজে মাটিতে মিশে না। এটি মাটির উপরে একটি আস্তরণ তৈরি করে, যার ফলে মাটির স্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। পলিথিনের উপস্থিতি মাটিতে উপকারী জীবাণু ও কীটপতঙ্গের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত করে, ফলে মাটির উর্বরতা কমে যায়। পলিথিনের কারণে মাটিতে পানি জমে থাকে, ফলে ফসল নষ্ট হয় এবং জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। পলিথিন উৎপাদনের সময় ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থ মাটিতে মিশে গিয়ে মাটির গুণাগুণ নষ্ট করে।  পলিথিনের কণা বৃষ্টির পানির সাথে নদী, হ্রদ ও সমুদ্রে চলে যায়, ফলে জলাশয় দূষিত হয়। জলজ প্রাণীরা পলিথিনকে খাবার ভেবে খেয়ে ফেলে, ফলে তাদের শ্বাসকষ্ট হয় এবং মৃত্যু হয়। পলিথিন পানিতে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ নিঃসৃত করে, ফলে পানির গুণাগুণ নষ্ট হয় এবং মানুষের জন্য পানের অযোগ্য হয়ে পড়ে। পলিথিনের ক্ষতিকরদিক বিবেচনা করে বাংলাদেশ সরকার ২০০২ সালে পলিথিন শপিংব্যাগ উৎপাদন, আমদানি, বাজারজাতকরণ, বিক্রয় বা বিক্রয়ের জন্য প্রদর্শন, মজুদ, বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পরিবহণ, ব্যবহারকে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের নেতৃত্বে মন্ত্রণালয় পলিথিন দূষণ রোধে নানা কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। পলিথিন উৎপাদনের বিরুদ্ধে সরকার জিরো টলারেন্স ঘোষণা করা করেছে। ১ অক্টোবর থেকে সুপার শপগুলোতে এবং ১ নভেম্বর থেকে কাঁচাবাজারসহ সারাদেশে পলিথিন শপিংব্যাগের ব্যবহারের বিদ্যমান নিষেধাজ্ঞা বলবৎ করার কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। গত ৩ নভেম্বর ২০২৪ হতে এ পর্যন্ত সমগ্র বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন উৎপাদন বিক্রয়, সরবরাহ ও বাজারজাত করার দায়ে ১৯৮টি মোবাইল কোর্ট অভিযান পরিচালনা করে ৪১৩টি প্রতিষ্ঠান থেকে মোট পঁচিশ লক্ষ সত্তর হাজার টাকা জরিমানা আদায়সহ আনুমানিক ৫০ হাজার ৫৫২ কেজি নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন জব্দ করা হয়েছে এবং ৪টি পলিথিন উৎপাদনকারী কারখানার সেবা তথা গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে।
ইতোমধ্যে পলিথিন ও পলিপ্রপাইলিন শপিংব্যাগ বিরোধী সচেতনতামূলক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বাজার মনিটরিং এর জন্য উচ্চপর্যায়ের মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি নিয়মিত বাজার মনিটরিং কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। ঢাকা মহানগরের বাজারে বাজারে সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান আয়োজন, ক্লিনআপ পোগ্রামসহ বিকল্প বিতরণ করা হয়েছে। পরিবেশ আইন অমান্য করে অর্থাৎ অবৈধ পলিথিন শপিংব্যাগ যারা উৎপাদন, পরিবহণ, বিক্রয় এবং মজুদদারকে মোবাইল কোর্টের আওতায় এনে নিয়মিত জরিমানা ধার্য ও আদায় করা হচ্ছে এবং অবৈধ পলিথিন সামগ্রী জব্দ, কারখানাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।
পলিথিনের বিকল্প সোনালী ব্যাগের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডের মাধ্যমে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া, বায়োডিগ্রেডেবল মোড়কের ব্যবহার বৃদ্ধি এবং এ সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সমন্বয়ে পৃথক একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় পলিথিনসহ সকল প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ১০ বছর মেয়াদি অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করা হয়েছে। ইতোমধ্যে, ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার শহরের প্লাস্টিক বর্জ্য দ্বারা নদী দূষণের হট স্পটগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। অচিরেই সেগুলো অপসারণ এবং প্রয়োজনীয় পরিবেশসম্মত ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করা হবে।
মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা মোতাবেক একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিকজাত পণ্য ব্যবহার বন্ধে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় কর্তৃক তিন বছর মেয়াদি বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা মোতাবেক সমুদ্র সৈকত, সৈকত সংলগ্ন হোটেল মোটেলে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের বিভিন্ন আইটেম পর্যায়ক্রমে বন্ধের বিষয়ে কার্যক্রম চলমান। আশা করা যায় যে, দেশে প্রথমবারের মতো ইপিআর এর আওতায় স্থানীয় সরকার বিভাগের সাথে বিভিন্ন দেশি ও বিদেশি ব্রান্ডের মালিকগণ বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় অর্থায়নসহ সার্বিক বাস্তবায়নে অংশগ্রহণ করবেন। মহামান্য হাইকোর্ট উপকূলীয় এলাকায় সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকসহ সারাদেশে পলিথিন শপিংব্যাগ বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশনা প্রদান করেছেন।
পলিথিনের কারণে পরিবেশ দূষণের মাত্রা দিন দিন বাড়ছে। তাই পলিথিনের ব্যবহার কমিয়ে পরিবেশ সুরক্ষা করা আমাদের সকলের দায়িত্ব। পলিথিনের বিকল্প হিসেবে আমরা অনেক কিছু ব্যবহার করতে পারি। পুনর্ব্যবহারযোগ্য কাগজ থেকে তৈরি ব্যাগ খাদ্যসামগ্রী এবং হালকা পণ্য বহনের জন্য জনপ্রিয়। এটি সহজেই পরিবেশে মিশে যায়, ফলে দূষণের কোনো ঝুঁকি থাকে না। সুতির কাপড় বা অন্যান্য টেকসই উপাদান দিয়ে তৈরি কাপড়ের ব্যাগ টেকসই এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্য। দৈনন্দিন বাজার এবং ব্যক্তিগত কাজে এটি একটি আদর্শ বিকল্প। পাট থেকে তৈরি ব্যাগ পরিবেশবান্ধব এবং দীর্ঘস্থায়ী। বাংলাদেশে সহজলভ্য এই পণ্যটি বাজার, কেনাকাটা এবং প্যাকেজিংয়ে ব্যবহার করা যায়। এটি মাটিতে সহজে মিশে যায় এবং দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। পানি, তেল, মশলা ইত্যাদি রাখার জন্য কাঁচের বোতল ব্যবহার করা যেতে পারে। কাঁচের বোতল পুনর্ব্যবহারযোগ্য এবং পরিবেশবান্ধব। পানি বহন করার জন্য স্টেইনলেস স্টিলের বোতল ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি দীর্ঘস্থায়ী এবং স্বাস্থ্যকর। কাচ ও স্টিলের পাত্র খাবার সংরক্ষণ এবং বহনে কার্যকর। এটি বারবার ব্যবহার করা যায়, ফলে এটি দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক এবং পরিবেশগতভাবে উপকারী।
বাঁশ ও বেত দিয়ে তৈরি ব্যাগ, ঝুড়ি বা অন্যান্য পণ্য পরিবেশবান্ধব এবং দীর্ঘস্থায়ী। এগুলো কৃষিপণ্য পরিবহণ ও সাজসজ্জায় ব্যবহৃত হয়। কর্নস্টার্চ বা ভুট্টার গুঁড়া থেকে তৈরি বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিক পলিথিনের কার্যকর বিকল্প হতে পারে। এটি দ্রুত পচনশীল এবং পরিবেশে কোনো ক্ষতি করে না। নারকেলের খোসা বা ধানের ছোবড়া থেকে তৈরি পণ্য প্যাকেজিং এবং ব্যাগ হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি সহজে মাটিতে মিশে যায়। বিকল্প পণ্যের ব্যবহার বাড়ানোর ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ যেমন রয়েছে, তেমন সম্ভাবনাও রয়েছে। সচেতনতার অভাব, খরচ বেশি হওয়া, এবং সহজলভ্যতার সীমাবদ্ধতা চ্যালেঞ্জ তৈরি করলেও, প্রচারণা, নীতিমালা বাস্তবায়ন এবং প্রযুক্তির উন্নয়নের মাধ্যমে এসব পণ্যকে জনপ্রিয় করা সম্ভব।
পলিথিনের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জনগনকে সচেতন করার জন্য রেডিও ও টেলিভিশনে পলিথিন দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব এবং এর বিকল্প সম্পর্কে বিজ্ঞাপন, ডকুমেন্টারি ও বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা প্রয়োজন। পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে নিয়মিত নিবন্ধ, ফিচার এবং বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট, ভিডিও এবং তথ্যচিত্র প্রচার করা যেতে পারে।  স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে পলিথিনের ক্ষতিকর দিক নিয়ে সেমিনার ও কর্মশালার আয়োজন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। পলিথিন ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করতে স্থানীয় নেতাদের নেতৃত্বে প্রচারণা চালানোসহ সরকারি পর্যায়ে আইন বাস্তবায়নের পাশাপাশি সচেতনতামুলক নিয়মিত কর্মসূচি আয়োজন করা হচ্ছে। এনজিও ও পরিবেশবাদী সংস্থাগুলোর মাধ্যমে জনসাধারণকে সচেতন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পরিবেশবান্ধব পণ্যের ব্যবহার উৎসাহিত করতে পলিথিনের বিকল্প, যেমন পাটের ব্যাগ, কাপড়ের ব্যাগ বা কাগজের ব্যাগের ব্যবহার জনপ্রিয় করার উদ্যোগ নিতে হবে। কম খরচে এসব পণ্য সহজলভ্য করার উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
পলিথিনের বিকল্প টেকসই প্রযুক্তির উন্নয়নের জন্য গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগ বাড়ানো উচিত। সরকার, শিল্পখাত এবং সাধারণ মানুষ সবাই মিলে কাজ করলে পলিথিনের বিকল্প টেকসই প্রযুক্তির উন্নয়ন সম্ভব। নতুন প্রযুক্তি উন্নয়নে বিনিয়োগের জন্য যথেষ্ট অর্থ বরাদ্দ করতে হবে। সাধারণ মানুষের কাছে নতুন প্রযুক্তিগুলো সহজলভ্য করার উদ্যোগ নেওয়া দরকার। সর্বোপরি, নতুন প্রযুক্তিগুলোর পরিবেশগত প্রভাব বিবেচনা করতে হবে।  পলিথিনের বিকল্প টেকসই প্রযুক্তির উন্নয়ন একটি জটিল প্রক্রিয়া, তবে এটি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগ। অপরদিকে, আইনের পরিধি আরও বাড়িয়ে পলিথিন ব্যবহারের জন্য জরিমানা এবং অন্যান্য শাস্তির পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়ে দোষীদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।  আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে পলিথিন ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে উৎসাহিত করতে হবে। পলিথিন উৎপাদনকারী এবং বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়ে বাজার থেকে পলিথিন উঠিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে।
পলিথিন দূষণ বৈশ্বিক পরিবেশগত সংকট হিসেবে দেখা দিয়েছে। এই সমস্যা মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সংগঠন ও উন্নয়ন সহযোগীদের সাথে যৌথ কর্মসূচি গ্রহণ করা হচ্ছে যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। সাউথ এশিয়া কোঅপারেটিভ এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম এর চলমান প্লাস্টিক ফ্রি রিভার্স অ্যান্ড সিজ ফর সাউথ এশিয়া প্রজেক্ট(প্লিজ) এর আওতায় একাধিক পাইলট প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। কয়েকটি বেসরকারি সংস্থাকে প্লাস্টিক বর্জ্য হ্রাসকরণে ও পরিবেশসম্মত ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করাসহ রিসাইকেল করার জন্য দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের গ্লোবাল প্লাস্টিক অ্যাকশন পার্টনারশিপের সাথে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাইকা ও জিআইজেড এর সাথে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করতে যাচ্ছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা প্রয়োজন।
উন্নয়নশীল দেশগুলোর বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় উন্নত দেশের কারিগরি ও আর্থিক সহায়তার পরিমাণ বাড়াতে হবে। পলিথিন দূষণ একটি বৈশ্বিক সংকট, যার প্রতিক্রিয়া স্থানীয় পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি টের পাওয়া যায়। এটি প্রতিরোধে সরকার ও জনগণের সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন। পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এ সামগ্রী থেকে মুক্তি পেতে আমাদের এখনই কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পলিথিনের ব্যবহার হ্রাস করে এবং পরিবেশবান্ধব পণ্যকে অগ্রাধিকার দিয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে।
পলিথিন দূষণ রোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধির প্রচেষ্টা সফল করতে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। সরকারি, বেসরকারি এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করা গেলে একটি পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। পলিথিনের ব্যবহার কমানো গেলে পরিবেশ দূষণ কমবে। পলিথিনের বিকল্প ব্যবহার করে আমরা আমাদের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে পারি। তাই আজ থেকেই আমরা সবাই মিলে পলিথিনের বিকল্প ব্যবহার করার অভ্যাস গড়ে তুলি। সাধারণ মানুষকে পলিথিনের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জানানো এবং তাদের জীবনযাত্রায় পলিথিনের বিকল্প ব্যবহার উৎসাহিত করা হলে এ সমস্যা সমাধানে কার্যকর ভূমিকা রাখা সম্ভব হবে।
আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের ব্যবহার্য সামগ্রীর তালিকায় প্লাস্টিকের অবস্থান শীর্ষেই বলা চলে। ওজনে হালকা, ঝামেলাবিহীন ব্যবহার এবং দামে সস্তা হওয়ায় স্বল্প সময়ে এর জনপ্রিয়তা বেড়েছে বহুগুণে। বর্তমানে বিশ্ব জুড়ে ওয়ানটাইম বা একক ব্যবহার্য প্লাস্টিকের ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে উল্লেখযোগ্যহারে। রেস্টুরেন্ট, আবাসিক হোটেল, এয়ারলাইনস, সুপারশপ, কাঁচাবাজার, দোকান, বিভিন্ন উৎসব-আয়োজনে খাবারের প্লেট থেকে শুরু করে চায়ের কাপ, জুসের স্ট্র, বিপণন থলে কিংবা বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্যের মোড়ক সবকিছুতেই ব্যবহৃত হচ্ছে ওয়ানটাইম প্লাস্টিক।
বিশ্বব্যাংকের পরিসংখ্যান মতে, গত ১৫ বছরে তিন গুণের বেশি বেড়েছে প্লাস্টিকের ব্যবহার। আপাতদৃষ্টিতে নিরীহ মনে হলেও, পরিবেশ এবং জনস্বাস্থ্যের ওপর প্লাস্টিকের রয়েছে মারাত্মক প্রভাব। যার মূল্য পরিশোধ করতে আমাদের ভুগতে হতে পারে শত-সহস্র বছর। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের তথ্যমতে, বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর ৩৮০ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক উৎপাদন করা হয় যার অর্ধেক একক ব্যবহার্য প্লাস্টিক। উৎপাদনের সঙ্গে সঙ্গে একইহারে বাড়ছে তা থেকে সৃষ্ট বর্জ্যের পরিমাণ। বর্তমানে প্লাস্টিক বর্জ্য সমগ্র বিশ্বের গলার কাঁটা। ধারণা করা হয়, পৃথিবীর সব প্লাস্টিক বর্জ্য একত্র করলে উচ্চতায় তা মাউন্ট এভারেস্টকেও ছাড়িয়ে যাবে।
কার্বনের পলিমার যৌগ পলিইথিলিন, পলিস্টাইরিন, পলিপ্রপিলিন ইত্যাদি দ্বারা উৎপন্ন হয় ওয়ানটাইম প্লাস্টিক যা সাধারণত একবারের বেশি ব্যবহার করা যায় না। তবে কার্যকারিতায় একক ব্যবহার্য হলেও বৈশিষ্ট্যে এরা নন-বায়োডিগ্রেডেবল বা অপচ্য, ফলে বছরের পর বছর ধরে বর্জ্য হিসেবে অবস্থান করে পরিবেশে। সময়ের সঙ্গে পরিবেশের তাপ এবং চাপে ছোট টুকরো বা মাইক্রোপ্লাস্টিকে পরিণত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে মাটিতে, পানিতে, বাতাসে। এসব অপচনশীল বর্জ্য দীর্ঘদিন মাটিতে অবস্থান করায় ক্রমশ কমে আসছে মাটির জৈব উপাদানসমূহ, ফলে দূষিত হয়ে পড়ছে মাটি। যার প্রভাব পড়ছে জীবজগৎ ও পরিবেশের ওপর। নষ্ট হচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশগত ভারসাম্য। অতিক্ষুদ্র এই কণাগুলো পানিতে মিশে পৌঁছে যাচ্ছে জলজ ও স্থলজ প্রাণীদের পরিপাকতন্ত্রে। খাদ্যচক্রের আবর্তে সেগুলো আবার প্রবেশ করছে মানব-শরীরে। প্লাস্টিকের অতিক্ষুদ্র এসব কণা বাতাসে ছড়িয়ে পড়ার ফলে দূষিত হচ্ছে বায়ু। শুধু পরিবেশ বিপর্যয়ই নয়, প্লাস্টিক বর্জ্যের কারণে ঝুঁকিতে রয়েছে জনস্বাস্থ্যও।
গবেষকরা বলছে, প্লাস্টিক কণা শরীরে প্রবেশ করার ফলে অ্যালার্জি, পাচনতন্ত্রের সমস্যা, ক্যানসার, অ্যাজমা, অটিজম, হরমোনজনিত সমস্যা, গর্ভপাত ইত্যাদি নানান রোগের সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। এসব বর্জ্য পোড়ালে তা থেকে সৃষ্ট বিষাক্ত ধোঁয়া শরীরে প্রবেশ করে সৃষ্টি করছে ব্রংকিয়াল অ্যাজমা ও শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যা। প্লাস্টিকের মধ্যে থাকে বিসফেনল নামের টক্সিক উপাদান, যা গরম খাবারের সঙ্গে মিশে নিয়মিত শরীরে ঢুকলে মহিলাদের ইস্ট্রোজেন হরমোনের কাজের স্বাভাবিকতা বিঘ্নিত হয়। এর ফলে শরীরের ক্লান্তি, মস্তিষ্কের ক্ষমতা কমে যাওয়াসহ একাধিক রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এছাড়া প্লাস্টিক নরম করতে ব্যবহৃত থ্যালেট ঝুঁকি বাড়ায় টাইপ-২ ডায়াবেটিসের। অস্ট্রেলিয়ার নিউ ক্যাসল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা মতে—বছরে ৯ আউন্স ওজনের ১ লাখ ২০ হাজার প্লাস্টিক কণা অনবরত খাচ্ছে মানুষ। এসব প্লাস্টিক কণার উৎস পানি, চিংড়ি-কাঁকড়া-কাছিমজাতীয় মাছ ও লবণ।
আমাদের দেশে শহরাঞ্চলের বৃহত্সংখ্যক জনগোষ্ঠীই প্রতিনিয়ত অব্যবহৃত পলিথিন, শ্যাম্পু, পেস্ট, সসজাতীয় পণ্যের মিনিপ্যাক, স্ট্র, কটন বাড, বোতলের ক্যাপ, খাদ্যপণ্য মোড়ক ইত্যাদি যত্রতত্র ফেলে থাকে। এছাড়া খাদ্য ও প্রসাধনপণ্যের নানা ধরনের মিনিপ্যাক ব্যবহারের আধিক্যে কোনো কোনো ক্ষেত্রে শহরের তুলনায় গ্রাম এলাকায় প্লাস্টিক বর্জ্য পাওয়া যায় বেশি। এনভায়রন্টমেন্ট সোশ্যাল ডেভলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও)-এর জরিপ বলছে, বাংলাদেশে বছরে ওয়ান টাইম প্লাস্টিক থেকে সৃষ্ট বর্জ্য পরিমাণ ৮৬ হাজার ৭০৭ টন, যার ৬৩ শতাংশই আসে খাদ্যপণ্য মোড়ক থেকে। নালা বা নর্দমার মাধ্যমে এগুলো পৌঁছে যায় খাল-বিল, নদী কিংবা সমুদ্রে। বছরের পর বছর ধরে মুক্ত কিংবা বদ্ধ জলাশয়ে জমে থাকা এসব প্লাস্টিক বর্জ্যের কারণে হারাতে বসেছে প্রাণী-বৈচিত্র্য। হুমকির মুখে পড়ছে আমাদের মৎস্য শিল্প এবং সুনীল অর্থনীতি। ক্রমাগত পানি দূষণের ফলে উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট বেড়েই চলেছে, পোড়ানো বর্জ্য থেকে উৎপন্ন গ্রিনহাউজ গ্যাস প্রতিনিয়ত বাড়াচ্ছে পরিবেশের তাপমাত্রা—যা জনস্বাস্থ্য এবং প্রাণীকুলের জন্য অশনিসংকেত।
অথচ প্লাস্টিক নির্ভরশীলতার ফলে বিশ্ব জুড়ে এর ব্যবহার বন্ধে দেখা যাচ্ছে অনীহা। ব্যয়বহুল এবং সময়সাপেক্ষ হওয়ার ফলে কারখানাগুলোতেও রয়েছে পুনঃ প্রক্রিয়াজাতকরণে অনাগ্রহ। বাংলাদেশে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (২০০২ সালের সংশোধিত)-এর মাধ্যমে প্লাস্টিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হলেও অসাধু ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্যে তা কার্যকর হয়ে ওঠেনি। অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার এবং সৃষ্ট বর্জ্য প্লাস্টিককে পরিণত করেছে সভ্যতার অভিশাপে। প্লাস্টিক দূষণে ক্রমেই দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির দিকে এগিয়ে চলেছে মানবসভ্যতা। তাই অবিলম্বে এর ব্যবহার বন্ধে উদ্যোগী হতে হবে। প্লাস্টিক উৎপাদন, পরিবহন, বিপণনে নিষেধাজ্ঞা প্রণয়ন এবং প্লাস্টিকের বিকল্প ব্যবহারে জনগণকে উত্সাহ প্রদানের ব্যবহার অনেকাংশেই কমিয়ে দিতে পারে। পাশাপাশি প্রয়োজন আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং বৈশ্বিক সচেতনতা। পরিবেশ এবং জনস্বাস্থ্য রক্ষায় প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধে এখনই উদ্যোগী না হলে মানবসভ্যতার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখাই হবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মৎস্যভান্ডার নামে খ্যাতবিশ্ব ঐতিহ্য পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে পলিথিন ও প্লাস্টিক দূষণ। বনের মাটি ও পানিতে উদ্বেগজনক হারে মিলছে প্লাস্টিকের অত্যন্ত ক্ষুদ্র অংশ মাইক্রোপ্লাস্টিক। প্লাস্টিক ও পলিথিন হুমকি বাড়াচ্ছে জলজ ও স্থল বন্যপ্রাণী এবং গাছপালার। মাঝে মধ্যে বানর পলিথিন খেয়ে ফেলছে।
শুশুক-ডলফিন চোখে ভালো দেখে না। তারাও পলিথিন পেলে জেলিফিশ মনে করে খেয়ে ফেলে। গায়ে পলিথিন জড়িয়ে মারা যাচ্ছে কচ্ছপ। অন্যান্য জলজ প্রাণীও প্লাস্টিকের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশ খেয়ে ফেলছে। গাছের শ্বাসমূলের ওপর পলিথিন ও প্লাস্টিকসামগ্রী পড়ে ক্ষতি হচ্ছে। প্লাস্টিক দূষণের কারণে বনের স্থল ও জলজ প্রাণী এবং গাছপালার হুমকি বাড়ছে।
আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে সুন্দরবনের অবদান অপরিসীম। এখান থেকে প্রতিবছর প্রায় ৪৬০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করে সরকার যা স্থানীয় জনগণের জীবিকা এবং দেশের অর্থনীতিতে সরাসরি অবদান রাখে। কিন্তু প্লাস্টিক দূষণ সুন্দরবনের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সুন্দরবনের ৫৪টি নদীতে প্রতিদিন প্রায় ৫০ টন পলিথিন ও প্লাস্টিক জমা হয়ে পরিবেশের ভারসাম্য হারাচ্ছে। সুন্দরবনের উপর বিরুপ প্রভাব পড়ছে।
বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনে সারা বছরই কম-বেশি দর্শনার্থী থাকেন। দীর্ঘক্ষণ বনের মধ্যে অবস্থান করায় বিভিন্ন ধরনের খাবার ও পানির জন্য অনটাইম প্লাস্টিকের ব্যবহার করেন তারা। ব্যবহার শেষে এসব প্লাস্টিকের মোড়ক এবং খালি বোতল সুন্দরবনে ফেলে দেওয়া হয়। সুন্দরবনের মধ্যে পর্যটক ও বনজীবীরা যেখানে সেখানে পলিথিন, চিপস, চানাচুর, বিস্কুটসহ বিভিন্ন খাবারের প্যাকেট, পানির বোতল, একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিকের থালা ও কাপ ফেলে থাকে।
বনের যেসব এলাকায় মানুষের যাতায়াত বেশি, সেখানে প্লাস্টিক দূষণও বেশি। তবে পর্যটক ও বনজীবীরা শুধু সুন্দরবনের ভেতরে গিয়েই দূষণ ঘটাচ্ছেন না, বনসংলগ্ন লোকালয় থেকেও এগুলো জোয়ার-ভাটায় নদীর পানিতে ভেসে বনে যায়। বনসংলগ্ন ৮০টি গ্রাম থেকে ৫৪টি নদী-খাল হয়ে জোয়ারের সময় একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিকের থালা ও কাপ বনের মধ্যে চলে যাচ্ছে। ফলে প্লাস্টিক বর্জ্যে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি সুন্দরবনের প্রাণিকূলের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।
সুন্দরবন ও উপকূলীয় এলাকা এখন প্লাস্টিকে সয়লাব। একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনের তিনটি প্রধান নদীর অন্তত ১৭ প্রজাতির মাছ ও ৩ প্রজাতির শেলফিশ মাইক্রো-প্লাস্টিকে সংক্রমিত। প্রতি বৎসর গড়ে প্রায় ১৩ হাজার মাইক্রোপ্লাস্টিক খাচ্ছে একজন মানুষ। দেশের ৭৩ শতাংশ মাছে প্লাস্টিকের ক্ষুদ্র কণার অস্তিত রয়েছে। শুধু মাছ নহে, পানি, লবণ, চিনি, আটা, বাতাস প্রভৃতিতেও মিশে যাচ্ছে। এসব মাছ খাওয়ার মাধ্যমে মানুষের খাদ্যশৃঙ্খলে প্লাস্টিক কণা প্রবেশ করছে।
পাচনতন্ত্র, লিভার ও কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এমনকি মাতৃদুগ্ধ ও মানবভ্রূণ-শুক্রাণুতেও এর অস্থিত মিলছে। নারীদের বন্ধ্যাত্বের কারণও হতে পারে এ প্লাস্টিক কণা। তাই এখনই সময় সুন্দরবন ও উপকূলীয় এলাকায় একবার ব্যবহার্য সব ধরনের প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করার।
অনিয়ন্ত্রিত প্লাস্টিকের বর্জ্য প্রতিনিয়ত জলাভূমি, নদনদীতে গিয়া পড়ছে। আর জোয়ার ভাটার টানে সুন্দরবন ও সমুদ্রে গিয়ে স্থিতি হচ্ছে। ডাস্টবিন, ড্রেনসহ নানা স্থানে ফেলে দেওয়া পলিথিন বিভিন্নভাবে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করে। পলিথিন নদীর তলদেশে জমা হয়ে নদীর তলদেশও ভরাট করে ফেলে। শুধু ভরাট হওয়া নয়, নদীর তলদেশে বর্জ্য ও প্লাস্টিকের আস্তরণ এতটাই পুরু হয়েছে যে, ভাটার তোড়েও সেসব অপসারিত হতে পারে না।
অনেক সময় ভারী নৌযান পর্যন্ত আটকে যায়। নদীর নাব্য ঠিক রাখতে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ নিয়মিত খনন করে থাকে। কিন্তু পলিথিন ও প্লাস্টিকের আস্তরণের কারণে সেই খননকাজও চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। নদী থেকে সাগর ও মহাসাগরেও প্রতিনিয়ত জমছে বহু প্লাস্টিক-বর্জ্য। এই জঞ্জাল নদীর তলদেশের প্রাণিসম্পদ ও উদ্ভিদ তথা সার্বিকভাবে জীববৈচিত্র্যেরও অপূরণীয় ক্ষতিসাধন করছে।
শুধু সুন্দরবনে একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করলে হবে না, সুন্দরবনসংলগ্ন নদ-নদী ও উপকূলীয় এলাকায়ও প্লাস্টিক বন্ধ করতে হবে। প্লাস্টিক দূষণ ও শিল্প দূষণে সুন্দরবনের প্রাণবৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে। একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদন বন্ধ করতে হবে। গ্রিনহাউস গ্যাসের একটি কারণ প্লাস্টিক। এটি তৈরিতে প্রায় ৩৮ ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহৃত হয়। এর মধ্যে ১২ থেকে ১৮ ধরনের কেমিক্যাল অত্যন্ত ক্ষতিকর।৯
প্লাস্টিক দূষণ বিশ্বব্যাপী এক জটিল সমস্যা; যা পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য, অর্থনীতি ও মানব স্বাস্থ্যের জন্য এক বিরাট হুমকি। মানবসৃষ্ট প্লাস্টিক দূষণ পৃথিবীতে নানা রকম ইকোসিস্টেমের জন্য এক ভয়ঙ্কর বিপদ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। বিপন্ন করে তুলেছে পৃথিবীতে মানুষ ও অন্যান্য জীবের অস্তিত্বকে। পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর প্লাস্টিকজাত পণ্য বা পলিথিন ব্যাগ শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বজুড়েই মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাম্প্রতিককালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সিনথেটিক ব্যাগসহ পরিবেশ বিনাশক অন্যান্য উপাদানের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। ঝুঁকে পড়ছে প্রাকৃতিক তন্তু ব্যবহারের দিকে। দেশে প্লাস্টিক দূষণের মাত্রা ও প্রকৃতি সম্পর্কে সম্যক জ্ঞানলাভ এবং দূষিত পরিবেশকে পুনরুদ্ধারের জন্য জাতীয়ভাবে আন্তঃবিভাগীয় সমন্বিত গবেষণা প্রয়োজন।
বিজ্ঞানের অন্যান্য আবিষ্কারের মতো প্লাস্টিকের আবিষ্কারও ছিল চমকপ্রদ ও কল্যাণকর। তবে প্লাস্টিক বর্জ্যরে অব্যবস্থাপনা আজ মানবসভ্যতাকে ফেলেছে এক ভয়ঙ্কর বিপদের মুখে। প্লাস্টিক ও ন্যানো প্লাস্টিক বর্জ্য নিঃসৃত রাসায়নিক পদার্থ জীবের শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন এবং ক্যান্সারসহ নানা রকম দুরারোগ্য ব্যাধির কারণ হতে পারে। প্লাস্টিক দূষণ বিশ্বের সব দেশে এবং সব পরিবেশে এমনকি মাউন্ট এভারেস্টের চূড়া, গভীর সমুদ্রের তলদেশ এবং মেরু অঞ্চলেও বিস্তৃত। পৃথিবীতে প্রতিবছর ৪৫ কোটি টনের বেশি প্লাস্টিক বর্জ্য পরিবেশে যোগ হচ্ছে।

জন্মভূমি ডেস্ক December 10, 2025
Share this Article
Facebook Twitter Whatsapp Whatsapp LinkedIn Email Copy Link Print
Previous Article সুন্দরবনের উপকূলে দেশীয় অর্ধশত প্রজাতির মাছের অস্তিত্ব বিলীন
Next Article নড়াইলে ৫ ইটভাটা গুড়িয়ে দিল পরিবেশ অধিদফতর

দিনপঞ্জি

December 2025
S M T W T F S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031  
« Nov    
- Advertisement -
Ad imageAd image
আরো পড়ুন
সাতক্ষীরা

মহান মুক্তিযুদ্ধে সাতক্ষীরার কিছু কথা

By জন্মভূমি ডেস্ক 6 hours ago
খুলনা

ডুমুরিয়ায় স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যা

By জন্মভূমি ডেস্ক 9 hours ago
খেলাধূলা

মেসি ভারত সফর করতে কত টাকা নিয়েছেন জানা গেল

By জন্মভূমি ডেস্ক 9 hours ago

এ সম্পর্কিত আরও খবর

সাতক্ষীরা

মহান মুক্তিযুদ্ধে সাতক্ষীরার কিছু কথা

By জন্মভূমি ডেস্ক 6 hours ago
জাতীয়তাজা খবর

যেকোনো মূল্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে হবে

By জন্মভূমি ডেস্ক 11 hours ago
সাতক্ষীরা

তালায় শাহ্জালাল ইসলামী এজেন্ট ব্যাংকের শাখা উদ্বোধন

By জন্মভূমি ডেস্ক 12 hours ago

প্রতিষ্ঠাতা: আক্তার জাহান রুমা

প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক: হুমায়ুন কবীর বালু

প্রকাশনার ৫২ বছর

দৈনিক জন্মভূমি

পাঠকের চাহিদা পূরণের অঙ্গীকার

প্রতিষ্ঠাতা: আক্তার জাহান রুমা

প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক: হুমায়ুন কবীর বালু

রেজি: কেএন ৭৫

প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক: আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত

Developed By Proxima Infotech and Ali Abrar

Removed from reading list

Undo
Welcome Back!

Sign in to your account

Lost your password?