
মান্না দে, ফকিরহাট : বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলায় আবাদকৃত জমির পাশাপাশি প্রতি ইঞ্চি পতিত ও অনাবাদি জমিকে চাষের আওতায় এনে কৃষি বিপ্লব ঘটিয়েছে উপজেলা কৃষি বিভাগ। চাষের আওতায় আসায় উপজেলার রাস্তা, নদীর পাড়, বেড়িবাঁধসহ সকল স্থানের পতিত জমি এখন সবুজে ছেয়ে গেছে। ফলে বছরে প্রায় ২ লাখ ৩২ হাজার ৫৮৮ মেট্রিক টন কৃষিজাত পণ্য উৎপাদন হচ্ছে উপজেলাটিতে।
উপজেলা পরিষদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় এই সবুজায়নের মূল কাজটি পরিচালনা করেছেন ফকিরহাটের সাবেক কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো: নাছরুল মিল্লাত। উন্নত বীজ ও প্রযুক্তির ব্যবহার, নিরাপদ ফসল উৎপাদনে কৃষকদের প্রশিক্ষণ, উন্নত ফলনশীল জাতের বীজ সংগ্রহশালা, রোগ ও পোকামাকড় চিহ্নিতকরণ মিউজিয়াম, জৈব ও রাসয়নিক বালাইনাশক গ্যালারী স্থাপন, নদী ও রাস্তার ধারে ভেষজ বাগান স্থাপন ও কৃষকদের ন্যায্য মূল্যে পণ্য বিক্রির উদ্দেশ্যে নিরাপদ সবজি বিপণন কেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে কৃষি ক্ষেত্রে সফলতা পাওয়া গেছে বলে কৃষি বিভাগ ও চাষীদের সাথে কথা বলে জানা যায়।
প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন মেনে প্রতি ইঞ্চি মাটি কৃষির আওতায় এনে কৃষি বিভাগের এ সাফল্যের জন্য কৃষিবিদ নাছরুল মিল্লাত জেলা কৃষি কর্মকর্তা, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান স্বপন দাশ ও ইউপি চেয়ারম্যানগণের প্রত্যক্ষ সহযোগিতার কথা জানান।
উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, ২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ অর্থবছরে ফকিরহাটে আবাদকৃত জমির পরিমান ছিল ১৭ হাজার ৫২৮ হেক্টর এবং কৃষিজাত পণ্য উদপাদন হয়েছিল ১ লক্ষ ১২ হাজার ৭০৫ মেট্রিক টন। অপর দিকে ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ অর্থবছরে ফকিরহাটে পতিত জমিকে চাষের আওতায় এনে ২০ হাজার ২৭১ হেক্টর জমি আবাদ হয়। এতে শস্য উৎপাদন হয়েছে ২ লাখ ৩২ হাজার ৫৮৮ মেট্রিক টন। ফলে উপজেলাটিতে শতকরা ১০৬ ভাগ কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে।
উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা নয়ন কুমার সেন জানান, কৃষিবিদ নাছরুল মিল্লাত স্যারের নেতৃত্বে উপজেলা কৃষি বিভাগ কৃষি উৎপাদনকে টেকসই করতে উপজেলার ১২টি গ্রামকে ভার্মি কম্পোস্ট ভিলেজ বা কেচোঁ সারের গ্রাম হিসেবে তৈরি করেন। এখানকার কেচোঁ সার ও অন্যান্য গ্রামগুলোতে উৎপাদিত জৈব সার উপজেলার ১৭ হাজার কৃষক ব্যবহার করেন। এছাড়াও প্রায় ৪ হাজার ৫০০ জন কৃষককে বিনামূল্যে উন্নত ফলনশীল বীজ ও ২ হাজার কৃষককে বিনামূল্যে সার প্রদান করা হয়েছে। যা ফকিরহাটে কৃষি বিপ্লবে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে।
ফকিরহাট উপজেলার সাবেক কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নাছরুল মিল্লাত মুঠোফোনে এ প্রতিবেদককে জানান, কৃষকদের সহযোগিতায় বেতাগার অর্গানিক কৃষিসহ উপজেলার ৮টি ইউনিয়নেই নিরাপদ কৃষিপণ্য উৎপাদন সম্ভব হয়েছে। এছাড়া পেরিলা, অ্যাভোকাডো, আলুভোকারাসহ অপ্রচলিত কৃষি চাষের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে উপজেলার কৃষকদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের মাধ্যমে।
তিনি আরও জানান, কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের পরামর্শ প্রদান, ধান খেতে অতন্দ্র জরিপ করে পোকা ও বালাই চিহ্নিত করা, কৃষক প্রশিক্ষণ, কৃষি সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য সরবরাহ এবং কৃষি উপকরণ প্রদানের মাধ্যমে ফকিরহাট কৃষিতে দারুণভাবে সফল হয়েছে।