মান্না দে, ফকিরহাট (বাগেরহাট) : বাগেরহাটের ফকিরহাটে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এ মুহুর্তে ফকিরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২২ জন ডেঙ্গ ুরোগী ভর্তি আছে। জুন মাস-২০২৩ থেকে এখন পর্যন্ত হাসপাতালে মোট ১৩২ ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এছাড়া ফকিরহাট ও পাশর্^বর্তী খুলনার বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে প্রায় অর্ধশত রোগী ভর্তি রয়েছে। ইতোমধ্যে ২জন রোগী মারা গেছেন। মুমূর্ষু অবস্থায় আছেন অনেক রোগী।
হাসপাতালের পরিসংখ্যান বিভাগের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, গত ৭ দিনে শুধুমাত্র স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আউট ডোরে ২ হাজার ৮৩৯ জন রোগী এবং জরুরী বিভাগে ৪২৫জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের বেশির ভাগ রোগী জ¦রসহ গায়ে ব্যাথার উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন। এছাড়া বেশ কয়েকটি বেসরকারি ক্লিনিক, কমিউনিটি ক্লিনিকের প্রতিদিন শতাধিক জ¦রের রোগী আসেন বলে জানা গেছে। এত বিপুল সংখ্যক রোগীর পরীক্ষার জন্য সরকারি হাসপাতালে নেই কোন ব্যবস্থা।
এ পরিস্থিতিতে ফকিরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরকারিভাবে ডেঙ্গু পরীক্ষার কোনো কিটস না থাকায় চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও জনসাধারণের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। গতমাসে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে ডেঙ্গু পরীক্ষার জন্য মাত্র ১৬০টি কিটস সরবরাহ করা হয়েছিল যা ৩-৪ দিনেই শেষ হয়ে যায়। হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষার প্রয়োজনীয় কিটস সরবরাহের জন্য চাহিদাপত্র দিয়েও পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানান উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।
ফকিরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শিশির বসু জানান, ডেঙ্গু শনাক্তের মাত্র ৬ থেকে ৭ ভাগ রোগী জটিলতা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। উপজেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর প্রকৃত সংখ্যা অনেক বেশি। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষার কোনো ব্যবস্থা নেই। বাইরের ক্লিনিক থেকে ডেঙ্গু পরীক্ষা করার পর সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে। হাসতাপালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডে রোগী সঙ্কুলন না হওয়ায় জেনারেল বেডেও ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে উপজেলার আট্টাকা, পাগলা শ্যামনগর, বৌলতলী, সাতশৈয়া, বালিয়াডাঙ্গা ও পাইকপাড়া গ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি।
হাসপাতালে ভর্তি অনেক রোগী জানান, জ¦র নিয়ে হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে আসলে চিকিৎসক ডেঙ্গু পরীক্ষার জন্য বলেন। কিন্তু হাসপাতালে ৫০ টাকায় পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় ৬গুণ বেশি টাকা দিয়ে বেসরকারি ক্লিনিক থেকে টেস্ট করাতে হয়েছে।
ফকিরহাট উপজেলা পারিষদ চেয়ারম্যান স্বপন দাশ বলেন, আমরা উপজেলাবাসীকে সচেতন করতে কাজ করছি। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সামাজিক সচেতনতার বিকল্প নেই। উপজেলা পরিষদের অর্থায়নসহ ফকিরহাট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পক্ষ থেকে মাইকিং, লিফলেট বিতরণ সহ বিভিন্ন সচেতনাতামূলক ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা হচ্ছে।
ফকিরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এএসএম মফিদুল ইসলাম বলেন, জ¦র হওয়ার তিন দিনের মধ্যে এন্টিজেন্ট টেস্ট করানো উচিৎ। হাসপাতালে এন্টিজেন্ট কিটস সংকটে ডেঙ্গু পরীক্ষার সম্ভব হচ্ছে না। বিষয়টি স্বীকার করে তিনি জানান, গত ২৩ জুলাই ৮০পিস ও ২০ আগস্ট ৮০পিস ডেঙ্গু টেস্ট কিটস স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে পাওয়া গিয়েছিল যা সরবরাহের ৩-৪ দিনের মধ্যে শেষ হয়ে গেছে। ক্রমবর্ধমান ডেঙ্গু রোগীর বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে টেস্ট কিটসের চাহিদা দেওয়া হয়েছে।