দেশের সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনার হার উদ্বেগজনক হওয়া সত্ত্বেও ফিটনেসহীন গাড়ির চলাচল রোধে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। বছরের পর বছর নির্বিঘ্নে চলছে ফিটনেসহীন গাড়ি। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্য বলছে, সারা দেশে ফিটনেসহীন গাড়ির সংখ্যা ৫ লাখ ৭১ হাজার ৪৮৪। তবে বাস্তবে এ সংখ্যা আরও বেশি। কারণ যেসব যানবাহনের ফিটনেস সনদ আছে, এটি শুধু সেসবের হিসাব। কিন্তু বাস্তবে ফিটনেস সনদ থাকা অনেক গাড়িরই প্রকৃত ফিটনেস নেই। বিআরটিএ’র ফিটনেস সনদ দেওয়ার প্রক্রিয়া ও এর যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তদবির ও দালালের মাধ্যমে ফিটনেস নবায়নের অভিযোগও অত্যন্ত জোরালো।
ফিটনেসহীন গাড়ি সড়ক দুর্ঘটনার একটি বড় কারণ। এসব গাড়ির চেসিস ও ব্রেকিং সিস্টেমে সমস্যা থাকে। ফলে অনেক সময় গাড়ি ব্রেক ফেইল করে গতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয় এবং দুর্ঘটনা ঘটে। অনেক সময় গাড়ি বিকল হয়ে সড়কে যানজট সৃষ্টি করে। ফিটনেসহীন গাড়ি বায়ুদূষণেরও একটি বড় কারণ। এসব গাড়ি থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। কালো ধোয়া সৃষ্টিকারী তথা ফিটনেসহীন গাড়ি চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ থাকলেও খোদ রাজধানীর সড়কসহ সারা দেশের সড়ক-মহাসড়কে তা অবাধে চলাচল করছে। এসব যেন দেখার কেউ নেই। জানা গেছে, এক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের লোকবল একটি বড় সমস্যা। উদাহরণস্বরূপ, শুধু ঢাকায় সড়ক আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে প্রয়োজন ১০০ ম্যাজিস্ট্রেট, অথচ বিআরটিএ’র অধীনে আছেন মাত্র পাঁচ-ছয়জন ম্যাজিস্ট্রেট। বিআরটির এ লোকবল সংকট দূর করা অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করি আমরা। দ্বিতীয়ত, ফিটনেস সনদ প্রদানে সব ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। তৃতীয়ত, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও পরিবহণ সমিতিগুলোকে ‘ম্যানেজ’ করে ফিটনেসহীন গাড়ি চলাচলের যে অনিয়ম চলে আসছে, তা বন্ধ করতে হবে কঠোরভাবে। সর্বোপরি পরিবহণ আইন ও অন্যান্য বিধান ভঙ্গের শাস্তি বাড়িয়ে তার কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে হবে। বস্তুত আমাদের সড়ক-মহাসড়কগুলোকে নিরাপদ করতে হলে ফিটনেসহীন গাড়ি, লাইসেন্সবিহীন চালক এবং এরূপ গাড়ির মালিকদের শাস্তির পাশাপাশি শ্রমিক সংগঠনগুলোকেও জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। সংশ্লিষ্ট সবাই সচেতন ও দায়িত্বশীল হলে নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করা কঠিন নয়।