
সিরাজুল ইসলাম, শ্যামনগর : সর্বপ্রথম বলতে হয় বাংলাদেশের রাজনীতিতে আলোচিত বিএনপির নেত্রী সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যু । যাহা বাঙালি জাতির কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে আজীবন । ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫ তার মৃত্যু হয় ।আরও একটি বছরের যবনিকাপাত ঘটল। শেষ হয়ে গেল ২০২৫ সাল। নানা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক টানাপোড়েন, উত্থান-পতন, প্রত্যাশা-হতাশার মাঝে সমাপ্তি ঘটেছে বছরটির। সময় এখন পেছন ফিরে তাকানোর—কী পেয়েছি, কী পাইনি; কী আশা করেছিলাম, কোথায় হতাশ হয়েছি, কী কী করতে চেয়েছি, কী কী করতে পারিনি—স্বাভাবিকভাবেই ২০২৫ সালের প্রান্তসীমায় দাঁড়িয়ে এই হিসাব মেলানোর একটি বিরাট তাৎপর্য আছে; আমাদের অর্জনগুলোর উদ্যাপন এবং আমাদের ভুলগুলো থেকে শেখার জন্য। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় সেগুলো একটি পাথেয় হয়ে থাকতে পারে।
রাজনৈতিক দিক থেকে পুরো বছরটি নানা উদ্বেগ, শঙ্কার, আশা-নিরাশার মধ্যে ছিল। জনগণের কাছে নানান রাজনৈতিক সমীকরণ এবং সেই সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্য খুব পরিষ্কার ছিল না। রাজনৈতিক অঙ্গনে কোন দল প্রাধান্য পাচ্ছে, কে কার সঙ্গে জোট বাঁধছে, তা নিয়ে জল্পনাকল্পনা সারা বছর ধরে ছিল। জনমনে, বিশেষত নারীদের মনে প্রশ্ন ছিল যে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো যদি ক্ষমতায় যায়, তাহলে নারী-স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হবে কি না। নির্বাচন হবে, নাকি হবে না, তা নিয়েও নানান মহল প্রশ্ন তুলেছিল। নির্বাচনের তারিখ নিয়েও একটা ধোঁয়াশা ছিল। নানা রাজনৈতিক দল বিভিন্ন সময় উল্লেখ করছিল সম্ভাব্য নির্বাচন সম্পর্কে। অন্তর্বর্তী সরকারও বিভিন্ন সময়ে নানা সময়কালের কথা বললেও সুনির্দিষ্ট তারিখ বলছিল না। অবস্থাটা এমনই ছিল যে অন্তর্বর্তী সরকারের সদিচ্ছা নিয়েও কথা বলেছিলেন নানা বিজ্ঞজন। জনমনে একটা বড় জিজ্ঞাসা ছিল যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কবে দেশে আসবেন। সে ব্যাপারে নানা মুনির নানা মত ছিল।
২০২৫ সালের শেষ নাগাদ সেই সব শঙ্কা-আশঙ্কার অবসান ঘটেছে। নির্বাচনের তারিখ নির্দিষ্ট হয়েছে ২০২৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। ভোটার তালিকাও সম্পন্ন হয়েছে। বিভিন্ন আসনে প্রার্থী তালিকাও বেরোচ্ছে। তারেক রহমানও কদিন আগে দেশে ফিরেছেন। সুতরাং রাজনীতির অঙ্গনে নানান বিষয়ে একটা স্বস্তি এবং ভারসাম্য ফিরে এসেছে। যদিও বিভিন্ন দিকে নানা অনিশ্চয়তা এখনো বিদ্যমান। এসব অনিশ্চয়তার অন্যতম কারণ হিসেবে অনেকে বলেছেন, কোনো কোনো অপশক্তি এই নির্বাচন বানচাল করার জন্য তৎপর। রাজনীতি-সম্পৃক্ত সহিংসতা বেশ ব্যাপক। এ ক্ষেত্রে নানান জায়গায় সন্ত্রাসও চলছে। সত্যি কথা বলতে, আমরা এখনো যথার্থ রাজনৈতিক পরিপক্বতা অর্জন করতে পারিনি এবং গণতন্ত্রের একটি সংস্কৃতি গড়ে তুলতে পারিনি।
অস্বীকার করার উপায় নেই, ২০২৫ সালে অর্থনীতি বিষয়টিই সাধারণ মানুষের মনের বিরাট অংশ জুড়ে ছিল। ২০২৫ সালে তাদের অর্থনৈতিক প্রত্যাশা ছিল অনেক, কিন্তু চিন্তাও তাদের কম ছিল না। সে প্রত্যাশা আর চিন্তা আবর্তিত হয়েছে তাদের জীবনের অর্থনীতি নিয়ে, যার মধ্যে রয়েছে বৈষম্য, মূল্যস্ফীতি, বেকারত্ব, ঋণ, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, মব সহিংসতা ইত্যাদি।
শেষ হয়ে যাওয়া বছরটিতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতা ছিল অনেকটাই নেতিবাচক। বাংলাদেশের প্রবহমান সমস্যাগুলোর শীর্ষে রয়েছে দারিদ্র্য ও অসমতা। গত তিন বছরে বাংলাদেশে দারিদ্র্য হার ১৮ শতাংশ থেকে ২১ শতাংশে উঠে গেছে। আজকে দেশের ৩ কোটি ৬০ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। আরও ৬ কোটি ২০ লাখ লোক দারিদ্র্যের ফাঁদে পড়ার হুমকিতে আছে। দারিদ্র্য-বহির্ভূত মানব-বঞ্চনা আরও তীব্রতর হচ্ছে। প্রায় ১১ কোটি মানুষের নিরাপদ সুপেয় জলের সুবিধা নেই। প্রাথমিক শিক্ষা শেষে ৫৭ শতাংশ শিশু দশম শ্রেণি পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে না। গত ছয় বছরে শিশুশ্রম বেড়ে গেছে—২০১৯ সালের ৬ শতাংশ থেকে ২০২৫ সালের ৯ শতাংশ পর্যন্ত। বর্তমানে বাল্যবিবাহের হার ৫৬ শতাংশ, যার মানে, ১৮ বছর অনূর্ধ্ব প্রতি দুজনের একজনকে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়। আমাদের অর্থনীতির বর্তমান অন্যতম বাস্তবতা হচ্ছে অসমতা ও বৈষম্য। বাংলাদেশের উচ্চতম ১০ শতাংশ মানুষ দেশের ৫৮ শতাংশ সম্পদের মালিক, আর দেশের নিচের দিকের ৫০ শতাংশ মানুষ (দেশের অর্ধেক লোক) ৪ শতাংশ সম্পদ ভোগ করে। দেশের উচ্চতম ২০ শতাংশ পরিবারে অনূর্ধ্ব ৫ বছরের শিশুমৃত্যুর হার যেখানে হাজারে ২০, সেখানে নিম্নতম ২০ শতাংশ জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে সে হার হচ্ছে হাজারে ২০ শতাংশ। সাম্প্রতিক সময়ে যদিও গ্রামীণ বাংলায় আয় অসমতা স্থিতিশীল রয়েছে, দেশের শহরাঞ্চলে তা বেড়ে গেছে।
কর্মবিহীন প্রবৃদ্ধি, বিপুল বেকারত্ব, খেলাপি ঋণ, উল্লেখযোগ্য মানব-বঞ্চনা বাংলাদেশ অর্থনীতিতে গেড়ে বসেছে। ২০১৩ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের শিল্প খাতে ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হলেও দেশের অর্থনীতিতে প্রায় ১১ লাখ কর্মসংস্থান চলে গেছে। এই সময়কালে পোশাকশিল্পের রপ্তানি তিন গুণ বেড়েছে, কিন্তু সেখানে কর্মসংস্থান স্থবিরই থেকে গেছে। সরকারি ভাষ্যমতে, দেশে বর্তমানে বেকারের সংখ্যা ২৭ লাখ। বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদপ্রাপ্তদের মধ্যে বেকারত্বের হার ১৩ শতাংশ। তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার দেশের সার্বিক বেকারত্বের হারের দ্বিগুণ। দেশের আর্থিক খাত একটি গভীর সংকটের মধ্যে আছে। বাংলাদেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে, যা বর্তমানে ৬ লাখ ৫৯ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশের ঋণভার এবং ঋণ পরিশোধের দায়ভার একটি সংকটজনক জায়গায় পৌঁছেছে। বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ ও রপ্তানি আয়ের অনুপাত ১৯২ শতাংশ, যেখানে এই অনুপাত ১৮০ শতাংশ হলেই আন্তর্জাতিক মুদ্রা ভান্ডার সেটাকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিবেচনা করে।
২০২৫ সালে বাংলাদেশে সঞ্চয়, বিনিয়োগ এবং সম্পদ আহরণের ক্ষেত্রে একটি শ্লথতা ছিল। দেশের কৃষি ও শিল্প উৎপাদন এখনো প্রার্থিত স্তরে পৌঁছায়নি। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি-সংকট এবং সেই সঙ্গে সামাজিক অস্থিরতা এই উৎপাদন স্তরকে আরও বিপর্যস্ত করেছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির নেতিবাচক প্রভাব মানুষের যাপিত জীবনকে প্রভাবিত করেছে এবং দেশে বিনিয়োগ নিম্নস্তরে রয়ে গেছে। অর্থনৈতিক মন্দা, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং অনিশ্চয়তা অর্থনীতিতে নানা নাজুকতা ও ভঙ্গুরতার জন্ম দিয়েছে। পোশাকশিল্পে অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। বহু উদ্যোক্তা সক্রিয় নয়, বিদেশি বিনিয়োগেও স্থবিরতা আছে। ফলে দেশের উৎপাদন ভিত্তিও দুর্বল এবং উৎপাদনের ধারাবাহিকতা নষ্ট হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সমস্যা বাংলাদেশ অর্থনীতির একটি সমস্যা হিসেবে বিরাজ করেছে। একদিকে উচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় একটি সমস্যা, অন্যদিকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে দেওয়া ভর্তুকিও একটি ভাবনার ব্যাপার। প্রতিযোগিতামূলক প্রক্রিয়া বাদ দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন চুক্তি সম্পাদন এবং সেই সঙ্গে জ্বালানি উৎপাদনে আমদানি করা উপকরণের ওপরে অতিরিক্ত নির্ভরতার ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেছে। জ্বালানি খাতে যথাযথ সমন্বয়ের অনুপস্থিতি এবং সেই সঙ্গে টাকার অবমূল্যায়ন বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। জ্বালানি খাতে যে বিপুলভর্তুকি দেওয়া হয়, তার বেশির ভাগই ভোগ করে সমাজের ধনাঢ্য এবং সম্পদশালী অংশ। আমাদের জ্বালানি খাতে দেওয়া ভর্তুকির ৫৪ শতাংশই যায় দেশের ৪০ শতাংশ সবচেয়ে সম্পদশালী গোষ্ঠীর কাছে।
২০২৫ সালের বাংলাদেশ অর্থনীতির অন্যতম বাস্তবতা ছিল নানান বিষয়ে বৈশ্বিক চাপ। প্রথমত, এ বছর বৈশ্বিক অর্থনীতি একটি প্রবৃদ্ধি-শ্লথতায় ভুগেছে। এর নেতিবাচক প্রভাব বাংলাদেশ অর্থনীতিতেও পড়েছে। বিশ্বের নানান জায়গার যুদ্ধ এবং সংঘাতের প্রভাবও এর সঙ্গে সম্পৃক্ত, সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কযুদ্ধের কারণে উন্নত বিশ্বে বাংলাদেশের রপ্তানি ব্যাহত হয়েছে। যদিও উত্তরণ সময় পিছিয়ে দেওয়ার কথা উঠেছে, কিন্তু সম্ভবত ২০২৬ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের পর্যায়ে উন্নীত হবে। এর ফলে বাংলাদেশ বৈশ্বিক অর্থনীতিতে কিছু কিছু সুযোগ হারাবে। যেমন স্বল্প বা শূন্য শুল্কে রপ্তানি সুবিধা, অনুদান সুবিধা ইত্যাদি। উন্নয়নশীল দেশ পর্যায়ে উন্নীত হলে বাংলাদেশ এসব সুবিধা পাবে না। প্রশ্ন হচ্ছে, সেসব আসন্ন সংকটের জন্য বাংলাদেশের প্রস্তুতি কতটা এবং সেই বিপৎসংকুল পথযাত্রায় বিজ্ঞতা, সংনম্যতা এবং সুচিন্তিত পরিকল্পনা নিয়ে সেই বিপদ মোকাবিলা করে সব সংকট উতরে বাংলাদেশ এগিয়ে যেতে পারবে কি না।
অসমতা বা বৈষম্য তো শুধু অর্থনৈতিক নয়, তা ব্যাপ্ত হয়েছে সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক বলয়েও। বৈষম্য শুধু ফলাফলে নয়, তা পরিস্ফুট হয়েছে সুযোগেও। দেশের দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসুবিধায় বঞ্চিত।
নারীর প্রতি বৈষম্য এবং সহিংসতা বাংলাদেশি সমাজের অসমতার অন্যতম বাস্তবতা। সুযোগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নারীরা বৈষম্যের শিকার হয়, যা প্রতিফলিত হয় ফলাফলে। ঘরে-বাইরে নানা হয়রানি আর সহিংসতার শিকার হয় নারীরা। সেসব নির্যাতনের অংশ হচ্ছে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, গৃহাভ্যন্তরের সহিংসতা এবং ধর্ষণ।
২০২৫ সালে একধরনের অনিশ্চয়তা বাংলাদেশের সমাজের জন্য একটি বিরাট সমস্যা হিসেবে অব্যাহত ছিল। সেই সঙ্গে সহিংসতা, সন্ত্রাস এবং মবতন্ত্রের ফলে এ দেশের সমাজ একটি শঙ্কার মধ্য দিয়ে অনিশ্চিত সময় পার করেছে। ‘মব ভায়োলেন্সকে’ ‘মব জাস্টিস’ বলে যৌক্তিকতা দানের প্রচেষ্টা পরিপূর্ণভাবে অন্যায়। ন্যায্যতা অনেক উঁচু মার্গের বিষয়। সহিংসতার মতো বিকৃত একটি পন্থা দিয়ে ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা করা যায় না। সমাজে ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠার জন্য যৌক্তিক, অর্থবহ এবং প্রাসঙ্গিক অনেক পন্থা আছে। একটি গণতান্ত্রিক সমাজের সেগুলোর ব্যবহার ও বাস্তবায়ন অত্যন্ত জরুরি। সেই সঙ্গে ‘মব ভায়োলেন্সকে’ কিছুতেই ‘মবোক্রেসির’ সমার্থক বলা যায় না। একটি হিংসাত্মক প্রক্রিয়াকে ‘ডেমোক্রেসির’ সঙ্গে তুলনা করা অন্যায়। চূড়ান্ত বিচারে, ‘মব ভায়োলেন্স’ হিংস্র সহিংসতা ভিন্ন কিছুই নয়।
দুই মাসের কম সময়ে বাংলাদেশ একটি জাতীয় নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে। বাংলাদেশের এই নির্বাচন নিয়ে গণমানুষের প্রত্যাশা অনেক। আমরা সবাই তাকিয়ে আছি সেই দিকে। আগামী নির্বাচন বাংলাদেশে একটি গণতান্ত্রিক পথযাত্রার শুরু করুক, গতিময়তা আনুক, সমাজে শান্তি এবং শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনুক, সেটাই আমরা চাই। ২০২৬ সাল বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের জন্য শান্তি, নিরাপত্তা এবং সমবৃদ্ধির সুবাতাস নিয়ে আসুক।
বছর গড়িয়ে চলে এসেছে একবারে শেষ প্রান্তে। আসুন একনজরে দেখে নেওয়া যাক বিদায়ী ২০২৫ সালে বিশ্বের আালোচিত ঘটনা ও বিষয়।
বছরের শুরুতেই আন্তর্জাতিক আলোচনার কেন্দ্রে উঠে আসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতি। ক্ষমতায় বসার পর থেকেই তিনি যেন গোটা বিশ্বের ওপর খড়গহস্ত হয়েছেন। তার নমুনা হিসেবে চীনের ওপর ১০০ শতাংশ এবং ভারতের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন তিনি। ভারতের ক্ষেত্রে এই শুল্কের মধ্যে ২৫ শতাংশ ছিল রাশিয়া থেকে তেল কেনার ‘শাস্তি’। ট্রাম্পের এই আগ্রাসী অবস্থান আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে উত্তেজনা ছড়ায়। বিশেষ করে আমেরিকা, চীন ও রাশিয়ার মধ্যে শুল্কনীতি ঘিরে শুরু হয় নতুন করে ঠাণ্ডা লড়াইয়ের দর কষাকষি, যা বহু মানুষের মনে পুরনো কোল্ড ওয়ারের স্মৃতি ফিরিয়ে আনে।
২০২৩ সালের অক্টোবরে শুরু হওয়া রক্তক্ষয়ী সংঘাত এ বছরের প্রায় শেষ নাগাদও চলেছে। ইসরায়েলের নৃশংস আগ্রাসী চরিত্র বছরজুড়েই দেখেছে বিশ্ববাসী। অবশেষে ২০২৫ সালের ১০ অক্টোবর হামাস ও ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। তবে যুদ্ধবিরতি কার্যকরের পরও দফায় দফায় শর্ত লঙ্ঘন করে ইসরায়া।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় বসার পর থেকেই ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানে নানা পদক্ষেপ নিয়েছেন। তিনি নিজেই দুপক্ষের প্রতিনিধির সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন। শেষ দফা বৈঠক হয়েছে বছরের শেষ সপ্তাহেও। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের ট্রাম্প বলেছেন, আলোচনায় বেশ অগ্রগতি হয়েছে। তবে এখনও কিছু বিষয় অমীমাংসিত রয়ে গেছে।
এ বছর ২২ এপ্রিল কাশ্মীর জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্রে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হনÑ যাদের প্রত্যেককেই ধর্মীয় পরিচয় বিবেচনায় গুলি করে হত্যা করা হয়। এই ঘটনার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে ভারত। সীমান্তে ব্যাপক উত্তেজনা দেখা দেয়। এই উত্তেজনার জের ধরে ভারত সিন্ধু চুক্তি স্থগিত করে। এক দেশ আরেক দেশের আকাশসীমা বন্ধ করে। পরবর্তী সময় ৭ মে থেকে ভারত পাকিস্তানে বিমান হামলা করে। পাকিস্তান দাবি করে, এতে ৫টি ভারতীয় বিমান বিধ্বস্ত করেছে তারা। পরবর্তী সময় ১০ মে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়। ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেনÑ এই যুদ্ধবিরতিতে তার জোড়ালো ভূমিকা রয়েছে। এ নিয়েও পরস্পরবিরোধী বক্তব্য বছরজুড়েই আলোচনার কেন্দ্রে ছিল।
গাজা যুদ্ধ কেন্দ্র করে ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনা চলছিল। এ বছর সেই উত্তেজনা সামরিক যুদ্ধে রূপ নেয়। এ বছর জুন মাসে ইসরায়েল তাদের ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ শুরু করে। এতে ইরানের শীর্ষ পারমাণবিক বিজ্ঞানীসহ শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তারা নিহত হন। এরপর জবাবে ইরানও ইসরায়েলে হামলা চালায়। এ পরিস্থিতিতে ২২ জুন অপারেশন মিডনাইট হ্যামারের অংশ হিসেবে মার্কিন বি-২ বোমারু বিমান ও টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা করে যুক্তরাষ্ট্র। বছর শেষে ট্রাম্প আবারও ইরানে হামলার হুমকি দিয়েছেন।
বিভিন্ন দাবি ও সোশ্যাল মিডিয়া ব্যান করার প্রতিবাদে নেপালে জেন জি আন্দোলন শুরু হয়। তৎকালীন সরকারের বিরুদ্ধে স্বজন পোষণের অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ দেখায় তারা। কে পি শর্মা ওলি পদত্যাগ করেন ৯ সেপ্টেম্বর। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন সুশীলা কার্কি। ২০২৬ সালের মার্চ মাসে দেশটিতে সাধারণ নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
বিতর্কিত সীমান্ত নিয়ে এ বছরের মাঝামাঝি সময়ে সীমান্ত সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে প্রতিবেশী থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া। দুই দেশই সংঘাত শুরুর জন্য একে অপরকে দায়ী করে। পরবর্তী সময় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও বছরের শেষ দিকে আবারও দেশ দুটির সীমান্তে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে। এতে দুই দেশের কয়েক লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তার মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া।
ক্যারিবীয় সাগরে মাদক পাচারের অভিযোগ করে একের পর এক নৌযানে হামলা করছে যুক্তরাষ্ট্র। এমনকি ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে উৎখাতের হুমকিও দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই বিষয়টিও বছরের শেষ দিকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বেশ আলোচিত ছিল।
প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতবিক্ষত হয়েছে একাধিক দেশ। আফগানিস্তানে ভয়াবহ ভূমিকম্পে তছনছ হয়ে যায় বিস্তীর্ণ এলাকা। ১০০০-এরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন অংশে বন্যায় কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। চীনেও বন্যার প্রভাব পড়ে। আফ্রিকার ইথিওপিয়াতে ১২০০ বছর পর জেগে ওঠা আগ্নেয়গিরি নতুন করে আতঙ্ক ছড়ায়।
পাকিস্তান অভিযোগ করছে, তাদের দেশে নিষিদ্ধ হওয়া তালেবান গোষ্ঠীকে মদদ দিচ্ছে আফগানিস্তান। এমনকি কাবুলের সহায়তা নিয়ে পাকিস্তানে অপতৎপরতা চালাচ্ছে তালেবানরা। আফগানিস্তানের তালেবান সরকার এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তবে এমন অভিযোগের ভিত্তিতে কাবুলসহ আফগানিস্তানের কয়েকটি স্থানে বিমান হামলা চালায় আফগানিস্তান। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের ব্যাপক অবনতি হয়।
এর মধ্যে আলোচিত - সমালোচিত ঘটনা প্রবাহ নিয়ে চলছে। নতুন বছর ২০২৬ সাল সবাই জন্য ভরে আনবে সুখকর এই প্রত্যাশায়।
২০২৫ সালে মার্চ মাগুরায় বোনের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হয় আট বছর বয়সী এক শিশু। পরে তার মৃত্যু হয়। শিশুটির ওপর নির্মম এই নির্যাতনের ঘটনা ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়। বিক্ষোভে ফেটে পড়ে সাধারণ মানুষ। শুরু হয় বিক্ষোভ-সমাবেশ। বছরের শুরুতে এটি ছিল সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা।
বছরের শুরুতে ১০ জানুয়ারি রাতে ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডে ব্যস্ত সড়কে প্রকাশ্যেই ২০-২৫ জন দুর্বৃত্তের এক থেকে দেড় মিনিটের অতর্কিত হামলার শিকার হন এলিফ্যান্ট রোড কম্পিউটার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি ওয়াহেদুল হাসান দীপু এবং ইপিএস কম্পিউটার সিটির (মাল্টিপ্ল্যান) যুগ্ম সদস্য সচিব এহতেশামুল হক। এ ঘটনার ১০-১২ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। তাতে চাপাতি দিয়ে কোপানোর নৃশংসতা দেখে আঁতকে ওঠে সাধারণ মানুষ। দুর্বৃত্তরা মুখ ঢেকে,হেলমেট পরে চালায় এ হামলা।
৯ জুলাই বুধবার সন্ধ্যা ৬টা। পুরান ঢাকায় স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের ৩ নম্বর ফটক। সামনে মানুষের জটলা। পাশ দিয়ে চলছে যানবাহন। এক ব্যক্তির প্রায় বস্ত্রহীন রক্তাক্ত দেহ ফটকের ভেতর থেকে টেনে বের করছে দুই যুবক। কালো প্যান্ট পরা খালি গায়ের এক তরুণ তাঁর গালে চড় মারছে। কালো গেঞ্জি পরা আরেকজন এসে ওই ব্যক্তির বুকের ওপর লাফাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর আরেকজন এসে একই কাজ করছে। এক পর্যায়ে আরেকজন এসে তাঁর মাথায় লাথি মারে।
ভাঙাড়ি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে মিটফোর্ড হাসপাতাল চত্বরে পিটিয়ে ও ইট-পাথর দিয়ে মাথা থেঁতলে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। তার পর মরদেহের ওপর চলে এই বর্বরতা। সিসিটিভিতে ধরা পড়া ছবিতে দেখা যায়, ব্যস্ত সড়কে অনেক মানুষের সামনে এ ঘটনা ঘটছে। লোকজন ঔৎসুক্য নিয়ে দেখছে। কিন্তু ঘটনার ভয়াবহতায় তারাও হতবিহ্বল। কেউ এগিয়ে আসেনি। হাসপাতালের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যের ক্যাম্প ছিল পাশেই। তারাও কেউ এগিয়ে আসেনি। ভিডিওতে হত্যা ও বীভৎসতায় জড়িতদের হাত উঁচিয়ে চিৎকার করে উপস্থিত লোকজনের উদ্দেশে কিছু বলতে শোনা যায়।
সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পাওয়ার পর এই বর্বরতার বিষয়টি সামনে আসে। হত্যার আগে ডেকে নিয়ে তাকে পিটিয়ে এবং ইট-পাথরের টুকরা দিয়ে আঘাত করে মাথা ও শরীরের বিভিন্ন অংশ থেঁতলে দেওয়া হয়। একপর্যায়ে তাকে বিবস্ত্র করা হয়। তার শরীরের ওপর উঠে লাফায় কেউ কেউ। ওই ঘটনার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ একদিন পর ভাইরাল হলে দেশজুড়ে চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে সরব হয় সবাই। এ ঘটনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয় সে সময়ে।
২০২৫ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর বনশ্রী ডি ব্লকের ৭ নম্বর রোডের ২০ নম্বর বাড়ির সামনে সোনা ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেনকে (৪৩) গুলি ও ছুরিকাঘাত করে প্রায় ১৬০ ভরি সোনা ও নগদ এক লাখ টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনাটির ৩১ সেকেন্ডের একটি ভিডিও মুহূর্তেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র জাহিদুল ইসলাম পারভেজ হত্যাকাণ্ডটি ছিল বেশ আলোচিত। হত্যার শিকার পারভেজের মিডটার্ম পরীক্ষা চলছিল। পরীক্ষা শেষে ১৯ এপ্রিল বন্ধু তরিকুল, সুকর্ণ, ইমতিয়াজসহ কয়েকজন বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের একটি শিঙাড়ার দোকানে দাঁড়িয়ে কথাবার্তা বলছিলেন, হাসাহাসি করছিলেন। তাদের পেছনে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সের দুই ছাত্রী ও তাদের বন্ধু প্রাইমএশিয়ার মেহেরাজ ইসলাম, আবু জহর গিফফারি পিয়াস ও মাহাথির হাসান। একপর্যায়ে পারভেজদের হাসাহাসি নিয়ে এই শিক্ষার্থীরা নোটিশ করেন। কেন তাদের কটাক্ষ করে হাসাহাসি করা হচ্ছে, তা তারা জানতে চান। এ নিয়ে তাদের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিষয়টি মীমাংসা করলেও পারভেজের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে এবং তাকে হত্যা করা হয়। ‘হামলাকারীরা বান্ধবীদের কাছে নিজেদের ক্ষমতা ও আধিপত্য’ দেখাতে হামলা চালিয়ে পারভেজকে হত্যা করে।
২৭ মে ভোরে কুষ্টিয়া শহরের কালীশংকরপুর এলাকায় তিন ঘণ্টার এক শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন ওরফে ফতেহ আলী ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী মোল্লা মাসুদ ওরফে আবু রাসেল মাসুদকে আটক করে সেনাবাহিনী। পরে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকা থেকে সুব্রত বাইনের অন্য দুই সহযোগী শুটার আরাফাত ও শরীফকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে পাঁচটি বিদেশি পিস্তল, ১০টি ম্যাগাজিন, ৫৩ রাউন্ড অ্যামোনিশন এবং একটি স্যাটেলাইট ফোন উদ্ধার করা হয়।
২৫ মে রাতে বাড্ডা এলাকায় বন্ধুদের সঙ্গে দোকানের সামনে বসে চা পান করছিলেন বিএনপি নেতা কামরুল আহসান সাধন। এমন সময় হঠাৎ দুজন লোক তাকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে। এ হত্যাকাণ্ডে কারা অংশগ্রহণ করেছে, হত্যার নেপথ্যে কারা কিংবা কেন সাধনকে হত্যা করা হয়েছে, হত্যাকাণ্ডের পেছনে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা না থাকলেও ব্যবসা, আধিপত্য এবং আন্ডারওয়ার্ল্ডের গডফাদারের সংশ্লিষ্টতার তথ্য উঠে আসে।
বছরেন ১০ নভেম্বর প্রায় ২৯ বছর আগের একটি হত্যা মামলায় ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২ এ হাজিরা দিতে যান তারিক সাইফ মামুন। ফেরার পথে বেলা ১১টার দিকে আদালতপাড়ার কাছে ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে খুন হন তিনি।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, হাসপাতালের প্রবেশমুখে হঠাৎ দুই দুর্বৃত্ত তার পেছনে এসে খুব কাছ থেকে একাধিক গুলি চালান। গুলি লেগে ঘটনাস্থলেই তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এরপর হামলাকারীরা স্বাভাবিক
ভঙ্গিতে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
১৮ অক্টোবর ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ কমপ্লেক্স ভবনে ১৮ অক্টোবর শনিবার বেলা আড়াইটার দিকে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ১৩টি ফায়ার স্টেশনের ৩৭টি ইউনিটের প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। আগুনে নেভাতে গিয়ে আনসার বাহিনীর ২৫ সদস্যসহ মোট ৩৫ জন আহত হয় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর বিমানবন্দরে সব ধরনের উড়োজাহাজ ওঠানামা বন্ধ হয়ে যায়। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর রাত ৯টার দিকে বিমানবন্দর চালু হয়।
২২ জুলাই রাজধানীর উত্তরা দিয়া বাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনায় ৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল,এর মধ্যে অধিকাংশ শিক্ষার্থী ছিলেন।এই দুর্ঘটনায় কারণ হিসেবে যুদ্ধবিমানের পাইলটের উড্ডয়ন ত্রুটি চিহ্নিত হয়েছে তদন্তে।এই ঘটনায় পুরো দেশের মানুষের হৃয়দে দাগ কেটেছ।
চব্বিশের জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান দমনে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার প্রথম অভিযোগে আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং দ্বিতীয় অভিযোগ ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। সেই সঙ্গে অপর দুই আসামী আসাদুজ্জামান কামালের মৃত্যুদণ্ড ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের ৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
১৭ নভেম্বর দুপুর ২টা ৪৭ মিনিটে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন।
এর আগে দুপুর সাড়ে ১২টায় ট্রাইব্যুনালে রায় ঘোষণার কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর ছয়টি অধ্যায়ে ৪৫৩ পৃষ্ঠার রায় পড়া শুরু করেন বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদার।
মামলার অভিযোগে শেখ হাসিনাকে জুলাই-আগস্টে নৃশংস ঘটনার ‘মাস্টারমাইন্ড, হুকুমদাতা ও সুপিরিয়র কমান্ডার’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। মামলার তিন আসামির বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়।
১২ ডিসেম্বর খোদ রাজধানীতে ফিল্মি স্টাইলে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করে সন্ত্রাসীরা।পরে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৮ ডিসেম্বর মারা যান তিনি। এই হত্যাকাণ্ড আরও বাড়িয়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। নাকের ডগায় ওসমান হাদির খুনিরা দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছে এমন তথ্যে ফুঁসছে গোটা দেশ। প্রশ্ন উঠছে এ ঘটনায় প্রশাসনের উদাসীনতা কেন, সাধারণ মানুষেরই বা নিরাপত্তা কোথা
ধর্ম অবমাননার অভিযোগে ময়মনসিংহের ভালুকায় হিন্দু ধর্মের এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করে একদল ব্যক্তি। বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাতে ভালুকা উপজেলার স্কয়ার মাস্টার বাড়ি ডুবালিয়া পাড়ায় এ ঘটনা ঘটে।
প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত