এম সাইফুল ইসলাম
সরকারি খাস জমি থেকে মাটি কেটে ট্রাক ভর্তি করে নিজের ইটের ভাটায় নিয়ে গেছেন খুলনার ফুলতলা উপজেলার পয়গ্রাম কসবা মৌজায় দামোদার গ্রামের মৃত হাবিবুর রহমানের পূত্র ব্যবসায়ি লুৎফর রহমান ওরফে লেলিন ভূঁইয়া। এছাড়া সরকারি খাস জমি থেকে গাছপালা কর্তন করলেও কর্তৃপক্ষ জেনেও অনেকটা নিরব ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন ।
পয়গ্রাম কসবা এলাকায় প্রবেশ করলে দেখাযায় লেলিন ভূঁইয়ার জমির সাইনবোর্ড। তবে কিছু সরকারি খাস জমিও তাঁর দখলে রয়েছে। সেই সকল খাসজমি থেকে ফলজ ও বনজ গাছপালাসহ মোটা মোটা ডাল পালা কেটে নিয়ে বৃক্ষ উজাড় অভিযানে নেমেছেন তিনি। এখানেই শেষ নয়, দখলকৃত খাসজমি থেকে মাটি কেটে ইটের ভাটায় ইট তৈরিতে ব্যবহার করে আসছেন। এধরনের কর্মকান্ডে স্থানীয়রা কর্তৃপক্ষকে লিখিত অভিযোগের মাধ্যমে জানিয়ে কোন সুফল পাননি।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, পয়গ্রাম কসবার মৃত ছাদেক শেখের পূত্র শেখ লুৎফর রহমান তাঁর রেকর্ডীয় ২৭ শতক ভূ-সম্পত্তি, যার খতিয়ান নং-৩২৭, আর.এস দাগ নং ৮৪২ দীর্ঘ ২৭ বছর ভূমি উন্নয়ন কর (খাজনা) দিয়ে আসছেন সরকারকে। ওই ২৭ শতক জমির পাশে লেলিন ভূঁইয়ার জমি থাকার কারণে লেলিনের নজর পড়ে। দীর্ঘ দিন পায়তাঁরা করে আসছে জমিটি নামমাত্র দাম দিয়ে ক্রয়ের জন্য। ছাদেক শেখের পূত্র শেখ লূৎফর রহমানের মৃত্যুর পর তাঁর ওয়ারেশগণ লেলিন ভূঁইয়ার কাছে ওই জমি বিক্রি করতে রাজি হয়নি।
ভুক্তভোগীরা জানায়, দীর্ঘ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর তৎকালীন ফুলতলা তহশীল অফিসের নায়েব গাজী সাকিল আহম্মদ, উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার মিজানসহ অন্যান্যদের ম্যানেজ করে সুচতুর লেলিন ভূঁইয়া ৩২৭ নং খতিয়ানের, হাল দাগ ৮৪২ এর ওই ২৭ শতক জমির ইজারা নেওয়ার জন্য আবেদন করেন।
মরহুম শেখ লুৎফর রহমানের রেকর্ডকৃত সম্পত্তি হওয়ার পরেও এবং এই জমি নিয়ে বিজ্ঞ আদালতে মামলা চলমান থাকার মধ্যে দিয়ে কর্তৃপক্ষ লেলিন ভূঁইয়াকে ইজারা দিয়েছেন।
ইজারার কাগজ হাতে পেয়ে লেলিন ভূঁইয়া ও তার পোষ্য কিছু ব্যক্তিরা জমি দখল করেন। এছাড়া ইজারাকৃত জমির থেকে গাছপালা ও ডালপালা কাটতে শুরু করেন।
বিষয়টি বর্তমান ফুলতলা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের নায়েব মো. ইলিয়াজ ঘটনাস্থলে আসলে সকল সত্যতা পান। তবে রহস্যজনক কারণে নায়েব ইলিয়াজকে কর্তৃপক্ষ বৃক্ষকর্তনের বিষয় প্রতিবেদন রিপোর্ট প্রদান করতে কোন নির্দেশনা প্রদান করেনি বলে তথ্য পাওয়া যায়।
এছাড়া পয়গ্রাম কসবা মৌজার আর.এস ৮৪৯,৮৫০,৮৫২,৮৫৩, দাগের ক” তফশিলভুক্ত সরকারি খাস জমি থেকে বিপুল পরিমাণের মাটি কেটে ট্রাক ভর্তি করে নিজের ইটের ভাটায় নিয়ে গেছেন ব্যবসায়ী লেলিন। যেখানে ভূমি আইনে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে কোন ইজারাকৃত খাস সম্পত্তির গাছপালা কর্তন বা আকৃতির পরিবর্তন করা যাবে না।
ভুক্তভোগি রেজাউর রহমান রিটু এ প্রতিবেদককে জানান, আমার বাবা শেখ লুৎফর রহমানের মৃত্যুর পর থেকে লেলিন ভূঁইয়া আমাদের ওই ২৭ শতক জমি দখলের জন্য চেষ্টা করেন। বিভিন্ন সময় আমাকে হুমকি ধামকি দিয়ে আসছে। রেজাউর আরো জানান, লেলিন ভূইঁয়া কিভাবে আমাদের রেকর্ডীয় জমির ইজারা নিয়ে আসলো তা আমাদের বোধগম্য নয়। তবে এর পেছনে যাদের হাত রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু হয়েছে।
ফুলতলা ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মাহামুদুর রহমান চয়ন বলেন, ওই জমিটি (২৭শতক, খতিয়ান নং-৩২৭, আর.এস দাগ নং ৮৪২) শেখ লুৎফর রহমানের জমি, হঠাৎ করে লেলিন ভূঁইয়া ইজারা নিয়ে আসছে।
ফুলতলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখ আবুল বাশার বলেন, ওই জমি (২৭শতক, খতিয়ান নং-৩২৭, আর.এস দাগ নং ৮৪২) শেখ লুৎফর রহমানের সম্পত্তি। তিনি আরো বলেন, লেলিন ভুঁইয়া ওই জমির দখলে কখনও ছিল না।
ব্যবসায়ী লেলিন ভূঁইয়া বলেন, মাটি যা কাটা হয়েছে তা সম্পূর্ণ আমার নিজ নামীয় সম্পত্তি থেকে। আমার সম্পত্তিতে আমি যে কোন প্রকার কাজ করতে পারি। এ ব্যাপারে কারো কোন আপত্তি থাকার কথা নয়।
পরিবেশ নিয়ে কাজ করা গ্লোবাল খুলনার আহবায়ক শাহ মামুনুর তুহিন বলেন, খাস জমির মাটি কাটা ও বৃক্ষ কর্তন কোনভাবেই পরিবেশের জন্য ভাল কিছু বয়ে আনতে পারে না। এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তরে আরও বেশি সক্রিয় হওয়া উচিত।
খুলনা জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোঃ মনিরুজ্জামান তালুকদার বলেন, খাস জমি উদ্ধার ও দেখভাল আমরা নিয়মিত-ই করে থাকি। যদি কোন ব্যাক্তির বিরুদ্ধে এ ধরনের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকে তাহলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবো।
ফুলতলায় খাস জমির গাছপালা ও মাটি কেটে ইট ভাটায় নিচ্ছেন কথিত ইজারাদার
Leave a comment