জন্মভূমি ডেস্ক : স্বাধীনতার উষালগ্নে জাতির সূর্য সন্তানদের হারানোর বিষাদময় দিনটি স্মরণ করছে বাংলাদেশ। শোষিত আর বঞ্চিত বাঙালিকে মুক্তির পথ দেখাতে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে যারা অকাতরে নিজের বিলিয়ে দিয়েছেন, জাতির সেইসব সন্তানদের স্মরণে পালিত হচ্ছে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস।
বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) সকাল থেকে রাজধানীর মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে লাখো জনতার ঢল নেমেছে। মানুষের স্রোত নেমেছে রায়েরবাজারে বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধেও। তীব্র শীতকে উপেক্ষা করে ভোরেই শ্রদ্ধা জানাতে ফুল নিয়ে আসেন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার বহু মানুষ। রাষ্ট্রপতি-প্রধান উপদেষ্টা আসার আগেই আশপাশের এলাকা লোকারণ্য হয়ে যায়। বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা ছাড়াও সাধারণ মানুষ, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের পরিবারের সদস্য, মুক্তিযোদ্ধা, নতুন প্রজন্মের তরুণেরা সাতসকালেই হাজির হন। তারা নিজস্ব ব্যানার হাতে এসেছেন শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে। সবাই সারিবদ্ধভাবে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসা বেশিরভাগ মানুষই শোকের প্রতীক কালো পোশাক পরে এসেছেন। অনেক শিক্ষার্থীরাও হাতে ফুলের তোড়া ও ছোট ছোট প্ল্যাকার্ড ও ফেস্টুন নিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছেন।
পুষ্পস্তবকগুলো একটির পর আরেকটি শহীদ বেদিতে রাখা হচ্ছে। ধর্ম-বর্ণ, রাজনৈতিক দলের পক্ষ-বিপক্ষ, কিংবা শ্রেণি-পেশা-নির্বিশেষে বিভিন্ন দল, সংগঠনের প্রতিনিধি ও ব্যক্তিরা শ্রদ্ধা নিবেদন করছেন জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের। আর নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে স্মরণ করছেন ভয়াল ও নৃশংস সেই হত্যাযজ্ঞের ঘটনা।
মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ভোর থেকেই জড়ো হতে থাকে নানা বয়সী মানুষেরা। সকাল সাতটা থেকে শুরু হয় শ্রদ্ধা জানানো। শোক, বিনম্র শ্রদ্ধা আর গভীর ভালোবাসায় জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করে সর্বস্তরের মানুষ। সকাল সাতটার কিছু সময় পর শুরু হয় শ্রদ্ধা জানানো। সাতটা ৫ মিনিটে প্রথমে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও পরে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর সেখানে তারা কিছু সময় নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এ সময় বিউগলে করুণ সুর বেজে উঠে। পরে সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদন শুরু করেন।
মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ ছাড়াও রায়েরবাজারে বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে ফুল জানাতে এসেছেন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ।
বাঙালির চিরগৌরবের অর্জন মুক্তিযুদ্ধের বিজয় সূর্য যখন উদিত হতে চলেছে, তখন নিশ্চিত পরাজয়ের মুখে বাঙালিকে মেধা-মননহীন করে দেওয়ার এক ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিল নরঘাতক পাকিস্তান সেনাবাহিনী। তাদের সহায়তা করেছিল এদেশি কতিপয় অনুচর। তারা দেশের খ্যাতনামা শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, আইনজীবী, শিল্পী, প্রকৌশলী, দার্শনিক, রাজনীতিকসহ মেধাবী সন্তানদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের তুলে আনে। ঘাতকের দল বুদ্ধিজীবীদের গুম ও নির্মমভাবে হত্যা করে। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পরে রাজধানীর রায়েরবাজারে পরিত্যক্ত ইটখোলা ও মিরপুরে জল্লাদখানায় শহীদ বুদ্ধিজীবীদের হাতবাঁধা, নির্যাতনে ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ পাওয়া গেলে পাকিস্তানি ঘাতকদের বুদ্ধিজীবী হত্যার এই ষড়যন্ত্র উন্মোচিত হয়।
বাঙালি জাতি বরাবরই ১৬ ডিসেম্বর বিজয় উৎসবের আগে এই দিনটিতে শ্রদ্ধা ও বেদনার সঙ্গে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করে থাকে। এবারও দিনটি উপলক্ষে সরকারিভাবে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
ফুলেল শ্রদ্ধায় জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণ
Leave a comment