বছরের প্রথম দিনে সারাদেশের শিশুদের হাতে নতুন বই পৌঁছেছে। এর তাৎপর্য সুদূরপ্রসারী। একদিকে বিনামূল্যে বই বিতরণ কর্মসূচির মাধ্যমে নাগরিকদের একটি মৌলিক চাহিদা পূরণ, অন্যদিকে সেই মৌলিক চাহিদা পূরণকল্পে সরকারের বৃহত্তর লক্ষ্য অর্জনের পথে অগ্রসর হওয়া। সরকারপ্রধান যখন একটি কর্মসূচি উদ্বোধন করেন, তখন তার গুরুত্ব বেড়ে যায় বহু গুণ। সেই গুরুত্বের অগ্নিস্ফূলিঙ্গ জনমনকে নাড়া দেয় অবশ্যম্ভাবীভাবে। বই উৎসবও ঠিক তেমনি। বিনামূল্যে বই বিতরণ উৎসব দৃশ্যত একটি আনন্দের উপলক্ষ হলেও এর গূঢ় লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য সুদূরপ্রসারী; তা হলো শিক্ষার বুনিয়াদ প্রাথমিক শিক্ষাকে মজবুত ভিত্তির ওপর দাঁড় করানো। কারণ, প্রাথমিক শিক্ষাকে সহজলভ্য ও ফলপ্রসূ করতে না পারলে পরবর্তী ধাপের শিক্ষার ভিত্তিও নড়বড়ে হতে বাধ্য।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু-আমলের প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বই দেওয়ার কার্যক্রমকে আরও সম্প্রসারিত করেছেন। এখন ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুল-মাদ্রাসার সকল শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে বই প্রদান করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী প্রতিবছর জানুয়ারি মাসের শুরুতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে উৎসবমুখর পরিবেশে বই তুলে দেন এবং সারাদেশে একযোগে বই পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। এ সময় যে আনন্দ-উৎসবময় পরিবেশের সৃষ্টি হয় সারাদেশে, তা অভূতপূর্ব; এ উৎসব এখন ‘বই উৎসব’ নামে নন্দিত পরিচিতি লাভ করেছে এবং এটি এখন ‘জাতীয় উৎসবের’ মর্যাদা লাভ করেছে। এই কর্মসূচি শিক্ষার্থীদের মাঝে যেমন প্রবল জ্ঞানস্পৃহা জাগ্রত করছে, তেমনি অভিভাবকদেরও সচেতন ও উৎসাহিত করছে তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাবার জন্য।
বিনামূল্যে বই বিতরণ, শিক্ষা-উপবৃত্তি প্রদান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংস্কার-আধুনিকায়ন ইত্যাদি পদক্ষেপ ছাড়াও প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত উৎকর্ষের দিকেও নজর দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর গতিশীল নির্দেশনা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সতর্ক ব্যবস্থাপনায় তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত এখন প্রাতিষ্ঠানিকভাবে পরিদর্শন-তদারকি-মনিটরিং-মূল্যায়ন আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেগবান ও সিস্টেমেটিক হয়েছে। এই ব্যবস্থা প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে সহায়তা করছে। এখন দেশে প্রাইমারি স্কুলের সংখ্যা ১ লক্ষ ১৮ হাজার ৮৯১টি এবং সেসব স্কুলের শিক্ষকের সংখ্যা ৬ লক্ষ ৯৭ হাজার ২০৩ জন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ৩ কোটি ৮১ লক্ষ ২৭ হাজার ৬৩০ জন এবং বই বিতরণ করা হবে ৩০ কোটি ৭০ লক্ষ ৮৩ হাজার ৫১৭ কপি।