
জন্মভূমি ডেস্ক : বিএনপি-জামায়াতের ডাকা অবরোধের দ্বিতীয় দিনেও বগুড়ায় সড়কে পিকেটিং ও ভাঙচুর চলছে। এর মধ্যে সদর উপজেলার বাঘোপাড়া এলাকায় একটি ট্রাকে আগুন ধরিয়ে দেয় অবরোধ সমর্থনকারীরা।
বুধবার (১ নভেম্বর) সকাল থেকে সদরের তিনমাথা, মাটিডালী, এরুলিয়া এলাকায় অবরোধ শুরু করে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসব এলাকায় দফায় দফায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
এর মধ্যে বেলা ১২টার দিকে সদরের বাঘোপাড়া এলাকার মহাসড়কে পুড়িয়ে দেওয়া হয় মালবাহী ট্রাক। ট্রাকটি চট্টগ্রাম থেকে জাহাজের ভাঙারি নিয়ে রাতে মহাস্থানে এসেছিল। সকালে পরিস্থিতি স্বাভাবিক দেখে মাটিডালী এলাকায় মাল আনলোড করতে আনা হয়। কিন্তু তারপরও অবরোধকারীদের কবলে পড়তে হলো।
ট্রাকচালকের সহকারী মো. শাহাদত ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঢাকা-দিনাজপুর মহাসড়কের বাঘোপাড়া এলাকায় সাতজন যুবক গাড়িটি অনুসরণ করছিলেন। তারা মুখোশ পরেছিলেন। হঠাৎ সামনে এসে থামার সংকেত দেন মুখোশধারীরা। এরপর ট্রাকে ভাঙচুর শুরু করেন। পুরোপুরি থামলে পেট্রোল ঢেলে ট্রাকে আগুন ধরিয়ে দেন। পরে আমি দৌড়ে পালিয়ে যাই। আর পেট্রোলের আগুনে মালামালসহ ট্রাক পুড়ে যায়।
পুলিশ খবর পেয়ে বালু ও পানি দিয়ে ট্রাকের আগুন নেভায়। পরে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট এসে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এর আগে এদিন সকাল সাড়ে ৮টার দিকে সদর উপজেলার মাটিডালী এলাকায় বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি ও পৌর মেয়র রেজাউল করিম বাদশার নেতৃত্বে একটি মিছিল বের করেন নেতাকর্মীরা। মিছিলটি ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এ সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। এরপর সেখানে দফায় দফায় পুলিশের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
সকাল সাড়ে ৯টার দিকে শহরের তিনমাথায় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের আরেকটি অংশের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এদিন সকাল থেকেই বগুড়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার হেনার নেতৃত্বে বিএনপি নেতাকর্মীদের তিনমাথা এলাকার ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। এ সময় কুরিয়ার সার্ভিসের একটি কাভার্ডভ্যান ভাঙচুর করে অবরোধকারীরা। খবর পেয়ে পুলিশ ও বিজিবি অবস্থান নেয় সেখানে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিএনপির লোকজনদের সরে যেতে বলেন। কিন্তু তারা সরে না গিয়ে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। পরে পুলিশ গ্যাস ছুড়লে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে। একপর্যায়ে রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে অবরোধকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়। এ সময় প্রায় ঘণ্টাখানেক ধরে এই ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে।
এদিকে, সাবগ্রাম-ঘুনিয়াতলা এবং বারোপুর এলাকায় জামায়াত-শিবিরের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী অবস্থান নিয়ে পিকেটিং শুরু করে। সকাল ৯টার দিকে ২য় বাইপাস সড়কের ঘুনিয়াতলায় বিজিবি পাহারায় আটকে থাকা কয়েকটি কোচ পারাপারের সময় উত্তেজনা দেখা দেয়। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে জামায়াত কর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। প্রায় ২০ মিনিট ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার পর জামায়াত কর্মীরা মহাসড়ক থেকে সরে গেলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার স্নিগ্ধ আখতার বলেন, জনগণের নিরাপত্তায় পুলিশ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা রাস্তায় অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হতে দেব না। পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দুপুর পর্যন্ত সদরের বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে দেখা যায়, অবরোধকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ও ককটেল নিক্ষেপ করে। পুলিশ ছররা গুলি, টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। এখন পর্যন্ত ওই এলাকাগুলোতে অবরোধকারীরা একপাশে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা আরেক পাশে অবস্থান করছে।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার হেনা বলেন, সকাল থেকেই আমাদের নেতাকর্মীরা মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছে। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করতে চাইলেও পুলিশ এবং আওয়ামী বাহিনী আমাদের ওপর হামলা করে যাচ্ছে। আমরা বিজয় না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরব না।
এদিকে বগুড়া শহরের উত্তর ও দক্ষিণ প্রান্তে মহাসড়কের ধারে বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগ বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে।
মাটিডালী এলাকার সমাবেশে সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সুফিয়ান সফিক বলেন, অবরোধকারীরা দেশের ভালো চায় না। তারা দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে বিশ্বাস করেন না। কিন্তু সরকারের নির্মিত ফ্লাইওভার, চার লেন রাস্তা দিয়ে ঠিকই চলাচল করবে। অবরোধকারীদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম প্রতিহত করতে হবে আপনাদের। তা নাহলে আমাদের সাধারণ মানুষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে।