
জন্মভূমি ডেস্ক : দেশের অন্যতম দ্বিতীয় বৃহত্তম ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু সংযোগ মহাসড়ক। রাজধানী ঢাকার সাথে সড়ক পথ পেরিয়ে যমুনা নদীর ওপর নির্মিত বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে উত্তরবঙ্গের কমপক্ষে ২৩ টি জেলার মানুষের একমাত্র যোগাযোগ মাধ্যম এই মহাসড়কের সংযোজক বঙ্গবন্ধু সেতু। সরকারি ছুটির আগে থেকে কোরবানি ঈদযাত্রা শুরু হওয়ায় ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব মহাসড়কে তেমন ভোগান্তি পোহাতে হয়নি উত্তরবঙ্গগামী মানুষজনের।
গত শুক্রবার (৩০ জুন) থেকে মহাসড়কে পরিবহনের সংখ্যা বাড়ায় সেতুতে টোল আদায়ও বৃদ্ধি পেয়েছে। সর্বশেষ ২৭ জুন মঙ্গলবার সেতুতে টোল আদায়ে রেকর্ড সৃষ্টি করে। একই সঙ্গে এবার ঈদে মোটরসাইকেল পারাপারেও রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। একদিনে সেতুতে মোটরসাইকেল পারাপার হয়েছে ১৪ হাজার ১২৩টি। এদিকে ঈদুল ফিতর থেকে ঈদুল আজহায় প্রায় দ্বিগুন পরিবহন বঙ্গবন্ধু সেতু পারাপার হয়েছে। সেইসঙ্গে টোল আদায়ও বৃদ্ধি পেয়েছে।
জানা গেছে, ঈদুল আজহা উপলক্ষে গত শুক্রবার (২৩ জুন) হতে বুধবার (২৮ জুন) পর্যন্ত ৬দিনে সেতুতে ২ লাখ ২৪ হাজার ৭৬০টি পরিবহন পারাপার হয়েছে। এতে সেতু পূর্ব ও পশ্চিমে মোট টোল আদায় হয়েছে ১৭ কোটি ৭১ লাখ ৪৫ হাজার ৯৫০ টাকা। এরমধ্যে সেতুপূব টোলপ্লাজা অতিক্রম করে উত্তরবঙ্গের দিকে গিয়েছে ১ লাখ ৩৪ হাজার ১১০টি পরিবহন। এতে সেত পূর্ব পাড়ে টোল আদায় হয়েছে ৯ কোটি ৭২ লাখ ১৯ হাজার ৯০০ টাকা।
এছাড়া সেতুর পশ্চিম টোলপ্লাজায় অতিক্রম করে ঢাকার দিকে গিয়েছে ৯০ হাজার ৬৫০টি পরিবহন। এতে সেতুর পশ্চিম পাড়ে টোল আদায় হয়েছে ৭ কোটি ৯৯ লাখ ২৬ হাজার ৫০ টাকা। এ নিয়ে বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর দিয়ে উভয়পাড়ে প্রতি মিনিটে গড়ে ৩২টি গাড়ি সেতু পারাপার হয়েছে।
অপর দিকে, সর্বশেষ ঈদের দিন বৃহস্পতিবার (২৯ জুন) ও শুক্রবার (৩০ জুন) রাত ১২ টা পর্যন্ত দুই দিনে সেতু দিয়ে মোট গাড়ি পারাপার হয়েছে ৩১ হাজার ৫৯২টি এবং এ থেকে টোল আদায় হয়েছে ২ কোটি ১৫ লাখ ২৭ হাজার টাকা। এত প্রায় ঈদের আগে ও পরে প্রায় ২০ কোটি টাকা টোল আদায় হয়েছে।
গত ঈদুল ফিতরের ৪ দিন আগে সোমবার (১৭ এপ্রিল) রাত ১২টা হতে বৃহস্পতিবার (২০ এপ্রিল) রাত ১২ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু সেতুতে বাস, ট্রাক, পিকআপ, লড়ি, মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসসহ ১ লাখ ৩১ হাজার ১৭০টি পরিবহন পারাপার হয়েছিল। পারাপার হওয়া এসব পরিবহন থেকে টোল আদায় হয়েছিল ১০ কোটি ১৪ লাখ ৪৪ হাজার ১০০ টাকা।
জানা গেছে, এবার ঈদে মহাসড়কে পরিবহন বিকল, সেতুর উপর দুর্ঘটনা ও অতিরিক্ত পরিবহনের চাপে টোল সিস্টেম বন্ধ হওয়ার কারণে মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। যানজটের ফলে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে উত্তরবঙ্গগামী ঘরমুখো মানুষদের। যানজটের কারণে মহাসড়কের ১৩ কিলোমিটার সড়ক পাড়ি দিতে দীর্ঘ সময় লেগেছিল।
সর্বশেষ ঈদের একদিন ভোররাত থেকে মহাসড়কের বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব থেকে এলেঙ্গা দুই লেনের ১৪ কিলোমিটার সড়কে যানজট ছাড়িয়ে এলেঙ্গা থেকে চারলেনের সড়কের বাঐখোলা থেকে টাঙ্গাইল বাইপাস পর্যন্ত প্রায় ৪০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। এছাড়া বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব-ভ‚ঞাপুর-এলেঙ্গা আঞ্চলিক মহাসকের প্রায় ২৭ কিলোমিটার সড়কের বিভিন্ন স্থানে যানজটের কারণে ভোগান্তিতে পোহাতে হয়। তবে মানুষের এমন ভোগান্তি ও পরিবহন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে কাজ করেছে জেলা-উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ সদস্যরা।
বঙ্গবন্ধু সেতু সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আহসানুল কবীর পাভেল জানান, মহামড়কের যানজট এড়াতে গতবারের মতো এবারও ঈদযাত্রায় সেতুর দুই দিকে ১৮টি বুথের মাধ্যমে টোল আদায় করা হয়ছে। এর মধ্যে দুই পাশে দুইটি করে মোটরসাইকেলের জন্য আলাদা বুথ করা হয়েছিল। প্রতি বছর ঈদে এ মহাসড়ক দিয়ে উত্তরবঙ্গের লাখ লাখ মানুষ যাতায়াত করেন। এছাড়া ঈদের কয়েকদিন ধরেই পরিবহনের চাপ ছিল। এতে টোল আদায় অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙে এ পর্যন্ত নতুন রের্কড সৃষ্টি করেছে বঙ্গবন্ধু সেতু।
উল্লেখ্য, টাঙ্গাইলের যমুনা নদীর ওপর ১৯৯৮ সালের ২৩ জুন বঙ্গবন্ধু সেতু উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনের পর থেকেই ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়ক দিয়ে উত্তরবঙ্গের ২৩টি জেলার যানবাহন চলাচল করে। স্বাভাবিকভাবে গড়ে প্রতিদিন ১৬-২৫ হাজার যানবাহন সেতু দিয়ে পারাপার হয়। ঈদসহ বিভিন্ন উৎসবের ছুটিতে পরিবহনের সংখ্যা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। যার ফলে এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত এই ১৪ কিলোমিটার সড়ক দুই লেন এবং অতিরিক্ত গাড়ির চাপে যানজট ও ভোগান্তি হয়ে থাকে।