আগুনে পুড়ে ছাই বঙ্গবাজার। মঙ্গলবারের আগুনে পুড়ে গেছে কয়েক হাজার ব্যবসায়ীর স্বপ্ন। দোকানগুলোর কর্মচারীদের চোখেও এখন অন্ধকার। বুধবারও ফায়ার সার্ভিসের ৩০টি ইউনিট সেখানে কাজ করেছে।
রাজধানীর কেন্দ্রে স্টকলটের পাইকারি বাজার হিসেবে পরিচিত বঙ্গবাজার থেকে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় মালপত্র সরবরাহ করা হয়। শুধু পাইকারি নয়, খুচরা বিক্রিও হয় এই মার্কেটে। ঈদ সামনে রেখে ব্যবসায়ীরা নতুন করে বিনিয়োগ করেছিলেন। ব্যাংক ও স্থানীয় সমিতি থেকে ঋণ নিয়েছিলেন অনেকে। অনেকে ঋণ নিয়েছিলেন পরিচিতজনদের কাছ থেকে। এসব বাজারে মৌসুমি বিনিয়োগও হয়। দুই বছরের কভিড পরিস্থিতি আর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর এবারের ঈদ ঘিরে ব্যবসায়ীদের যে স্বপ্ন ছিল, মঙ্গলবারের আগুনে তা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
টিন ও কাঠ দিয়ে নির্মিত বঙ্গবাজারে এবারই যে প্রথম আগুন লেগেছে, তা নয়। এর আগে ১৯৯৫ সালে একবার ভয়াবহ আগুনে পুড়ে যায় এই মার্কেট। নতুন করে গড়ে তোলার পর ২০১৮ সালেও সেখানে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক জানিয়েছেন, ২০১৯ সালে বঙ্গমার্কেট ঝুঁকিপূর্ণ বলে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে নোটিশ টানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন জানিয়েছে, ২০১৯ সালে তারাও মার্কেটটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে। তার পরও ব্যবসায়ীরা ব্যবসা চালিয়ে আসছিলেন। তখন বঙ্গবাজার মার্কেট সমিতি হাইকোর্টে রিট আবেদন করলে আদালত নতুন ভবন নির্মাণে স্থগিতাদেশ দেন।
বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের কারণ তদন্তে পাঁচ সদস্যের কমিটি করেছে ফায়ার সার্ভিস। কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ এবং ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করতে আট সদস্যের কমিটি করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। প্রতিবেদন দিতে তাদের সময় দেওয়া হয়েছে তিন দিন।
শুধু রাজধানী নয়, দেশের বিভিন্ন স্থানে কোনো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে তদন্ত কমিটি হয়। এসব কমিটি থেকে যেসব সুপারিশ করা হয়, তার কোনোটিই কি বাস্তবায়িত হয়? হলে কি এভাবে একের পর এক অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটে বা ঘটতে পারে? দুর্ঘটনা যেকোনো সময় ঘটতে পারে। কিন্তু ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি না থাকলে ক্ষয়ক্ষতি কমানো সম্ভব।
বঙ্গবাজারের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর যে প্রশ্নগুলো সামনে চলে এসেছে, সেগুলো নিয়ে ভাবতে হবে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ওই মার্কেটকে ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করে ১০ বার নোটিশ দেওয়ার কথা জানিয়েছে। এ ব্যাপারে মার্কেটের সামনে ব্যানারও টানায় তারা। তার পরও কেন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হলো না? ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনও বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স মার্কেটটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে ১০ বার নোটিশ দিয়েছে। সেখানে ১০ তলা ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়ার পর ব্যবসায়ী মালিক সমিতি হাইকোর্টে গিয়ে ভবন নির্মাণে স্থগিতাদেশ নিলে এ পরিকল্পনা আর এগোয়নি।
এই মার্কেট কমপ্লেক্স আধুনিক মানের করে গড়ে তুলতে আপত্তি কাদের? বঙ্গবাজারে আগুন লাগার পর কিছু মানুষ পাশের ফায়ার সার্ভিস কার্যালয়ে হামলা চালিয়েছে। এই অতি উৎসাহী মানুষগুলো কারা? কারা তাদের হামলা চালাতে উৎসাহিত করেছে?
তদন্ত কমিটিগুলো হয়তো অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধান করবে। কিন্তু এ জাতীয় দুর্যোগের নেপথ্যে আরো কোনো কারণ আছে কি না, সেটাও অনুসন্ধান করে দেখা দরকার।