
সিরাজুল ইসলাম, শ্যামনগর :দক্ষিণ বঙ্গবসাগরে বাড়ছে প্লাস্টিক ও পলিথিন এর দূষণ যার কারণে বঙ্গোপসাগরে জেগে উঠছে নতুন নতুন বড় বড় চর, সে কারণে বঙ্গোপসাগরে পানির উচ্চতা বাড়ায় দক্ষিণ অঞ্চলের সব নদ নদীর পানি বর্তমানে আগের তুলনায় তিন থেকে পাঁচ ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে , যার কারণে বাংলাদেশের উপকূলীয় ১৬ টি জেলায় নদ নদীতে লবণ পানি অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ততা বৃদ্ধি পেয়েছে । একারণে জলবায়ুর উপর প্রভাব পড়েছে যার প্রভাব মানুষ ও গবাদি পশু ভোগ করছে, আগামী দিনগুলোতে এই সমস্ত নদ নদীর পানি আরো বৃদ্ধি পাবে, বৃদ্ধি পাবে জলবায়ু পরিবর্তন আর এর ঝগির শিকার হবে উপকূলীয় কোটি কোটি মানুষ ,সে কারণে বিশ্ব বিজ্ঞানীরা বলেছেন আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের দক্ষিণ অঞ্চল পানিতে তলিয়ে যাবে যার কারণ বঙ্গোপসাগরে পানি ধরে না রাখতে পারায় সেই পানির চাপে উপকূলীয় অঞ্চল তলিয়ে যাবে এটা স্বাভাবিক বোঝা যায় । কারণ বঙ্গোপসাগরে যদি পলি পড়ে বিশাল বিশাল চর-জেগে ওঠে তাহলে বঙ্গোপসাগর এই পানি ঠ্যাক দেবে কি করে সেজন্য আগের তুলনায় বছর গেলেই উপকূলীয় অঞ্চলের নদীগুলোতে জোয়ারের পানি বাড়তে আছে । এভাবে প্রতি বছর বাড়তে থাকলে উপকূলীয় অঞ্চল তলিয়ে যাবার খবরটি ও অস্বাভাবিক কিছু নয় ।নদীর মাধ্যমে দূষিত হচ্ছে বঙ্গোপসাগর। বাংলাদেশের ১৮টি আন্তসীমান্ত নদীতে প্রতিদিন প্রায় ১৫ হাজার ৩৪৫ টন একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক প্রবেশ করে। এর মধ্যে দুই হাজার ৫১৯ টন ভারত থেকে এবং ২৮৪ টন মিয়ানমার থেকে আসে। এভাবে প্রতিবছর প্রায় পাঁচ লাখ টন একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বর্জ্য দেশের বঙ্গোপসাগরে প্রবেশ করে। এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (এসডো) সাম্প্রতিক এক গবেষণার ফলাফল থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
রাজধানীর একটি হোটেলে এসডো এক আলোচনা সভায় রোববার (২০ নভেম্বর) এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। এই গবেষণার জন্য বাংলাদেশের যেসব আন্তঃসীমান্ত নদ-নদীকে মূল্যায়ন করা হয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো— মহানন্দা, ডাহুকি, করতোয়া, তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার, ব্রহ্মপুত্র, সুরমা, কুশিয়ারা, গঙ্গা, ইছামতী-কালিন্দি ও নাফ।
সভায় এসডোর নির্বাহী পরিচালক সিদ্দীকা সুলতানার উপস্থিতিতে গবেষণার চূড়ান্ত ফলাফল উপস্থাপন করেন এসডোর সহকারী প্রোগ্রাম অফিসার হৃদিতা ফেরদৌস।
আলোচনায় বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্লাস্টিক দূষণের দেশ, যেটি চিন্তার কারণ। প্লাস্টিক তৈরির কারণে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। এসব সবারই জানা। কিন্তু বাংলাদেশে প্লাস্টিক দূষণ পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হচ্ছে। কারণ এটি একটি বিশ্বব্যাপী সমস্যা, সমাধানও বিশ্বব্যাপী হতে হবে। ঐতিহাসিক গ্লোবাল প্লাস্টিক চুক্তির মাধ্যমে এর সমাধান করা সম্ভব।
সভায় সভাপতিত্ব করেন এসডোর চেয়ারপারসন ও বাংলাদেশ সরকারের সাবেক সচিব সৈয়দ মার্গুব মোর্শেদ। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের নদীগুলো প্লাস্টিক বর্জ্যে ভরে গেছে। আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো নদী এবং এর জন্য আমাদের পদক্ষেপ ও দায়িত্ব নেওয়ার সময় এসে গেছে। উপরন্তু আসন্ন প্লাস্টিক চুক্তি আমাদের এই কাজে সাহায্য করবে।’
গবেষণাপ্রধান শাহরিয়ার হোসেন বলেন, ‘প্লাস্টিক সলিউশনস ফান্ড এবং গ্লোবাল অ্যালায়েসেন্স ফর ইনসিনেরেটর অল্টারনেটিভসের (গায়া) সহযোগিতায় এসডোর এই গবেষণা পরিচালিত হয়। এই গবেষণার উদ্দেশ্য ছিল বিপজ্জনক প্লাস্টিক বর্জ্যের আন্তঃসীমান্ত চলাচল হ্রাস করার জন্য আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা এবং নীতিগত সিদ্ধান্ত অগ্রসর করার জন্য সরকার ও নিয়ন্ত্রকদের সঙ্গে পরামর্শ করা।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশকে নদীমাতৃক দেশ বলা হয়। কিন্তু এই নদীই এখন হুমকির মুখে। এই ভয়াবহ পরিস্থিতির জন্য একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক, যা কখনোই পচে না, আমাদের নদীগুলোর ধ্বংসের জন্য এগুলো দায়ী।’
এসডো জানায়, গবেষণার মূল উদ্দেশ্য ছিল দেশের জলজ ব্যবস্থায়, বিশেষ করে আন্তঃসীমান্তে প্লাস্টিক দূষণের গতিবিধি বিশ্লেষণ করা। এই গবেষণা বাংলাদেশের নদী বাস্তুতন্ত্র সংরক্ষণ সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করবে।
২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২২ সালের জুলাই পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মোট সাত হাজার ২০ জনের সঙ্গে জরিপ করা হয়। এর মধ্যে ছিল সাধারণ পেশার মানুষ, যেমন—শিক্ষক, শিক্ষার্থী, মাঝি, জেলে, দোকানদার। গবেষণায় দেশের বিভিন্ন আন্তঃসীমান্ত এবং পাশের এলাকা থেকে প্রায় ১১ হাজার ৭০০ ধরনের প্লাস্টিক বর্জ্যের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় সব তথ্য সংগ্রহ ও নিশ্চিত করার জন্য কাঠামোগত প্রশ্নাবলির মাধ্যমে জরিপটি পরিচালনা করা হয়।
প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত