
সাম্প্রতিককালে দেশে বজ্রপাতে অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে। পবিত্র ঈদুল ফিতরের সময় দেশের ছয় জেলায় অন্তত ১১ জনের মৃত্যু ঘটেছে। হাওড় অঞ্চলে বোরো ধান কাটার সময় বজ্রপাতে বেশি মৃত্যু ঘটেছে কৃষকের। এখন চলছে বজ্রপাতের মৌসুম। এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত বজ্রপাতের মৌসুম হলেও এখন তা সেপ্টেম্বর-অক্টোবর পর্যন্ত প্রলম্বিত হতে দেখা যায়। কালবৈশাখীসহ সময়-অসময়ে ঝড়-বৃষ্টি ও বজ্রপাতের প্রবণতা বাড়ছে দিন দিন। ভেনিজুয়েলা ও ব্রাজিলে বেশি বজ্রপাত ঘটলেও বাংলাদেশে মানুষের মৃত্যুর হার বেশি। এর প্রধান কারণ প্রবল জনসচেতনতার অভাব এবং বজ্রপাত নিয়ন্ত্রণে পর্যাপ্ত প্রতিরোধক যন্ত্র স্থাপন না করা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিরূপ প্রকৃতি, উষ্ণতা বৃদ্ধি, তালগাছসহ উঁচু বৃক্ষ নিধন, মোবাইল ফোনের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার, জনঘনত্ব, যত্রতত্র টাওয়ার স্থাপন ইত্যাদি কারণেও বজ্রপাতের প্রবণতা ও মৃত্যুহার বেড়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, দেশে প্রতিবছর গড়ে ২৬৫ জনের মৃত্যু ঘটে বজ্রপাতে। মারা যায় অসংখ্য গবাদিপশু, গাছপালা। ঘটে থাকে অগ্নিকাণ্ডও।
সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকার সারাদেশে অর্থাৎ ৬৪ জেলায় বজ্রপাত নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। বর্তমানে দেশে বজ্রপাতপ্রবণ ১৬ জেলায় বজ্রপাত নিয়ন্ত্রণ তথা নিরোধক যন্ত্র বসানোর কাজ চলমান। ৪৭৬ কোটি টাকা প্রকল্পের অধীনে বাস্তবায়িত ৩০ ফুট উঁচু ইস্পাতের খুঁটির অগ্রভাগে বসানো থাকে এসব যন্ত্র। প্রতিটি খুঁটির চারপাশে ৩শ’ ফুটের মধ্যে বজ্রপাত হলে তাতে মানুষ বা গবাদিপশুর কোনো ক্ষতি হয় না। দুঃখজনক হলোÑ দীর্ঘদিন আগে এই পরিকল্পনা গ্রহণ করা হলেও বাস্তবায়নে তেমন অগ্রগতি নেই। ইতোপূর্বে বজ্রপাতের মৃত্যুর সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনার জন্য হাওড় অঞ্চলসহ বজ্রপাতপ্রবণ ২৩ জেলায় বজ্রনিরোধক বা অ্যারেস্টর বসানোর জন্য প্রায় ৯শ’ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও একনেক বৈঠকে তা চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় পড়ে আছে। ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় প্রকল্পটি দ্রুত অনুমোদনের উদ্যোগ গ্রহণ করবে বলেই প্রত্যাশা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ডক্টর এ এস এম মাকসুদ কামালের মতে, আর্লি ওয়ার্নিং সিস্টেম (প্রাক-সতর্কীকরণ ব্যবস্থা) এবং লাইটেনিং অ্যারেস্টর (বজ্রপাত নিরোধক) স্থাপনের মাধ্যমে মানুষের জীবন, গবাদিপশু ও সম্পদ রক্ষা করা যায়। সময়সাপেক্ষ হলেও বিভিন্ন স্থানে তালগাছ রোপণও একটি প্রাকৃতিক সুরক্ষা হতে পারে। মনে রাখতে হবে যে, তাপমাত্রা এক ডিগ্রি বৃদ্ধি পেলে বজ্রপাতের আশঙ্কা বেড়ে যায় ১২ শতাংশ পর্যন্ত। সে অবস্থায় সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে ব্যাপক জনসচেতনতাও প্রত্যাশিত অবশ্যই। এর জন্য ব্যাপক প্রচার চালাতে হবে বিভিন্ন গণমাধ্যমে।