
অভিজিৎ পাল
“দক্ষিণের জানালায় জয়ো উৎসব” শীর্ষক নাগরিক সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে খুলনা জেলা প্রশাসক মনিরুজ্জামান তালুকদার বলেন, পদ্মা সেতু জাতি হিসেবে আমাদের দৃঢ়তার প্রতিক। প্রধানমন্ত্রী দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলের সাথে সারাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন সহ অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের জন্যই পদ্মাসেতু নির্মাণ করছেন। এই লক্ষ্যে খুলনাও পিছিয়ে নেই। অবিলম্বে খুলনার বটিয়াঘাটায় একটি বেসরকারি শিল্পাঞ্চল ও খুলনা বিমান বন্দর তৈরীর ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এ সময় তিনি বিলেন, সকলের অংশগ্রহনের মধ্য দিয়ে আগামীর বাংলাদেশ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয়ে আমাদের কাজ করে পদ্মা সেতুর সুফলকে ঘরে তুলতে হবে।
খুলনা প্রেসক্লাব ও খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়নের আয়োজনে অনুষ্ঠিত নাগরিক সংলাপে সঞ্চালক ছিলেন অর্থনীতিবীদ অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদির।
এসময় নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমডিএ বাবুল রানা বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে খুলনা সহ সারাদেশে আজ উৎসবের আমেজ রয়েছে। আমরা দলীয়ভাবে পদ্মা সেতু উদ্বোধনকে আরো জাক জমকপূর্ণ ভাবে পালনের উদ্দেশ্যে খুলনায় কর্মসুচী গ্রহন করেছি। এ লক্ষ্যে আমাদের কর্যক্রম চলছে। আমরা শুধু দলীয় নেতা কর্মী নয় সকল স্তরের সাধারন মানুষকে নিয়ে এই উৎসব পালন করতে চায়।
এসময় রূপান্তরের পরিচালক স্বপন গুহ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে যে দৃঢ়তা ও সংকল্পের পরিচয় সারা বিশ্বের কাছে তুলে ধরছেন তার জন্য আমরা তাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানায়। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে পদ্মা সেতুর সুফল ভোগ করতে হলে আমাদেরকে তৈরী হতে হবে। এ লক্ষ্যে শিল্পাঞ্চল যেমন তৈরী হবে তেমনি পরবেশি গত দিক বিবেচনায় রাখার উপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আতাউর রহমান বলেন, পদ্মা সেতু সারা বিশ্বের মধ্যে একটি অন্যতম প্রযুক্তির ব্যবহার করা হয়েছে। এখানে যে প্রযুক্তির ব্যবহার হয়েছে তাকে বলা হচ্ছে পৃথিবীর সর্বাধুনিক প্রযুক্তি। অতএব যারা ২০০৪ সালে পদ্মা সেতুর নির্মাণ খরচের সাথে ২০২২ সালের নির্মাণ খরচের তুলনা করে বলছেন ব্যায় বেড়েছে তারা সঠিক বলছেন না। দশ বছর আগে একটি বাড়ি তৈরীতে আপনার যে খরচ হতো এখন কিন্তু তার থেকে আপনার কয়েক গুন খরচ বেড়ে যাবে।
আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ্যাডঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণ করায় আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। যারা পদ্মা সেতু নিয়ে অপপ্রচার করছেন তারা সকল ক্ষেত্রেই অপপ্রচারে ব্যাস্ত থাকেন। এখনও তাই করছেন। তিনি বলেন, মংলা বন্দরে এখন হাড়বাড়িয়া থেকে পণ্য খালাস হয়। যা আগে হতো না। অতএব আমাদের পজেটিভ ভাবে চিন্তা করতে হবে এবং পজেটিভ কাজ করে পদ্মা সেতুর সুফল বয়ে আনতে হবে।
বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুড এ্যাসোসিয়েশনের সহ সভাপতি হুমায়ুন কবীর বলেন, আগে আমাদের রপ্তানি করতে চট্টগ্রাম বন্দরের উপর নির্ভরশীল থাকতে হতো। এর ফলে আমাদেরকে মাছ ফ্রিজার ভ্যানে নিয়ে দুই দিন থেকে তিন দিন পর্যন্ত পদ্মা ঘাটে অপেক্ষা করতে হতো। এর ফলে মাছের মান যেমন কমে যেত তেমিন নষ্টও হয়ে যেত। পদ্মা সেতুর কারনে মংলা ও পায়রা বন্দরের সক্ষমতা বাড়ছে আমাদের সেই ভোগান্তি কমবে। পদ্মা সেতুর কারনে মংলা ও পায়রা বন্দরে আমদানি বাড়বে। এর কারন যোগাযোগ ব্যবস্থায় খরচ কমবে আমদানি বাড়বে।
বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি আশরাফ উল জ্জআন পদ্মা সেতুর গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, খুলনার তেরখাদায় একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারনে সেটি হচ্ছে না। এখন তাহলে কোথায় অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হবে সে বিষয়ে আমাদের দ্রæত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তিনি এই অঞ্চলের ব্যবসা বাণিজ্যের সাথে পর্যটনের পরিসর বাড়াতে অবিলম্বে বিমান বন্দরের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ফারুখ আহম্মেদ। তিনি বলেন, সরকার ২০৪১ সালে যে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করছে পদ্মা সেতু সেই কাজেরই অংশ। এটি আমাদের জিডিপিতে যেমন অবদান রাখবে তেমিন এই অঞ্চলের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দিকেও গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখবে। এ সময় তিনি পদ্মা সেতুর ফলে অর্থনীতির বিভিন্ন যে উন্নয়ন সাধিত হবে তা তুলে ধরেন।
সভার সভাপতি খুলনা প্রেস ক্লাবের সভাপতি নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা সব সময়ই বলি আমাদের সিমেন্ট দিয়ে তৈরী হয়েছে পদ্মা সেতু। এটি সঠিক নয় এটি অষ্ট্রেলিয়া থেকে আনা সিমেন্ট দিয়ে তৈরী করা হয়েছে। পদ্মা সেতুর প্রতি ইঞ্জিতে আধুনিক প্রযুক্তি ও মালের সংমিশ্রন রয়েছে। এই সেতু নির্মাণে কোন না কোন ভাবে ৫০টি দেশের সম্পৃক্ততা রয়েছে।
তিনি আমরা চাই পদ্মা সেতুর সুফল ঘরে তুলতে আমাদের যে ধরনের অবকাঠামো প্রয়োজন যেমন, গ্যাস, বিমানবন্দর, অর্থনৈতিক অঞ্চল, গড়ে তুলে হবে তা না হলে আমরা এই পদ্মা সেতুর প্রকৃত সুফল ভোগ করতে পারবো না। এবং তিনি পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে সকল অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সকলকে একযোগে কাজ করার আহবান জানান।
নাগরিক সংলাপে আরো বক্তব্য রাখেন, খুলনা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মামুন রেজা, খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিয়াজ, সিনিয়র সাংবাদিক মকবুল হোসেন মিন্টু, এস এম জাহিদ হোসেন, শেখ আবু হাসান, সাহেব আলী, মল্লিক সুধাংশু, কৌশিক দে বাপী, সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
এ সময় খুলনায় বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকসহ রাজনৈতি, সামাজিক ও অর্থনেতিক বিভিন্ন সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা অংশগ্রহন করেন।