জন্মভূমি ডেস্ক : চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে ঘরের দরজা ভেঙে এক মুক্তিযোদ্ধার গলায় ফাঁস দেওয়া মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ওই কক্ষ থেকে সন্তান ও নাতি-নাতনিদের উদ্দেশে লেখা ছয়টি আবেগঘন সুইসাইড নোট উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশের ধারণা, তিনি ক্যানসার আক্রান্ত ছিলেন এবং আত্মহত্যা করেছেন।
গতকাল রোববার সন্ধ্যা পৌনে ৬টার আগে নগরের ডবলমুরিং থানার আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিকের ২০ নম্বর রোডে একটি বাসায় এ ঘটনা ঘটে।
ওই বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম আবু সাইদ সরদার (৬৫)। তাঁর ইমন ও সায়মন নামের দুই ছেলে এবং পায়েল নামের এক মেয়ে সন্তান রয়েছে। তিনি ওই বাসায় তাঁর ছেলে ইমনের পরিবারের সঙ্গে থাকতেন।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাওয়া ডবলমুরিং থানা-পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. বায়েজিদ মিয়া বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ তিনতলা ভবনটির ভাড়া বাসার একটি কক্ষের দরজা ভেঙে তাঁর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে। ওনার কক্ষ থেকে ছয়টি সুইসাইড নোট পাওয়া গেছে। মূলত নোটগুলো লেখা হয়েছিল নিহতের দুই ছেলে, একে মেয়ে ও নাতির কাছে। সুইসাইড নোটগুলো দেখে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে উনি আত্মহত্যা করেছেন।
এসআই বায়েজিদ মিয়া বলেন, মূলত ক্যানসার রোগের কারণে উনি খুব কষ্টে ছিলেন। পুলিশের ধারণা মুক্তিযোদ্ধা আবু সাইদ সরদার অনেকটা ভেবে-চিন্তে, সময় নিয়ে এ আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলেন।
পুলিশ জানিয়েছে, নিহতের কক্ষ থেকে উদ্ধার করা সুইসাইড নোটগুলোতে পরিবারের সদস্যদের কাছে আবেগঘন কিছু কথা লেখা লেখেন। এ ছাড়া তাঁর মৃত্যুর কারণ ও মৃত্যুর পর কিছু করণীয়ের ব্যাপারে তিনি সন্তানদের কিছু দায়িত্ব দিয়ে যান।
সুইসাইড নোটগুলোর একটিতে তিনি লেখেন, ‘নিজের ক্যানসার রোগের এত চিকিৎসার পরও কষ্ট আর সহ্য করতে না পেরে অগত্যা আত্মহত্যার পথ বেছে নিলাম’। এ সময় তিনি তাঁর সন্তানসহ সবার কাছে ক্ষমা চান।
মেয়ে পায়েলকে লেখা সুইসাইড নোটে তিনি লিখেন, ‘ক্যানসার মনে হয় ফের ফিরে এসেছে। মুখে ঘা ও মাঝে মাঝে ব্যথা করে। আসলে এ রোগের কোনো চিকিৎসা আছে বলে মনে হয় না। ইদানীং ক্যানসারে কষ্ট পাচ্ছি।’
আবু সাইদ সরদার তার সুইসাইড নোটে নগরের চৌমুহনী কবরস্থানে নিজের মায়ের পাশে দাফনের কথা লিখেছেন।
নিহতের পারিবারিকভাবে ঘনিষ্ঠ নজরুল ইসলাম সুমন বলেন, মুক্তিযোদ্ধা আবু সাইদ সরদার তাঁর ছোট ছেলের পরিবারের সঙ্গে ওই বাসাতে থাকতেন। বিকেলে ছেলেকে কিছু নেওয়ার জন্য বাসার বাইরে পাঠান। এরপর সন্ধ্যার আগে কোনো একটি সময় বাসার দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করে আত্মহত্যা করেন। পরে ছেলে বাসায় এসে ভেতর থেকে দরজা আটকানো দেখে ডাকাডাকি করে। সাড়া না পেয়ে পাশের ভবনের জানালা দিয়ে তাঁকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেয়।
বদ্ধ ঘরে মুক্তিযোদ্ধার ঝুলন্ত লাশ, মিলল আবেগঘন ৬ সুইসাইড নোট
Leave a comment