
স্বদেশে ফেরার দাবিতে রোহিঙ্গাদের সমাবেশ
জন্মভূমি ডেস্ক : মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা দমন-পীড়নের ছয় বছর আজ। দিনটিকে ‘কালো দিবস’ আখ্যা দিয়ে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছেন কক্সবাজারের ৩৩টি ক্যাম্পে আশ্রিত রোহিঙ্গারা।
শুক্রবার সকালে বৃষ্টি উপেক্ষা করে উখিয়া-টেকনাফের ১২টি ক্যাম্পে পৃথক সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এসব ক্যাম্পে শিশুসহ প্রায় ৩০ হাজার রোহিঙ্গা সমাবেশে অংশ নেন। তারা স্বদেশে ফেরার আকুতি জানিয়েছেন সমাবেশ থেকে।
উখিয়ার ৯, ১৪, ১৩, ১৭, ২ ওয়েস্ট, ১ ইস্ট, ৪ ও ১৮, ২০ এক্সটেনশন ও ১৯ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্প এবং টেকনাফের ২২ ও ২৬ নম্বর ক্যাম্পের নির্ধারিত স্থানে সকাল ৭টার পর থেকে সমাবেশে অংশ নিতে জড়ো হতে থাকে রোহিঙ্গারা। ৩৩টি ক্যাম্পের লক্ষাধিক রোহিঙ্গা এসব সমাবেশে যোগ দেয়। সমাবেশের শুরুতে রোহিঙ্গা শিশু-কিশোরেরা মিয়ানমারের জাতীয় সংগীত পরিবেশন করে।
সকাল ১০টায় উখিয়া কুতুপালং লম্বাশিয়া ক্যাম্পে বৃষ্টি উপেক্ষা করে রোহিঙ্গা নেতা হাফেজ মো. হারুন মিয়ানমারের নির্যাতনের বর্ণনা তুলে ধরেন। এ সময় তাদের নিজস্ব ভাষার তারানা (গানের) মাধ্যমে দ্রুত স্বদেশে ফিরে যেতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
সমাবেশে ইংরেজিতে লেখা একটি লিফলেট প্রচার করা হয়। সেখানে তারা উল্লেখ করেছেন, ‘আজ যখন আমরা রোহিঙ্গা গণহত্যা স্মরণ দিবসের ৬ষ্ঠ বার্ষিকীকে জড়ো হয়েছি, তখন আমাদের সেই ট্র্যাজেডির ক্ষণগুলো খুব বেশি তাড়িত করে চলেছে। এই দিনটি রোহিঙ্গাদের দ্বারা সহ্য করা ক্ষতি, দুর্ভোগ এবং অকল্পনীয় নৃশংসতার বেদনা স্মরণ করিয়ে দেয়। আমরা নতমস্তকে বাংলাদেশের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি, এমন কঠিন সময়ে আমাদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ায়।’
এদিকে বর্তমান পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়া অনিরাপদ বলে মনে করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। শুক্রবার (২৫ আগস্ট) রোহিঙ্গা সংকটের ছয় বছর উপলক্ষ্যে এক বিবৃতিতে এমন অভিমত প্রকাশ করেছে ঢাকার মার্কিন দূতাবাস।
বিবৃতিতে বলা হয়, রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশুদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সহিংসতা, ধর্ষণ ও নৃশংস হত্যাভিযানের ছয় বছর পূর্ণ হয়েছে গতকাল। সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গাকে বহনযোগ্য অল্প কিছু জিনিস নিয়ে পালাতে বাধ্য করেছিল শাসকদের এই গণহত্যা। বাংলাদেশের জনগণ সহানুভূতি এবং মানবতার হাত বাড়িয়ে তাদের স্বাগত জানিয়েছিল। প্রায় এক মিলিয়ন উদ্বাস্তুর প্রতি আতিথেয়তা অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশের জনগণ। আমরা এই উদারতার প্রশংসা করি।
বিবৃতিতে বলা হয়, বর্তমান পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়া অনিরাপদ। আমরা আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়, পুনর্বাসনের মাধ্যমে দায়িত্ব ভাগ করে নিয়ে রোহিঙ্গাদের দুর্দশার সর্বাঙ্গীণ সমাধানে অবদান রাখছি। আন্তর্জাতিক পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় অবদান রাখা অন্যান্য দেশগুলোর উদারতাকে আমরা সাধুবাদ জানাই। আশা করি, ঐতিহ্যগতভাবে পুনর্বাসন দেওয়া দেশগুলোর বাইরেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই গুরুত্বপূর্ণ প্রচেষ্টায় যোগ দেবে। ২০০৯ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশসহ এ অঞ্চল থেকে প্রায় ১৩ হাজার রোহিঙ্গাকে স্বাগত জানিয়েছে।
মিয়ানমারের অবস্থার উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বিশ্বের অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ এবং প্রান্তিক এই জনগোষ্ঠীর জন্য মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানাই। আমাদেরকে অবশ্যই বাংলাদেশ সরকার এবং রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দানকারী বাংলাদেশি জনগোষ্ঠীর প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখতে হবে।