জন্মভূমি ডেস্ক : বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়াচ্ছে ভারত। জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জি এম) কাদেরের নেতৃত্বাধীন একটি প্রতিনিধিদলের ভারত সফরের সময়ে এক প্রতিবেদনে এমনটি জানিয়েছে ভারতের প্রভাবশালী ইংরেজি দৈনিক দ্য হিন্দু।
সোমবার এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে দ্য হিন্দু। পত্রিকাটি বলেছে, বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদলকে আতিথ্য দেয়ার দিন কয়েক পর ঢাকার রাজনৈতিক মহলের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়িয়েছে নয়াদিল্লি।
জাতীয় পার্টির এই প্রতিনিধিদলের ভারত সফরে আসাটা তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, সেপ্টেম্বরে ভারতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া সম্মেলনে জি-২০ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আতিথ্য দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে। এই সম্মেলনে বাংলাদেশকে ‘অতিথি দেশ’ হিসেবে ইতিমধ্যে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
দ্য হিন্দু বলছে, বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির কেন্দ্রে রয়েছে দেশটির প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। দলটির দাবি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার তত্ত্বাবধায়ক ছাড়াই আসন্ন নির্বাচন যথাসময়ে করার ব্যাপারে জোর দিয়ে আসছে। কারণ, ২০১১ সালে এক সংসদীয় আইনের মাধ্যমে এই ব্যবস্থা (তত্ত্বাবধায়ক সরকার) বাতিল হয়ে গেছে।
এ নিয়ে টেলিফোনে দ্য হিন্দুর সঙ্গে কথা বলেন জাপা নেতা জি এম কাদের। তিনি যদিও নিজেদের আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি থেকে দূরত্ব বজায় রাখেন। তিনি বলেন, ‘সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপে এগিয়ে আসাটা সরকারের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা চাই, সব পক্ষ বসুক। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার উপায় নিয়ে তারা আলোচনা করুক।’
তত্ত্বাবধায়ক নিয়ে বিএনপির দাবি মেনে নেননি জিএম কাদের। তিনি দ্য হিন্দুকে বলেন, তারা (বিএনপি) তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়টিতে জোর দিয়ে আসছে। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকারের গঠন ঠিক কেমন হওয়া উচিত, তা তারা স্পষ্ট করেনি।
তিনি দ্য হিন্দুকে বলেন, ‘আমাদের ভাবনায় একটি ফর্মুলা আছে। যখন সর্বদলীয় সংলাপ হবে, তখন আমরা তা আলোচনার টেবিলে উপস্থাপন করব।’
জাপা চেয়ারম্যান ও সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদের রোববার (২০ আগস্ট) তিন দিনের সফরে ভারতে গেছেন। ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) আমন্ত্রণে তার এই এই সফর।
এদিকে, রোববার (২০ আগস্ট) বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে একটি বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতীয় প্রভাবশালী দৈনিক দ্য হিন্দু। তারা বলছে, আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার যদি ক্ষমতা হারায়, তাহলে বেকায়দায় পড়বে ভারত। একই সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক সহিংসতাও বৃদ্ধি পেতে পারে।
প্রতিবেদনটির শুরুতে বলা হয়েছে, প্রতিবেশিদের মধ্যে যে ভারতবিরোধী মনোভাব রয়েছে সেখানে শেখ হাসিনার সরকার খুব সম্ভবত ভারতের সবচেয়ে নির্ভরশীল ও কাছের মিত্র। তবে যদিও ভারতকে দক্ষিণ এশিয়ায় ‘বিগ পাওয়ার’ হিসেবে ধরা হয়, কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে তাদের এই অবস্থানে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে চীন। আর বছর গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ায় চীন তাদের অবস্থান শক্ত করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
প্রতিবেদনে এরপর বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দৌড়ঝাঁপ করার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসন বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ধারা বিনষ্টকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছে এবং জানুয়ারিতে একটি সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক নির্বাচন নিশ্চিত করতে চেষ্টা করছে। এর অংশ হিসেবে নির্বাচনে কারচুপির চেষ্টাকারীদের ভিসা নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়েছে। এছাড়া ইতোমধ্যে পুলিশের এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
প্রধান সম্পাদক: লে. কমান্ডার (অব.) রাশেদ ইকবাল, প্রকাশক আসিফ কবীর কর্তৃক জন্মভূমি প্রকাশনী লি: ১১০/২,সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু সড়ক, খুলনা থেকে মূদ্রিত ও প্রকাশিত