তালা প্রতিনিধি
বিল থেকে অর্ধশতাধিক কোলা ব্যাঙ ধরে খাবার জন্য জীবিত অবস্থায় ব্যাঙের দুটো করে পা কেটে হত্যার দায়ে তালায় দু’যুবকের অর্থদন্ড হয়েছে। তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রশান্ত কুমার বিশ্বাস ভ্রাম্যমান আদালমের মাধ্যমে রোববার (৩ জুলাই) বিকালে তাদের ২ হাজার টাকা জরিমানা করেন। বন্যপ্রাণি অপরাধ আইনে বাংলাদেশে এটাই প্রথম উভচর প্রজাতীর বন্যপ্রাণি অপরাধ সনাক্ত এবং দন্ড প্রদান বলে জানা গেছে।
সূত্রে জানাগেছে, তালা উপজেলার আটারই গ্রামের ছিদাম দাশের ছেলে আশুতোষ দাশ এবং দুলাল দাশের ছেলে সরজিৎ দাশ পাশ্ববর্তী ঢেঙ্গার বিলে রোববার সকাল থেকে বিপন্ন প্রজাতীর কোলা ব্যাঙ ধরা শুরু করে। এদিন সকাল থেকে মুষলধারে বৃষ্টি হওয়ায় শত শত ব্যাঙ বিলের নতুন পানিতে প্রজনন ও ডিম ছাড়ার জন্য জড়ো হয়। এই সুযোগে আশুতোষ ও সরজিৎ ব্যাঙের পায়ের মাংস ভক্ষনের জন্য শতাধিক ব্যাঙ ধরতে থাকে। এসময় স্থানীয় কৃষকরা তাদের বাঁধা দিলে তারা কৃষকদের হুমকি প্রদানসহ অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে।
একপর্যায়ে বন্যপ্রাণি অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কাজ করা তালার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ওয়াইল্ডলাইফ মিশনের সভাপতি সাংবাদিক জুলফিকার রায়হান, সাধারণ সম্পাদক রাশেদ বিশ্বাসসহ সংগঠনের কর্মীরা ঘটনার সংবাদ পেয়ে তৎক্ষনাত সেখানে হাজির হন। এ সময় তারা ঢাকা বন অঞ্চলের বন সংরক্ষক ও ওয়াইল্ডলাইফ মিশনের প্রধান উপদেষ্টা মোল্য রেজাউল করিম, বণ্যপ্রাণি অপরাধ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের পরিদর্শক আবদ্ল্লুাহ-আস-সাদিক, বন বিভাগের মৎস্য বিশেষজ্ঞ মফিজুর রহমান চৌধুরী এবং ঢাকা বণ্যপ্রাণি অপরাধ দমন ইউনিটের সদস্য শেখ জসিমের সার্বিক দিক নির্দেশনায় আটারই গ্রামে অভিযান চালিয়ে দু’পা করে কেটে রাখা অর্ধ শতাধিক জীবিত ও মৃত ব্যাঙসহ ব্যাঙ শিকারীদের আটকিয়ে রাখে। এ সময় মানবাদিকার কর্মীরাসহ এলাকার শত শত নারী, পুরুষ ও শিশু ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে নির্মমভাবে জীবিত ব্যাঙের পা কাটার ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে এবং তাদের শাস্তি দাবী করতে থাকে। একপর্যায়ে তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রশান্ত কুমার বিশ্বাস সেখানে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান পরিচালনা করেন। এরআগে তালা থানার ওসি আবু জিহাদ ফকরুল আলম খান সংবাদ পেয়ে সেখানে পুলিশ প্রেরণ করলে তালা থানার এসআই সৈকত মল্লিক ব্যাঙ শিকারীদের আটকসহ নির্মম হত্যার শিকার অর্ধশতাধিক কোলা ব্যাঙ উদ্ধার করেন। পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রশান্ত কুমার বিশ্বাস ব্যাঙ শিকার ও হত্যার দায়ের বন্যপ্রাণি অপরাধ নিয়ন্ত্রণ আইনে আশুতোষ দাশ ও সরজিৎ দাশকে ১ হাজার টাকা করে ২ হাজার টাকা অর্থদন্ড প্রদান করেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রশান্ত কুমার বিশ্বাস বলেন, ব্যাঙ পরিবেশের জন্য খুবই প্রয়োজন। ব্যাঙ ধরা, শিকার করা ও হত্যা করা বা খাওয়া আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। এধরনের অপরাধ না করার জন্য তিনি সকলের প্রতি অনুরোধ জানান।
বণ্যপ্রাণি অপরাধ নিয়ন্ত্রন বিভাগের পরিদর্শক আবদ্ল্লুাহ-আস-সাদিক বলেন, বাংলাদেশে এই প্রথম উভচর প্রজাতির বন্যপ্রাণী অপরাধ সনাক্তকরণ ও শাস্তি প্রদান। এ সময় ওয়াইল্ডলাইফ মিশনের সদস্যসহ প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
ওয়াইল্ডলাইফ মিশনের সাধারন সম্পাদক শিক্ষক রাশেদ বিশ্বাস বলেন, বন্যপ্রাণি আইনের তফশীলে ব্যাঙ সংরক্ষিত প্রাণি। ব্যাঙ ধরা, হত্যা করা বা খাওয়া সম্পূর্ন দন্ডনীয় অপরাধ। তিনি বলেন, বর্ষা মৌসুম কোলা ব্যাঙ এর প্রজনন সময়। এসময় বিলে, খালে বিপন্ন প্রজাতীর কিছু কোলা ভ্যাঙ দেখা যায়। অথচ, একশ্রেণির মানুষ পায়ের মাংস ভক্ষনের জন্য নির্বিচারে ব্যাঙ হত্যা করছে, যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।