জন্মভূমি ডেস্ক : বর্তমানে দেশে প্রতিবছর প্রায় ২৫ লাখ টায়ারের চাহিদা রয়েছে। দেশের বেশ কয়েকটি কোম্পানি টায়ার উৎপাদন করলেও বাজারের এই বার্ষিক চাহিদার প্রায় ৯০ শতাংশই আমদানির মাধ্যমে পূরণ করা হচ্ছে। দেশে এখন বছরে ২৫ লাখ টায়ারের চাহিদা আছে।
এক মাস আগে তকি তাজওয়ার খেয়াল করলেন তার গাড়ির টায়ার নষ্ট হয়ে গেছে, বদলাতে হবে। তিনি তৎক্ষণাৎ সিদ্ধান্ত নিলেন, বাংলাদেশে তৈরি টায়ার কিনবেন।
আগে, যখন বাইক চালাতেন, টায়ার বদলানোর দরকার পড়লেই দেশি টায়ার কিনতেন তকি। তকির গাড়িটি বিদেশি কোম্পানি তৈরি করলেও এতে দেশে তৈরি টায়ার, ব্যাটারি বা যেকোনো যন্ত্রাংশ ব্যবহার করতে পারলে ভালো লাগে তার। স্থানীয়ভাবে তৈরি ব্যাটারি আসলে স্ট্যান্ডার্ড গাড়িসহ সব ধরনের যানবাহনেই ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।
তবে যখন দেখলেন সব দোকানে আমদানি করা গাড়ির টায়ারই বিক্রি হয়, তখন বেশ অবাক আর হতাশই হয়েছিলেন তকি।
বাংলাদেশের টায়ার কোম্পানিগুলো এখন ট্রাক, বাস, মোটরসাইকেল, ট্রাক্টর, রিকশা ও সাইকেল থেকে শুরু করে প্রায় সব ধরনের যানবাহনের জন্য নানা ধরনের টায়ার ও টিউব তৈরি করে। তবে স্ট্যান্ডার্ড গাড়ির টায়ারের কথা এলে—স্থানীয়ভাবে যাকে ‘প্রাইভেট কার’ বলা হয়—দেশের কোনো কোম্পানিই এখনও এসব তৈরি করে না।
নীতিগত সহায়তার অভাবে আটকে আছে টায়ার শিল্পের বিকাশ ঃ বাংলাদেশের টায়ার ও টিউব উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে গাজী, মেঘনা, হোসেন ও যমুনা। ১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় গাজী গ্রুপ। এর দুই বছর পর যাত্রা শুরু করে দেশের সবচেয়ে পুরনো টায়ার কোম্পানিগুলোর একটি গাজী টায়ারস। প্রতিষ্ঠানটি রিকশা ও রিকশা ভ্যানের জন্য টায়ার ও টিউব উৎপাদন শুরু করে। এখন তারা থ্রি-হুইলার, মোটরসাইকেল, বাস, ট্রাক ও মাইক্রোবাসের জন্য এসব পণ্য তৈরি করে।
গাজী টায়ারসের ব্যবস্থাপক (কমার্শিয়াল অ্যান্ড অ্যাডমিন) মেরাজুল ইসলাম বলেন, ‘গাড়ির ব্যাপারটা আলাদা। এগুলো উচ্চ-মূল্যের যানবাহন। আমরা এখনও বোঝার চেষ্টা করছি গাড়ির মালিকরা দেশে তৈরি টায়ার কিনতে আগ্রহী হবেন কি না।’
এই কর্মকর্তা বলেন, বেশিরভাগ টায়ার উৎপাদনের অবকাঠামো আগে থেকেই আছে তাদের। গাড়ির টায়ার উৎপাদন যদি শক্তিশালী ব্যবসায়িক খাতে পরিণত হয়, তাহলে তারা আরও বিনিয়োগ করতে প্রস্তুত আছেন।
মেঘনা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড সাইকেল, মোটরবাইক ও থ্রি-হুইলারের জন্য টায়ার ও টিউব তৈরি করে। ট্রাক ও বাসের জন্যও টায়ার ও রাবার উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে কোম্পানিটির।
মেঘনা জানায়, তারা ইউরোপ, আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে টায়ার ও টিউব রপ্তানি করে। কোম্পানিটি অবশ্য গাড়ির টায়ার তৈরি করে না।
মেঘনা গ্রুপের চিফ অপারেটিং অফিসার লুৎফুল বারী বলেন, ‘বিশাল পরিমাণে রেডিয়াল টায়ার তৈরি করতে হবে। দেশে এই পণ্যের চাহিদা এ ধরনের প্রকল্পের সক্ষমতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।’ কোম্পানিটির গাড়ির টায়ার তৈরির পরিকল্পনা নেই বলেও জানান তিনি।
১৯৯৬ সাল থেকে মোটরসাইকেলের টায়ার তৈরি করছে হোসেন টায়ারস। মাইক্রোবাসের জন্য বায়াস টায়ারও তৈরি করে প্রতিষ্ঠানটি, তবে রেডিয়াল (টিউবলেস) টায়ার তৈরি করে না।
হোসেন টায়ারসের জেনারেল ম্যানেজার মো. সিরাজুল ইসলাম তুহিন হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশের কোনো টায়ার প্রস্তুতকারক রেডিয়াল টায়ার তৈরি করে না।’ তবে বাংলাদেশে তৈরি গাড়ির টায়ারের জন্য অপেক্ষা শিগগিরই ফুরাতে পারে।
২০১৫ সালে সরকার কর অবকাশ ঘোষণা করার পর যমুনা গ্রুপ ২ হাজার কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগে ২৫ লাখ টায়ার উৎপাদন সক্ষমতার একটি কারখানা স্থাপন করেছে বলে জানানো হয়েছিল টিবিএসের এক প্রতিবেদনে।
করোনা মহামারিতে ওই কারখানার কার্যক্রম বিভিন্ন চ্যালেঞ্জে পড়েছিল। তবে যমুনা টায়ারস অ্যান্ড রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড কোম্পানি এখন পরীক্ষামূলকভাবে টায়ার উৎপাদন করছে।
যমুনা গ্রুপের পরিচালক (কমার্শিয়াল) এবিএম শামসুল হাসান বলেন, ‘হবিগঞ্জে আমাদের কারখানায় গ্যাস সরবরাহ ছিল না। চার মাস আগে গ্যাস সরবরাহ পেয়েছি, এক মাস আগে ট্রায়াল শুরু করেছি। এখন আমরা যন্ত্রপাতি ঠিক করছি।’তিনি বলেন, ‘মহামারির আগে বিদেশি টেকনিশিয়ানরা মেশিনগুলো বসিয়েছিলেন। ৪০ জনকে আমরা ৩ মাসের প্রশিক্ষণ নিতে চীনে পাঠিয়েছিলাম।’ গাড়ি ও অন্যান্য যানবাহনের টায়ার কয়েক মাসের মধ্যে বাজারে আসতে পারে বলে জানান তিনি। শামসুল হাসান বলেন, কোম্পানিটি টায়ার রপ্তানি করার প্রস্তুতিও নিচ্ছে।=
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, বর্তমানে দেশে প্রতিবছর প্রায় ২৫ লাখ টায়ারের চাহিদা রয়েছে। দেশের বেশ কয়েকটি কোম্পানি টায়ার উৎপাদন করলেও বাজারের এই বার্ষিক চাহিদার প্রায় ৯০ শতাংশই আমদানির মাধ্যমে পূরণ করা হচ্ছে। চীন ও ভারতের দুটি কোম্পানি দেশে এই খাতে বড় বিনিয়োগের পরিকল্পনা করলেও পরে কারখানা স্থাপনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে।
বাংলাদেশ এখন টায়ার ও রাবার উৎপাদনের পরিকল্পনা
Leave a comment