জন্মভূমি ডেস্ক: বাংলাদেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা যখন আলোচনায়, ঢাকা-দিল্লি নাজুক কূটনৈতিক সম্পর্ক যখন দৃশ্যমাণ; তখন ওয়াশিংটনে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বৈঠকে বাংলাদেশ প্রসঙ্গটি আলোচনায় উঠেছে। গত বৃহস্পতিবারের এ বিষয়টি নিয়ে সংবাদমাধ্যমে খবর এসেছে। ট্রাম্প বাংলাদেশ নিয়ে প্রশ্নটি ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদীর দিকে ঠেলে দিয়েছেন। এদিকে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্কের সাথে ভিডিও কলে বেশ কয়েকটি বিষয়ে আলাপ হয়েছে। খবর সকাল সন্ধ্যা।
মোদী বাংলাদেশ নিয়ে কোনও কথা বলেননি সংবাদ সম্মেলনে। তবে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিস্ত্রি সাংবাদিকদের বলেছেন, বাংলাদেশের চলমান ঘটনা প্রবাহ নিয়ে নিজের উদ্বেগ ট্রাম্পের কাছে তুলে ধরেছেন মোদী।
ওয়াশিংটনে যখন ট্রাম্প-মোদী ওই বৈঠক চলছে, তখন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভিডিও কলে আলাপ সেরেছেন ধনকুবের ও যুক্তরাষ্ট্রের ‘ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি’ দপ্তরের প্রধান ইলন মাস্কের সাথে। সেখানে তারা ভবিষ্যৎ সহযোগিতার ক্ষেত্র অন্বেষণের পথ খুঁজেছেন বলে বাসস জানিয়েছে।
শেখ হাসিনার সরকারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাইডেন সরকারের সম্পর্কের অবনতি হয়েছিল, বিপরীতে ভারতের মোদীর সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল নিবিড়। যাকে ‘দিল্লির দাসত্ব’ হিসাবে দেখেন বাংলাদেশের জুলাই আন্দোলনকারীরা। অভ্যুত্থানের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক ক্রমশ অবনতিশীল। এর মধ্যে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনার নিন্দায় সরব হয় ভারত। গত আগস্টে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারে থাকা ট্রাম্পও বাংলাদেশের সেই পরিস্থিতি নিয়ে অসন্তোষ জানিয়েছিলেন।
হোয়াইট হাউজে ট্রাম্প-মোদী বৈঠক শেষে নানা বিষয়ে জানতে চাওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশ নিয়েও ট্রাম্পকে প্রশ্ন করেন ভারতীয় এক সাংবাদিক। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের কাছে জানতে চান, বাইডেন প্রশাসনের সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের ডিপ স্টেট বাংলাদেশে ক্ষমতার পরিবর্তনে জড়িত ছিল এবং এরপর জুনিয়র সরোসের সঙ্গে বৈঠকও করেন মুহাম্মদ ইউনূস। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ বিষয়ে ট্রাম্পের অবস্থান কী? উত্তরে ট্রাম্প বলেন, সেখানে (বাংলাদেশে) আমাদের ডিপ স্টেটের কোনও ভূমিকা ছিল না। আর এই বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী (নরেন্দ্র মোদী) অনেক দিন ধরে কাজ করছেন। বলতে গেলে ভারত সেখানে শত শত বছর ধরে কাজ করেছে। আমি বাংলাদেশের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর (মোদী) ওপর ছেড়ে দিচ্ছি, বলেই পাশে বসা মোদীর দিকে তাকান ট্রাম্প।
তখন মোদী কথা বলা শুরু করেন প্রশ্নকর্তা সাংবাদিকের ইউক্রেন নিয়ে করা প্রথম প্রশ্ন নিয়ে। তিনি বলেন, ভারত কখনও নিরপেক্ষ নয়, ভারত সব সময় শান্তির পক্ষে। বাংলাদেশের প্রসঙ্গটি না টেনেই কথা শেষ করেন তিনি। তবে পরে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিস্ত্রি এনিয়ে কথা বলেন বলে আনন্দবাজার পত্রিকা জানিয়েছে।
তাকে উদ্ধৃত করে সংবাদপত্রটির প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ নিয়ে মোদী এবং ট্রাম্পের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি, অবস্থান ট্রাম্পকে জানিয়েছেন মোদী। নিজের উদ্বেগও ব্যক্ত করেছেন।
মোদীর যুক্তরাষ্ট্র সফরের ডামাডোলের মধ্যেই দুবাই সফররত ড. ইউনূস বৃহস্পতিবার ভিডিও কলে স্পেসএক্স, স্টারলিংকের মালিক ইলন মাস্কের সঙ্গে কথা বলে ভবিষ্যৎ সহযোগিতার ক্ষেত্র অন্বেষণ এবং বাংলাদেশে স্টারলিংক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা চালুর বিষয়ে আলোচনা করেন।
বাসসের প্রতিবেদনে বলা হয়, ড. ইউনূস এবং ইলন মাস্ক স্টারলিংকের স্যাটেলাইট যোগাযোগে বিশেষ করে বাংলাদেশের উদ্যোগী যুবক, গ্রামীণ ও পিছিয়ে থাকা নারী এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলের কমিউনিটির রূপান্তরমূলক প্রভাবের উপর জোর দেন। কম খরচে কীভাবে উচ্চ-গতির ইন্টারনেট সংযোগ বাংলাদেশে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষমতায়ন অনুন্নত অঞ্চলে এবং এর লক্ষ লক্ষ ক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাকে জাতীয় সীমানার বাইরে প্রবেশাধিকার দিতে পারে, সে বিষয়ে তারা আলোচনা করেন।
ড. ইউনূস বলেন, বাংলাদেশের অবকাঠামোতে স্টারলিংকের সংযোগ লাখ লাখ মানুষের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করবে এবং দেশকে বিশ্বব্যাপী ডিজিটাল অর্থনীতিতে আরও ঘনিষ্ঠভাবে সংহত করবে। স্টারলিংক হবে গ্রামীণ ব্যাংক এবং গ্রামীণফোনের একটি সম্প্রসারণ, যা গ্রামের নারী ও যুবকদের বিশ্বের সাথে সংযুক্ত করার পথপ্রদর্শক হতে পারে। তারা বিশ্ব উদ্যোক্তা হয়ে উঠবে।
ইলন মাস্ক দারিদ্র্য বিমোচনে এর বৈশ্বিক প্রভাব স্বীকার করে গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষুদ্র ঋণ মডেলের প্রশংসা করেন বলে বাসস জানায়। তিনি বহু বছর ধরে গ্রামীণ ব্যাংক এবং পল্লী ফোনের সঙ্গে পরিচিত বলেও জানান । ড. ইউনূস স্টারলিংক চালুর জন্য ইলন মাস্ককে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। মাস্ক তাতে ইতিবাচক সাড়াা দেন বলে জানায় বাসস। (সংক্ষেপিত)।
বাংলাদেশ প্রশ্নে ট্রাম্প ভার দিলেন মোদীকে, ধনকুবের ইলন মাস্কের সাথে ড. ইউনূসের আলাপ

Leave a comment