
মোল্লা আব্দুর রব, বাগেরহাট : বাগেরহাট কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ডের দখল নিয়ে বিএনপিপন্থী দুই শ্রমিক সংগঠনের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সোমবার (২ ডিসেম্বর) বেলা সোয়া ১২টার দিকে বাস স্ট্যান্ডের সামনে ওই ঘটনা ঘটে। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতেই দুই গ্রুপের মধ্যেই তাদের ধাওয়া দিতে দেখা যায়। কিছু সময় পর অতিরিক্ত সেনা সদস্যরা ঘটনাস্থলে আসলে উভয় পক্ষ অবস্থান ছেড়ে চলে যায়। ঘটনার পর থেকে ওই এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগ, শ্রমিক লীগের নেতাকর্মী ও তাদের সমর্থিত শ্রমিক ইউনিয়নের লোকজন বাসস্ট্যান্ড ছেড়ে যায়। তখন কয়েকদিন বাস চলাচল ও টিকিট কাউন্টারগুলো বন্ধ থাকে। দু’ তিনদিন পর বিএনপির শ্রমিক দল সমর্থিত একটি পক্ষ বাসস্ট্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং আন্ত:জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ ও মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের কমিটি গঠন করে। তবে ক’দিন না যেতেই শ্রমিক দলের অন্য একটি পক্ষ একই ইউনিয়নের কমিটি গঠন করে স্ট্যান্ডের দখল নেওয়ার চেষ্টা করে। এরপর থেকেই বাসস্ট্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। এনিয়ে দুই পক্ষ পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করাসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ প্রদান করেছে। দুইপক্ষই নিজেদেরকে শ্রম অধিদপ্তর ও জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের অনুমোদিত কমিটি দাবি করে।
দাবি করা দুটি কমিটির এক পক্ষের সভাপতি মোঃ সাইফুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক শামিম খান। অন্য পক্ষে সভাপতি হিসেবে রয়েছেন, আবুল কাশেম ভূঁইয়া সেলিম ওরফে সেলিম ভূঁইয়া এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে রয়েছেন শেখ জাহিদুল ইসলাম। এদের মধ্যে সাইফুল ইসলাম জেলা শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক এবং শামিম খান জেলা শ্রমিক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।অন্য পক্ষের আবুল কাশেম ভূঁইয়া সেলিম ওরফে সেলিম ভূঁইয়া বাগেরহাট পৌর শ্রমিক দলের সাবেক সভাপতি। শেখ জাহিদুল ইসলাম সাবেক যুবদল নেতা বর্তমান শ্রমিকনেতা বলে জানা যায়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, সেলিম ভূঁইয়ার নেতৃত্বে বিএনপির একটি গ্রুপ সোমবার বাসস্ট্যান্ডে যাবে বলে আগের দিন ঘোষণা দেয়। এ নিয়ে সকাল থেকেই উত্তেজনা বিরাজ করছিল, বাসস্ট্যান্ডে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। টহল চলছিল সেনাবাহিনীর। এরই মাঝে বেলা সোয়া ১২টার দিকে বাসস্ট্যান্ডে পূর্ব দিকের সড়ক দিয়ে লাঠিসোঁটাসহ দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে সেলিম ভূঁইয়া গ্রুপের লোকজন স্ট্যান্ডের দিকে আসতে শুরু করে। তখন স্ট্যান্ডের ভেতর থাকা শ্রমিক দল নেতা শামীম খান ও সাইফুল ইসলামের লোকজনও লাঠিসোটা নিয়ে বাধা সৃষ্টির চেষ্টা করে। এ সময় উভয় পক্ষের মাঝে ইট পাটকেল ছোড়া ও ধাওয়া ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে স্ট্যান্ডের দখলে থাকা সাইফুল ইসলাম ও শামীম খানের লোকজন পিছু হটে এবং সেলিম ভূঁইয়ার লোকজন স্ট্যান্ডে ঢুকে স্লোগান দিতে শুরু করে।
তবে এ সময় সেখানে উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের নিষ্ক্রিয় দেখা যায় দাবি করে প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানে সেনাবাহিনীর দুটি গাড়ি ও অতিরিক্ত পুলিশ আসে। পরে অতিরিক্ত সেনা সদস্যরা ঘটনাস্থলে এলে দুই পক্ষই এলাকা ছেড়ে চলে যায়। তখন আশপাশের অবস্থান নেওয়া উৎসুক লোকদেরও সরিয়ে দেয় সেনাবাহিনী।
দুই পক্ষই আন্ত:জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ ও মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের দুটি কমিটি গঠন করেছে এবং এক পক্ষ অন্য পক্ষের কমিটিকে অবৈধ বলে দাবি করছে।
শামীম খান বলেন, ফেডাডেরশন ও শ্রম অধিদপ্তরের অনুমোদন দিয়েছে। আমরা শপথ গ্রহন করে শ্রমিক ইউনিয়ন পরিচালনা করছিলাম। আবুল কাশেম ভুইয়া সেলিমের নেতৃত্বে একটি দল এসে বাসস্ট্যান্ড দখল করেছে। তারা বাসস্ট্যান্ড ভাংচুর ও লুট করেছে বলেও অভিযোগ করেন এই শ্রমিক নেতা।
বাসস্ট্যান্ড দখল, ভাংচুর ও লুটপাট বিষয়ে জানতে চাইলে আবুল কাশেম ভুইয়া সেলিম বলেন, একটি পক্ষ অবৈধভাবে বাসস্ট্যান্ড ও শ্রমিক ইউনিয়ন দখল করে চাঁদাবাজী করে আসছিল। শ্রম অধিদপ্তর, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন আমাদের কমিটি অনুমোদন দিয়েছেন। আমরা পুলিশ, সেনাবাহিনী ও জেলা বিএনপিকে অবহিত করে বাসস্ট্যান্ড দখলমুক্ত করেছি। আমরা লুট করিনি এবং ভাংচুরও করা হয়নি।
বাগেরহাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ সাইদুর রহমান বলেন, আমরা দুই পক্ষকেই সরিয়ে দিয়েছি। কোন প্রকার বড় বিশৃঙ্খলা হয়নি।