শেখ হাসান আল মাহমুদ, শরণখোলা : লোকালয় সংলগ্ন পূর্ব সুন্দরবনের সীমানায় নাইলনের ফেন্সিং বেড়া নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। গ্রামে বাঘসহ বণ্যপ্রাণীর প্রবেশ ঠেকাতে বনবিভাগ এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। ইতিমধ্যে পাঁচ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বেড়া দেওয়া হয়েছে। কংক্রিটের পিলার বসানো হয়েছে আরো ১০ কিলোমিটার জায়গায়। বন লাগোয়া গ্রামবাসীর বাঘ আতংক কাটতে শুরু করেছে ।
সুন্দরবন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় সুন্দরবনে বাঘ সুরক্ষা প্রকল্পের আওতায় ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাদঁপাই ও শরণখোলা রেঞ্জ এলাকার কয়েকটি পয়েন্টে বনের সীমানায় ১ কোটি ৮৭ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা ব্যায়ে নাইলনের ফেন্সিং ( জাল) বেড়া দেওয়ার কাজ শুরু করে। প্রথম পর্যায়ে ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বেড়ার মধ্যে দাসেরভারানী ফরেষ্ট টহল ফাঁড়ি থেকে শুরু করে নাংলী ধানসাগর পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার ফেন্সিং দেওয়া হয়েছে। পিলার ( খুঁটি) বসানো হয়েছে আরো ১০ কিলোমিটার।
সুন্দরবনের সীমানায় বেড়া নির্মাণের কাজ শুরু হওয়ায় বন সংলগ্ন এলাকার প্রায় ৩০ হাজার গ্রামবাসীর আতংক কাটতে শুরু করেছে। পূর্ব সুন্দরবনের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া এককালীন খরস্রোতা ভোলা নদী ভরাট হয়ে এখন ছোট খালে পরিণত হয়েছে। কোথাও কোথাও গ্রাম আর বন মিশে গেছে সম্পূর্নভাবে। এ বনের পাশে শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জ উপজেলার গুলিশাখালী, আমুরবুনিয়া, ধানসাগর, পশ্চিম রাজাপুর, টগড়াবাড়ী, উত্তর রাজাপুর, দক্ষিণ রাজাপুর, সোনাতলাসহ অন্তত ২০ টি গ্রামের ৩০ হাজার মানুষ বসবাস করে। নদী ভরাট হওয়ার কারণে রাতের আধারে সুন্দরবন থেকে লোকালয়ে অবাধে বাঘ,হরিণ, শুকর, সাপসহ বণ্যপ্রাণী এসে মহিষ, গরু ছাগল খেয়ে ফেলে । বন্য শুকর নষ্ট করে কৃষকের ক্ষেতের ফসল। সন্ধ্যার পরে বাঘের ভয়ে সাধারণ মানুষের চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। উল্লেখ্য, গত ১০ বছরে বন সংলগ্ন মোড়েলগঞ্জ ও শরণখোলা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে অন্তত অর্ধশত বার বাঘ প্রবেশের ঘটনা ঘটে। বিগত বছরগুলোতে বিভিন্ন সময় লোকালয়ে আসা অন্তত ৫ টি বাঘ গ্রামবাসীর গণপিটুনীতে প্রাণ হারিয়েছে বলে জানান গ্রামবাসীরা।
উত্তর রাজাপুর গ্রামের বাসিন্দা জাহিদুল হাওলাদার ও মঞ্জু বেগমসহ স্থানীয়দের অভিমত এ বেড়া সম্পূর্ন নির্মাণ করা হলে লোকালয়ে সহসাই বণ্যপ্রাণী আসতে পারবেনা অন্যদিকে গ্রামের গরু মহিষ ও সাধারণ মানুষ যত্রতত্র সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারবেনা। ধানসাগর টগড়াবাড়ী এলাকার গ্রাম পুলিশ তোফাজ্জেল হোসেন ভিন্নমত প্রকাশ করে বলেন, নাইলনের ফেন্সিং বেড়া খুব একটা কাজে দিবেনা। বণ্যশুকর ও গ্রামের মহিষ অনায়াসে এই জাল ছিড়ে ফেলবে বলে তিনি মনে করেন। বেড়া নির্মাণের পাশাপাশি এলাকাবাসি সুন্দরবন সুরক্ষায় ভরাট হয়ে যাওয়া নদী পুনঃখনন করে ভোলা নদীকে আগের রুপে ফিরিয়ে আনার দাবী জানিয়েছেন।
পূর্ব সুন্দরবনের চাদঁপাই রেঞ্জের ধানসাগর ষ্টেশন কর্মকর্তা ফরেষ্টার বিপুলেশ্বর দেবনাথ বলেন, নাইলনের ফেন্সিং শেষ হলে জীববৈচিত্র রক্ষার পাশাপাশি বনে মানুষের অবৈধ প্রবেশ বন্ধ হয়ে যাবে। তবে এটা নির্ভর করবে সাধারণ মানুষের গনসচেতনতার উপর এবং তারা যদি ফেন্সিং নষ্ট না করে।
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ বাগেরহাটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ( ডিএফও) কাজী মুহাম্মদ নুরুল করীম বলেন, সুন্দরবন সংলগ্ন গ্রামে বাঘ, হরিণসহ বণ্যপ্রাণী প্রবেশ ঠেকাতে মানুষের দাবীর প্রেক্ষিতে বনের সীমনায় নাইলনের ফেন্সিং বেড়া নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। সুন্দরবনের বৈদ্যমারী, গুলিশাখালী, আমুরবুনিয়া, ধানসাগর, বগী, চরখালীসহ বনের ৬০কিলোমিটার জায়গায় পর্যায় ক্রমে নাইলনের ফেন্সিং দেওয়া হবে। এর ফলে বনসহ বণ্যপ্রাণী সুরক্ষা পাবে বলে ডিএফও জানান।