
এখন আমি আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী, উপজেলার শ্রেষ্ঠ জয়িতা পুরস্কার পেয়েছি
জন্মভূমি রিপোর্ট : হতদরিদ্র খ্রিস্টান পরিবার জন্ম, প্রেমের সম্পর্ক জড়িয়ে একজন মুসলিমকে বিয়ে করেছিলেন, স্বামীর মৃত্যুর পর একমাত্র সন্তানকে নিয়ে জীবন সংগ্রামে নেমেছিলেন, ইটের ভাটায় কাজ করে সংসার চালাতেন। এখন তিনি আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী নারী। তিনি হচ্ছেন দাকোপের বাজুয়া ইউনিয়নের বাজুয়া গ্রামের রূপালী মির্জা। ২০১৯ সালে তিনি দাকোপ উপজেলার আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী নারী হিসেবে শ্রেষ্ঠ জয়িতা পুরস্কার পেয়েছেন। ২০২১ সালের ইউপি নির্বাচনে বাজুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে অংশগ্রহন করেন। নির্বাচনে পরাজিত হলেও একজন সত্যিকারের নারী অপরাজিতা হয়ে তিনি ইউনিয়নের প্রতিটি সেবামূলক কাজে অংশগ্রহণ করেন। আপন দক্ষতায় তিনি নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন। এই প্রতিবেদনে থাকছে তার সংগ্রামী গল্প।
বাজুয়া ইউনিয়নের বাজুয়া সেনের মাঠ গ্রামের মনমথ রায়ের মেয়ে রূপালী রায়। ছয় ভাই বোনের সংসারে কোন মতে এসএসসি পাস করেছিলেন, কিন্তু প্রেমের সম্পর্কে বাদসাধে পড়ালেখা। পাশের গ্রামের নজরুলের প্রেমেপড়ে অল্প বয়সে বিয়ে করেন। শশুর বাড়িতে সংসার করার সৌভাগ্য তার হয়নি। তিনি ছিলেন নজরুলের দ্বিতীয় বউ। কোন মতে এক রুমের ভাড়া বাসায় থাকতেন। বিয়ের এক বছর পর একমাত্র সন্তান গর্ভে আসে। তখন শুরু হয় আসল পরীক্ষা। কোন মতে আধপেটা খেয়ে কাজে যেতেন। স্বামীর মৃত্যুর পর সব হারিয়ে কিছু দিন বোনের বাড়িতে ছিলেন। তারপর সংসার সংগ্রামে নেমে ইটের ভাটায় কাজ শুরু করেন। এই ইটের ভাটায় কাজ করে নিজের ভাগ্য বদলে ফেলেন রূপালী মির্জা। তিনি খুলনা থেকে বাঁকিতে ইট কিনে তা বিক্রি করে আর্থিক ভাবে সাফল্য পেতে শুরু করেন। এর পর তিনি হেন হেন গ্রুপ চায়না কোম্পানির সাথে কন্ট্রাকে কাজ করছেন। বিশ^াস আর সততার সাথে কাজ করে তিনি নিজেকে আর্থিক ভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন। রূপালী মির্জা নিজেই লড়াই করে জীবনযুদ্ধে নেমেছিলেন বলে এলাকার অসহায় নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে এবং বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে তিনি কাজ করা শুরু করেন। ঐ সময় রূপান্তর পরিচালিত অপরাজিতা প্রকল্পের কার্যক্রমের সাথে যুক্ত হয়ে তিনি বিভিন্ন প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেন। তখন রূপান্তর সুইজারল্যান্ডের আর্থিক সহযোগিতা ও হেলভেটাস ইন্টার কোঅপারেশন এর নেতৃত্বে মাঠপর্যায়ে অপরাজিতাঃ নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের কার্যক্রম শুরু করে। এই প্রকল্পের আওতায় প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে অপরাজিতা নেটওয়ার্ক গঠন করা হয়। এই প্রকল্পের আওতায় ২০১৯ সালে তিনি বাজুয়া ইউনিয়নের অপরাজিতা নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত হন। এর মাধ্যমে তিনি নেতৃত্বর বিকাশ, বিভিন্ন সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে মতবিনিময় সভা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে সভা ও সম্ভাব্য নারী প্রার্থীদের নির্বাচন সংক্রান্ত প্রশিক্ষণে অংশগ্রহন করেন। এ কাজের ফলে এলাকায় তার পরিচিতি ও গ্রহনযোগ্যতা বৃদ্ধি পায়। ২০২১ সালের ইউপি নির্বাচনে এলাকাবাসী তাকে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হওয়ার জন্য প্রস্তাব করেন। এলাকবাসীর সহযোগিতায় রূপালী মির্জা চেয়ারম্যান পদে বাজুয়া ইউনিয়নে নির্বাচনে অংশগ্রহন করেন। নির্বাচনে তিনি জয়লাভ করতে না পরলেও সমাজ সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন।