এম সাইফুল ইসলাম
করোনার কবলে পড়েছে গোটা বিশে^র অর্থনীতি। যার ছোবল থেকে বাংলাদেশেরও নিষ্কৃতি মেলেনি। বৈশ্বিক করোনা মহামারীর এক মহাসংকটকালে গত ৩ জুন অর্থমন্ত্রী ২০২১-২০২২ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করলেন। এটা করোনাকালে দেশের দ্বিতীয় বাজেট। এই বাজেটে আয় ধরা হয়েছে, ৩ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকার, আর বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা।
কৃষি ও মৎস্য খাতে বরাদ্দ ও ভর্তুকি আরও বাড়ানো প্রয়োজন: মফিদুল টুটুল
খুলনা চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক ও খুলনা চিংড়ি বনিক সমিতির সদস্য মো: মফিদুল ইসলাম টুটুল বলেন, মহামারী দুর্যোগে দেশের অর্থনীতির নাজুক অবস্থা। ব্যবসা-বাণিজ্য মুখ থুবড়ে পড়েছে। এখনো সীমান্ত এলাকাসহ সারা দেশেই করোনার সংক্রমণ বেড়ে চলছে। করোনার ভরা পরিস্থিতির মধ্যেও অর্থমন্ত্রীর বিশাল অঙ্কের বাজেট ঘোষণা করা দুঃসাহসিক কাজই বটে।
এবার বাজেটের আকার গত অর্থবছরের তুলনায় যে পরিমাণ বেড়েছে, সেই আনুপাতিক হারে কৃষি খাতে বরাদ্দ ও ভর্তুকি বাড়ানো হয়নি। বাংলাদেশ এখনো কৃষিপ্রধান দেশ এবং কৃষিই আমাদের অগ্রাধিকার প্রাপ্ত খাত। ফলে কৃষি খাতের উন্নয়নে প্রধান উপকরণগুলো বিশেষ করে সার, বীজ, কীটনাশক ইত্যাদি আমদানিতে শূন্য শুল্কহার অব্যাহত রাখা হবে মর্মে তিনি মন্তব্য করেন। এদেশের সাধারণ কৃষকরা ব্যাংকের লোন সঠিকভাবে পায়না, কৃষকের লোন অনাদায়ী বা পূরণ পূরণ হয় না অন্যান্য সেক্টরে ঋণ নিয়ে লোন পরিশোধ করে না। প্রকৃত কৃষককে ও ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য ব্যবসায়ীদের/চাষীদেরকে প্রণোদনা বা সরকারি সুযোগ-সুবিধা আরো বৃদ্ধি করার দাবি জানাই। কৃষি ও মৎস্য ক্ষেত্রে বরাদ্দ ও ভর্তুকি আরো বাড়ানো প্রয়োজন। প্রকৃত অর্থে কৃষির উন্নয়নে কৃষি মন্ত্রণালয় এবং খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখা উচিত।
বাজেটে গুরুত্ব পায়নি ঘূর্ণিঝড় কবলিত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কৃষি খাত: এ্যাড. বাবুল
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) এর খুলনা মহানগর সভাপতি ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর খুলনার সমন্বয়ক এ্যাড বাবুল হাওলাদার বলেন, কৃষিই আমাদের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি, সেখানে করোনা মহামারীর এই দুর্যোগ মোকাবিলায় কৃষি খাতকেই বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ এ চ্যালেঞ্জে একমাত্র কৃষিকে সমৃদ্ধ করেই আমরা খেয়ে বেঁচে টিকে থাকার চেষ্টা করতে পারব। অবশ্য অর্থমন্ত্রী এই বাজেটে দেশকে খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার কথা গুরুত্বের সঙ্গে বলেছেন। এমনকি এবারের বাজেটে শর্তসাপেক্ষে দেশের উৎপাদিত সব ধরনের ফল, শাক-সবজি, প্রসেসিং শিল্প, দুধ ও দুগ্ধজাতপণ্য উৎপাদন, সম্পূর্ণ দেশীয় কৃষি থেকে শিশুখাদ্য উৎপাদনকারী শিল্প, কৃষিযন্ত্র উৎপাদনকারী শিল্পের জন্য ১০ বছরের করমুক্ত সুবিধার প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় বলেন, কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ এবং খাদ্য নিরাপত্তা খাতের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে নানামুখী কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এমনকি করোনার প্রভাব মোকাবিলায় বিগত বছরগুলোর মতো কৃষি খাতে ভর্তুকি, সার-বীজসহ অন্যান্য কৃষি উপকরণে প্রণোদনা ও সহায়তা কার্ড, কৃষি পুনর্বাসন সহায়তা, স্বল্প সুদে ও সহজ শর্তে বিশেষ ঋণ সুবিধা দেওয়ার মতো কার্যক্রমও অব্যাহত রাখা হবে মর্মে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দের পরিমাণ আরও বেশি হওয়া উচিত ছিল: আবুল হোসেন
খুলনাঞ্চলে কৃষি ও জলবায়ু নিয়ে কাজ করা ছিন্নমূল মানবকল্যাণ সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক মো: আবুল হোসেন বলেন, আমরা মনে করি, বাজেটের আকার হিসেবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দের পরিমাণ আরও বেশি হওয়া উচিত ছিল। তবে সমস্যার জায়গাটি হচ্ছে, করোনার কারণে স্বাস্থ্য খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া। যেহেতু জীবনের মূল্য সবার আগে, সেহেতু স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় বরাদ্দ বাড়বে, এটাই স্বাভাবিক।
বাংলাদেশ এখনো কৃষিপ্রধান দেশ এবং কৃষিই আমাদের অগ্রাধিকার প্রাপ্ত খাত। ফলে কৃষি খাতের উন্নয়নে প্রধান উপকরণগুলো বিশেষ করে সার, বীজ, কীটনাশক ইত্যাদি আমদানিতে শূন্য শুল্কহার অব্যাহত রাখতে হবে।
আমাদের বাংলাদেশ বৃহৎ জনগোষ্ঠীর দেশ। এ দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যাই বেশি। ফলে মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। করোনার বিরূপ প্রভাবে গোটা বিশ্বেই খাদ্য সংকট কমবেশি লেগেই আছে।