রামপাল প্রতিনিধি : যৌন কর্মীরা স্বপ্ন দেখে নতুন জীবনে ফেরার আমার বয়স যখন ১৫ বছর তখন এখানে আসি। সেই থেকে এখানে পড়ে আছি। অনেকবার ভেবেছি এখান থেকে চলে যাবো কিš‘ কোথায় যাবো? যাওয়ার মতো কোনো জায়গা নেই আমার। এখন বয়স হয়েছে, আয়-ইনকাম নেই। আমার জীবন চলবে কীভাবে? হতাশার সুরে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন পশুর নদীর অবস্থিত একমাত্র যৌনপল্লির বাসিন্দা বৈশাখি আক্তার (ছদ্মনাম)।
শুধু তিনি নন, তার মতো অনেক যৌনকর্মী তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত। এদের অনেকেরই বয়স পঞ্চাশের ঊর্ধ্বে। আর্থিক টানাপড়েন, অস্বা¯’্যকর পরিবেশ, নিম্নমানের স্যানিটেশন ব্যবস্থা, চিকিৎসার অভাব, কর্ম না থাকা, সরকারি সহযোগিতার অভাব, পুনর্বাসনসহ নানা সমস্যার মধ্যে জীবন অতিবাহিত করছেন এখানকার যৌনকর্মীরা।
বৈশাখি আক্তার বলেন, এখন প্রায়ই অসু¯’ থাকি কিš‘ চিকিৎসা করানোর টাকা নেই। সরকারের কাছে দাবী সরকারীভাবে এখানে একটি চিকিৎসা কেন্দ্র চালু করা হোক।
সরকারি তেমন কোনো সুযোগ-সুবিধাও মেলে না। যৌনকর্মী রেহেনা (ছদ্মনাম) বলেন এখানকার পরিবেশ খুব খারাপ। বিশেষ করে ভেরিবাধের সিস্টেম যা”েছতাই। বৃষ্টির সময় এখানে হাঁটু পর্যন্ত পানি উঠে যায়। এমনকী ঘরের মধ্যেও পানি উঠে যায় কখনো কখনো। বারবার বলেও কোনো কাজ হয়নি। তিনি আরও বলেন, সন্তানদের বাবার পরিচয় গোপন করে স্কুলে ভর্তি করানো হয়। যখন জেনে যায় যে তার মা একজন যৌনকর্মী তখন স্কুল থেকে বের করে দেয়। এজন্য আমাদের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়াও করতে পারছে না।
সরকারিভাবে যে সাহায্য-সহযোগিতা আসে তা খুবই অপ্রতুল বলে জানালেন যৌনকর্মী ছন্দা। এখানকার স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। অনেকটা হতাশ হয়ে ছন্দা বলেন, আমাদের জীবন টিস্যু পেপারের মতো, ব্যবহারের পর তা ফেলে দেয়। এ জীবন আর ভালো লাগে না। আমাদের জন্য কারও দয়া-ভালোবাসা নেই। অথচ আমরাও তো মানুষ। আমরাও সপ্ন দেখি নতুন জীবনে ফিরে যাবার। নতুন করে বেচে থাকার।
এখানকার যৌনকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা যা আয় করেন তা তাদের প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। যা আয় হয় তা দিয়ে নিজে চলতে ও পরিবারকে পাঠাতে অনেক কষ্ট হয়। বড় কোনো সমস্যা হলে কেউ তাদের পাশে থাকেন না। অসুখ হলে লোন করে, সুদে টাকা নিয়ে চিকিৎসা করতে হয়।
স্থানীয় ইউপি সদস্য বলেন, যৌনপল্লিটি দীর্ঘদিন ধরে এখানে আছে। তবে আমরা সরকার থেকে যতটুকু সহযোগিতা পাই তা দেওয়ার চেষ্টা করি। যৌনকর্মীদের পুনর্বাসনের বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, এজন্য আমরা চেষ্টা করছি। তবে শুধু পুনর্বাসন করলে হবে না তাদের স্থায়ী ইনকামের সুযোগ করে দিতে হবে। যাতে পুনরায় এ ধরনের নেতিবাচক কাজ করা না লাগে।
এর মধ্যেও আশার বাতিঘর হয়ে কাজ করছে উন্নয়ন সংস্থা সিএসএস। এ সংস্থাটি যৌনকর্মী ও পরিবহন শ্রমিকদের স্বাস্থ্যকর জীবনধারা বিশেষ করে এইচ আইভি/এইডস এর বিরুদ্ধে প্রতিরোমূলক ব্যবস্থা সম্পর্কে কাজ করছে সরকারী ও বেসরকারী স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে এসটিআই সম্পর্কিত পরিসেবা এবং স্কিনিং সুবিধা প্রদানের জন্য এ্যাডভোকেসি করা হয়। এইচ আইভি/এইডস সম্পর্কিত নেতিবাচক মানসিকতা দূরীকরণে এবং এর সংগে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে সচেতনামূলক প্রচার প্রচারণার লক্ষ্যে ইনক্রিসড রেজিলিয়েন্স অব পার্সস অ্যাটরিজ অ্যাগেইনষ্ট এইচআইভি ফর এডুকেশন অ্যান্ড এলিনিমেশন অব ষ্টিগমা প্রকল্পের কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে।