শেখ আব্দুল হামিদ : খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার সুরখালী ইউনিয়নে বারআড়িয়া বাজারে মনি গোলাদারের বাড়িতে রাজাকার ঘাঁটি। রাজাকার সদস্যরা লুটপাট ঘর বাড়িতে অগ্নি সংযোগসহ নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। তারা সুন্দরী গৃহবধু এবং মেয়েদের ধরে এনে ক্যাম্পে আটক রেখে পালাক্রমে ধর্ষণ করছে। এলাকার লোকদের জিম্মি করে রেখেছে। তারা গুরুপদ মন্ডল তার কন্যা দশম শ্রেণীর ছাত্রী অঞ্জলী, শিশু সন্তান খোকন ও কন্যা পারুলকে গুলি করে হত্যা করেছে। গুরুপদ মন্ডলের স্ত্রী গুরুদাসীকে জোর পূর্বক ধরে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করেছে।
এমন সংবাদ পেয়ে যুদ্ধকালীন কমান্ডার বিনয় কৃষ্ণ সরকার প্রতিশোধের নেশায় গর্জে ওঠেন। তিনি এ যুদ্ধের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, তার সহযোদ্ধাদের নিয়ে প্রস্তুত হন বারআড়িয়া রাজাকার ঘাঁটি আক্রমনের উদ্দেশ্যে। সেদিন ছিল ২৮ নভেম্বর ১৯৭১ সাল। ঠিক মধ্য রাতে বারআড়িয়া রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণ হয়। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির মধ্যে মুক্তিযোদ্ধারা ক্যাম্পের তিন দিক ঘিরে ফেলে। শুরু হয় মুহুর্মুহু গুলি বিনিময়। রাজাকাররা দ্বিতল ভবনের উপর থেকে রাইফেল দিয়ে অকাতরে গুলি ছুড়তে থাকে। এক পর্যায়ে রাত শেষ হয়ে আসে। সাহসী মুক্তি যোদ্ধা সুন্দরমহল গ্রামের জ্যোতিষ মন্ডল নিজের পজিশন থেকে মাথা উঁচু করতেই একটা গুলি এসে বিদির্ণ করে দেয়। তার মৃত দেহ নিয়ে নিরাপদে রেখে আবার শুরু হয় যুদ্ধ। পরে পাইকগাছা থানার মৌখালী গ্রামের আব্দুল আজিজ ২৯ নভেম্বর ভোরে গুলি বিদ্ধ হন। তার লাশ নিয়ে আমি নিরাপদ জায়গা খুঁজতে থাকি। পাশের ধান ক্ষেতের মধ্যে একটি ছোট খাল ধরে এগুবার চেষ্টা করি। রাজাকাররা আমাকে দেখে ফেলে। আমি আজিজের লাশ রেখে একটি ঝোপের ভিতরে পজিশনে যাই। ওরা আমার কাছে এগিয়ে এলেই গুলি ছুড়ি। কয়েকটা রাজাকার পড়েও যায়। এরই মধ্যে সংবাদ পেয়ে মুক্তিযোদ্ধা মিকির নেতৃত্বে আমাকে উদ্ধার করতে আসে। তখন অন্যান্য রাজাকাররা পালিয়ে যায়। শহীদ জ্যোতিষের দেহ সুন্দরমহল গ্রামে এবং শহীদ আজিজের লাশ পাইকগাছায় দাফন করা হয়। এ যুদ্ধে বেশ কিছু অস্ত্র ও গুলা বারুদ উদ্ধার হয়। যুদ্ধে অংশ নিয়ে ছিলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা মুকুল বিশ্বাস, রাম কৃষ্ণ বিশ্বাস, নুরুল ইসলাম, আনোয়ার হোসেন, অমর, সুবোধ, হরিপদ, চন্দ্র কান্ত, সন্তোষ, হরিচাঁদ, মিকি, ক্ষীতিষ, তপন, দিদার, আলাউদ্দিন, মোবারক, ওমরআলী, শামছুর রহমান ও আব্দুর রাজ্জাক মলঙ্গী। যুদ্ধে শহীদ জ্যোতিষ এবং আজিজের স্মৃতি অক্ষুন্ন রাখতে প্রতিবছর ২৯ নভেম্বর স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়। অনেক দিন পরো হলেও শহীদ জ্যোতিষের ভাইয়েরা মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ভোগ করছেন। তবে শহীদ আজিজের পরিবারে কেউ বেঁচে না থাকায় নীতিমালা অনুযায়ী কেউ আর ভাতা পায় না।
বারআড়িয়া যুদ্ধে আজ শহীদ হন বীর জ্যোতিষ আজিজ
Leave a comment