জন্মভূমি ডেস্ক
হঠাৎ রাজনীতিতে উত্তাপ বেড়ে গেছে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন দাবিতে বিএনপির চলমান তৃণমূল পর্যায়ের ধারাবাহিক কর্মসূচিকে ঘিরে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্নভাবে শুরু হয়েছে সংঘর্ষ। এসব সংঘর্ষকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধীদল বিএনপি পরস্পরকে দায়ী করছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এখনো এক বছরের বেশি সময় বাকি। এরই মধ্যে রাজনীতিতে দেখা যাচ্ছে নির্বাচনী উত্তাপ। দিন দিন বাড়ছে এ উত্তাপ। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন জায়গায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া পুলিশের সঙ্গেও বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। আবার কিছু জায়গায় বিএনপির কর্মসূচিতে সরকার দলীয় লোকজনের হামলার ঘটনাও ঘটেছে। এতে উভয় দলের নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। বরাবরের মত এসব সংঘর্ষের জন্য একে-অপরকে দুষছে।
দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। নির্বাচন প্রতিহত করারও হুমকি দিয়েছে রাজপথের প্রধান বিরোধী দল। আন্দোলনের মধ্যমে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় করার নানা ছকও কষছে দলটি। নেতাকর্মীদের মাঠে রেখে নানা ইস্যুতে কর্মসূচি ঘোষণা করছে। তৃণমূল পর্যায়ে নানা কর্মসূচি পালন করছে। এসব কর্মসূচিতে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটছে।
গত ১৭ আগস্ট খুলনা মহানগরীর ১৭ নং ওয়ার্ড বিএনপির কর্মীসভা চলাকালে যুবলীগ-ছাত্রলীগ ক্যাডারদের সশস্ত্র হামলার ঘটনায় বিএনপির শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা এ সময় ৩০/৩৫ টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। আহত হয় প্রায় অর্ধশত নেতা-কর্মী। যাদের অনেকের পায়ের রগ কর্তনসহ বেশ গুরুতর আহতের খবর পাওয়া গেছে। শতাধিক চেয়ার ভেঙ্গে তছনছ করে দেয়। এ সময় সাধারণ ব্যবসায়ীদের দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয় বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।
মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন অভিযোগ করেন, ১৭ নং ওয়ার্ড বিএনপির পূর্ব নির্ধারিত কর্মীসভায় আওয়ামী সন্ত্রাসী ক্যাডাররা অতর্কিতে হামলা চালিয়ে আমাদের শতাধিক নেতাকর্মীকে আহত করেছে। তাদেরকে বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। হামলাকারীরা সভাস্থল ও সামনে রাখা মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে ড্রেনে ফেলে দেয়। হামলাকারীরা ছিল হেলমেট পরিহিত ও সশস্ত্র।
গত ২৪ আগস্ট খুলনা মহানগরীর দৌলতপুরে বিএল কলেজ রোডে থানা বিএনপির কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুরের অভিযোগ করেছে বিএনপি। এ হামলার ঘটনায় বিএল কলেজ শাখা ছাত্রলীগকে দায়ি করেছেন বিএনপি নেতৃবৃন্দ। খুলনা মহানগর বিএনপির পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে দলের নেতারা এ অভিযোগ করেছেন।
অপর দিকে খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার পথের বাজারে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় উভয় দলের ১৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) বিকেলে পথের বাজার এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
নির্ধারিত স্থানে সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে পথেরবাজার অতিক্রম করার সময় বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় পথেরবাজার দলীয় অফিস এলাকায় উভয়ের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগের ৬ জন এবং বিএনপির ৯ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছে বলে উভয় দলের নেতারা অভিযোগ করেছে। ওই ঘটনায় বিএনপি রূপসা উপজেলার সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মোল্লা খাইরুল ইসলামসহ ৯জন রক্তাক্ত জখম হন। এ ঘটনার প্রতিবাদে খুলনা জেলা বিএনপি ওই দিন রাত ৮ টায় সংবাদ সম্মেলন করেছে। তারা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের বাঁধাদানের অভিযোগ তোলেন।
দিঘলিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খান নজরুল ইসলাম বলেন, বিকেলে বিএনপির কর্মসূচি ছিল। আমাদের নেতাকর্মী পথেরবাজার দলীয় কার্যালয়ের সামনে বসে ছিল। এমন সময় বিএনপির মিছিল থেকে আমাদের নেতাকর্মীদের দিকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। এসময় দিঘলিয়া উপজেলা যুবলীগের সভাপতি শেখ মনিরুল ইসলামসহ ৬ জন মারাত্মক আহত হয়েছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের হামলার পর তাদের প্রতিহত করা হয়।
খুলনা জেলা বিএনপির আহবায়ক আমীর এজাজ খান বলেন, বিএনপির পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আজ বিকেলে দিঘলিয়ায় বিক্ষোভ ছিল। কর্মসূচির আগে ও পরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করে। তদের নেতাকর্মীরা বিএনপি নেতাকর্মীদে উপর হামলা চালায়। এ ঘটনায় জেলা বিএনপির নেতা খায়রুল ইসলামসহ ৯ জন আহত হয়েছে। তাদের বিভিন্ন ক্লিনিক ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ওই ঘটনায় পুলিশ যুবদল নেতা কুতরতই ইলাহী স্পিকারসহ ২জনকে গ্রেফতার করে।
এদিকে শনিবার সন্ধ্যায় বিএনপির খালিশপুর থানা এলাকায় কর্মসূচি চলাকালে সংঘর্ষ বেধে যায়। বিএনপি নেতৃবৃন্দ দাবি করেছে, শাসকদলের এ হামলায় অর্ধশত আহত হয়েছে। খালিশপুর এলাকায় বিএনপির বিভিন্ন অফিস ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি হামলা করা হয়েছে।
অপর দিকে সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সাবে সদস্য প্রয়াত তরিকুল ইসলামসহ চার নেতার বাড়িতে গত শুক্রবার হামলার ঘটনা ঘটেছে।
বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) ও সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামের ছেলে অনিন্দ্য ইসলাম অমিত জানান, রাত দেড়টার দিকে আকস্মিক একদল লোক তার বাসার সামনে জড়ো হয়। এরপর জয় বাংলা ¯েøাগান দিয়ে বাড়ির ভেতরে ইট পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। এতে বাড়ি কাঁচের জানালা গুলো ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। এরপর যশোর জেলা বিএনপি’র সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, যুগ্ম-আহবায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকন এবং আহŸায়ক কমিটি’র সদস্য মিজানুর রহমান খানের বাসভবনে একইভাবে ¯েøাগান দিয়ে হামলা চালানো হয়েছে। ৩০ থেকে ৩৫ জনের একটি দল একটি মাইক্রোবাস, দুটি প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেল নিয়ে হামলায় অংশ নেয়।
বিএনপি’র খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত জানান, হামলার বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে যশোর পুলিশের মুখপাত্র ডিবির ওসি রুপম কুমার সরকার জানান, হামলার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।
গত বুধবার (২৪ আগস্ট) ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। বিকালে উপজেলার ডাকবাংলা বাজারে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সমাবেশের ডাক দেয় বিএনপি। এরই অংশ হিসেবে ত্রিমোহনী বাজার হয়ে মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীরা সমাবেশ স্থলে আসার সময় তাদের বাধা দেয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ শুরু হয়।
শুক্রবার নোয়াখালীর চাটখিলে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে পথচারীসহ অন্তত ১৭ জন আহত হয়।
এছাড়াও গত ২১ আগস্ট নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলায়, শনিবার যশোরে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে সংঘর্ষ, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
অন্যদিকে শুক্রবার চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির সংঘর্ষ হয়। উপজেলার কালিপুর ইউনিয়নে জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর বাসভবনের সামনে থেকে মিছিল নিয়ে প্রধান সড়কে উঠতে গেলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় বিএনপির নেতা-কর্মীদের। সংঘর্ষে পুলিশসহ বিএনপির অন্তত ৪২ জন আহত হন।
ঘটনার পর বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার আরমান চৌধুরী জানান, সংঘর্ষের পর আহত অবস্থায় ৯ পুলিশ সদস্য ও সাধারণ পোশাকের ৮/১০ জনকে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় তিনটি মামলা করেছে পুলিশ। সরকারি কাজে বাধা, পুলিশের ওপর হামলা ও বিস্ফোরক আইনে করা মামলা তিনটিতে ৬৬ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত পরিচয় ৪০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
শুক্রবার মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে বিএনপির মিছিলে হামলা করে ছাত্রলীগ-যুবলীগ। হামলায় উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব হাফিজুল ইসলাম খান, মহিলা দলের নেত্রী সেলিনা রিনা, যুবদলের সভাপতি জয়নাল আবেদীন জেমস, ৩০ জনের বেশি বিএনপি নেতাকর্মী আহত হয়। পুলিশের উপস্থিতিতে তাদের ওপর হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।
বিএনপি বলছে, বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার নরসিংদী, খুলনা, ঝিনাইদহ গাজীপুরের কালিগঞ্জ, নড়াইল, বরিশাল দক্ষিণ ও উত্তর জেলা, পটুয়াখালী ও মুন্সিগঞ্জে বিএনপির কমর্সুচিতে আওয়ামী লীগ হামলা করেছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বর্তমান সরকার দেশে একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করার হীন চক্রান্তের অংশ হিসেবে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে। সরকারের নীল নকশা বাস্তবায়ন করতে সরকারদলীয় সন্ত্রাসী এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু সদস্য বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, ভাঙচুর, বানোয়াট মামলা দিয়ে গ্রেফতার এবং সভা-সমাবেশ পÐ করার কাজে সিপাহসালারের ভ‚মিকা পালন করে যাচ্ছে।
বাড়ছে আওয়ামী লীগ-বিএনপি সংঘর্ষ রাজনীতিতে উত্তাপ
Leave a comment