জন্মভূমি ডেস্ক : রাজপথে আন্দোলনের বিষয়ে হার্ডলাইনে বিএনপি। কিন্তু এখনো পর্যন্ত আন্দোলনে কাঙ্খিত সফলতা না আসায় দলটির তৃণমূল পর্যায়ে হতাশা নেমে এসেছে। সংসদ নির্বাচন ইস্যুতে সমঝোতা না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচিতে বিরতি না দেওয়ার কৌশল নিয়েছে বিএনপি।
সূত্র মতে, বিএনপি মহাসচিবসহ দলের অনেক কেন্দ্রীয় নেতা কারাগারে থাকায় লন্ডন থেকে হাইকমান্ড এক দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যেতে বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের বার্তা দিয়েছে। তবে লাগাতার আন্দোলনের কারণে একদিকে বিভিন্ন সহিংস ঘটনায় জানমালের ক্ষতি ও অন্যদিকে পরিবহন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় এবং দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কারণে জনদুর্ভোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ পরিস্থিতিতে জনসমর্থন হারানোর আশঙ্কায় বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ে হতাশা দেখা দিয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ প- হয়ে যাওয়ায় দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নতুন মোড় নিয়েছে। একদিকে আন্দোলনের হার্ডলাইনে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর রোষানলে পড়েছে দলটি। অপরদিকে সর্বস্তরের বিএনপি নেতাকর্মীদের মনোবল অনেকাংশেই ভেঙে গেছে। পক্ষান্তরে বিএনপি হার্ডলাইনের আন্দোলনে গিয়ে সফল হতে না পারায় আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মী এখন আগের চেয়ে বেশি সক্রিয় হয়েছে।
রাজধানীতে ২৮ অক্টোবর সংঘটিত বিভিন্ন সহিংস ঘটনার দায় বিএনপি অস্বীকার করলেও সরকারের পক্ষ থেকে ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছে পুলিশ হত্যাসহ ওইসব ঘটনার ভিডিও ফুটেজ পাঠানো হয়েছে। মূলত এর পর থেকেই আগে বিএনপির প্রতি সহানুভূতিশীল ছিল এমন আন্তর্জাতিক মহলগুলোর দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে যায় বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে আগে বিএনপি শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে থেকে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীকে চাঙ্গা করার পাশাপাশি দেশী-বিদেশী মহলের সহানুভূতি অর্জন করতে পারলেও এখন সে পরিস্থিতি মোড় নিয়েছে। বিদেশী কূটনীতিক ও সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিরা এখন আর বিএনপির কর্মসূচিকে ইতিবাচকভাবে নিচ্ছে না। তবে তারা বিএনপিকে নির্বাচনে নিতে পর্দার অন্তরালে বিভিন্ন মহলের কাছে দৌড়ঝাঁপ করছে।
৩১ অক্টোবর সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এই বৈঠকের পর বিএনপিসহ সকল রাজনৈতিক দলের প্রতি শর্তহীন সংলাপে বসার আহ্বান জানান। কিন্তু পিটার হাসের এ আহ্বানে অস্বস্তিতে পড়ে বিএনপি।
নির্বাচন কমিশনের আমন্ত্রণে ৪ অক্টোবর নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ২৬টি দল ইসির সঙ্গে সংলাপে অংশ নিলেও বিএনপিসহ ১৮ দল যায়নি। তবে সিইসি তারপরও বিএনপি চাইলে সংলাপের আয়োজন করা হবে বলে জানান। যদিও বিএনপির পক্ষ থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়, এই নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে তারা সংলাপে যাবে না।
উল্লেখ্য, প্রায় এক বছর দেশব্যাপী শান্তিপূর্ণ আন্দোলন কর্মসূচি পালন করে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয় বিএনপি।
সূত্র মতে, ২৮ অক্টোবর দলের কিছু নেতাকর্মীর আচরণ ছিল বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের বিপরীতমুখী। তাই ২৮ অক্টোবর থেকেই বিএনপির আন্দোলন নতুন মোড় নেয়। এ কারণে মহাসমাবেশ পন্ড হওয়ার পরদিন ২৯ অক্টোবর দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করে। এর পর প্রথম ধাপে ৩১ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে টানা ৭২ ঘণ্টা অবরোধ কর্মসূচি পালন শেষে দ্বিতীয় ধাপে রবিবার সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত টানা ৪৮ ঘণ্টা অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে।
বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলোর একদিনের হরতাল তারপর অবরোধ কর্মসূচি পালনকালে সারাদেশে অর্ধশতাধিক গাড়িতে অগ্নিসংযোগসহ অনেক সহিংস ঘটনার কারণে দেশ-বিদেশে এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়।
বিএনপির মুখপাত্র ও দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জানান, সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন ও খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ এক দফা দাবি আদায়ে আন্দোলন চলছে। এ দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
দেড় যুগ বিএনপি ক্ষমতার বাইরে থাকায় আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক শক্তি জোরদার করে ঘুরে দাঁড়ানোর কৌশল নেয় বিএনপি। দলীয় হাইকমান্ডের আহ্বানে সাড়া দিয়ে দীর্ঘদিন ঘরবন্দি হয়ে থাকা বিএনপির অধিকাংশ নেতাকর্মী গত বছর জুলাই মাস থেকে দলীয় কর্মকান্ডে সক্রিয় হতে থাকে। আন্দোলন করতে গিয়ে বিএনপির দাবি অনুসারে ইতোমধ্যেই ২২ জন মারা যাওয়ার পাশাপাশি মামলা-হামলার শিকার হলেও ২৮ অক্টোবরের আগ পর্যন্ত তারা মাঠে সক্রিয় ছিল। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে দলের অধিকাংশ নেতাকর্মীই রাজপথের আন্দোলন বাদ দিয়ে গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে চলে গেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।
এ পরিস্থিতিতে নির্বাচনের আগে বিএনপি কৌশল পরিবর্তন করে কি না এ নিয়ে রাজনৈতিক অভিজ্ঞ মহলে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।